শিরোনামঃ

প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ফেইসবুকে এমপি গোলাম মাওলা রনির খোলা চিঠি

জনাব সজীব ওয়াজেদ এর নিকট খোলা চিঠি

কি নামে আপনায় ডাকবো। দলের সবাই মামা ডাকে। কেউ কেউ ভাই। আমি কিন্তু ভাই ডাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবো- যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আপা ডেকে আসছি সেই ১৯৮২ সাল থেকে।

স‍াম্প্রতিককালে আপনি দলীয় রাজনীতিতে যথাসম্ভব সক্রিয় হবার চেষ্টা করছেন আর এটা ছিল আমার দীর্ঘদিনে স্বপ্ন। স্বপ্নটি যখন বাস্তবে এলো তখন আমার জন্য তা বড্ড দেরি হয়ে গেছে এবং জাতির জন্য তো বটেই। ২০০৯ সালের প্রথম দিকে আমরা তরুণ এমপিরা একাধিক বার বিভিন্ন হোটেল বৈঠকে বসেছিলাম আপনাকে কি ভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় করা যায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য। আমি তখন অতটা আলোচিত না হলেও উদ্যোগটা কিন্তু আমার পক্ষ থেকেই এসেছিল। আমরা সকলে মিলে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিম্বা আপনার সঙ্গে আলোচনার জন্য। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য শেষমেষ সেই উদ্যোগ কোনো জানি আর এগুতে পারে নি। Golam maola roni

বয়স যাদের পঞ্চাশের নীচে এমন এমপিদের সংখ্যা বর্তমান সংসদে প্রায় ৪০ জনের মতো। এরা সবাই প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলো এবং তারা যার যার এলাকায় ছিলো দারুণভাবে জনপ্রিয়। আমরা সেই সময় মনে প্রাণে চেয়েছিলাম আপনি এসে আমাদের নৌকার হাল ধরুণ। আমরা সকলে মিলে সারা বাংলাদেশ চষে বেড়াবো এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নতুন করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবো।

সময়ের প্রেক্ষাপটে তরুণ এমপিদের অনেকেই তাদের নিজ নিজ এলাকায় যেমনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে তেমনি তাদেরকে নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার শেষ নেই। আমি নিজেও সেই দায়গুলো থেকে কতটা মুক্ত তা বলতে পারবো না। তবে এমনটিতো হবার কথা ছিল না। কেবলমাত্র সঠিক “গাইড লাইন” দলীয় ভাবে তদারকী এবং নীতি-নির্ধারনী পর্যায় থেকে পরিচর্যার অভাবে আমাদের প্রায় সকল তরুণ এমপিরা আগামীতে কেবল অতীত ইতিহাস হয়ে রইবে। নতুন ইতিহাস গড়ার মতো কাউকে আমি দেখিনি। হতে পারে আমি হয়ত অন্ধ হয়ে গেছি।

সরকারের শেষ পর্যায় আপনার আগমন ও কর্মতৎপরতা দলকে কতটা সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে অনেকে বিরুপ মন্তব্য করলেও আমি আশাব‍াদি হতে চাই। কেবল আপনার উদ্দেশ্যেই আমি কিছু প্রস্তাবনা রাখলাম- সময় পেলে একটু চোখ বুলিয়ে নেবেন।

১. আপনি সব সময়ই দেখবেন কিছু লোক আপনার প্রতিটি কাজে সমর্থন দিচ্ছে। কেউ কেউ আপনার সামনে দাঁত বের করে ফক্ ফক্ করে হাসছে আবার কেউ মিছকি হাসি দিয়ে মাথা দুলাচ্ছে। উদ্দেশ্য আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং আপনাকে বুঝানো যে আপনার সব কথাই ঠিক আছে। এই লোক গুলো সবাই ব্যক্তিত্বহীন এবং বেহায়া প্রকৃতির। এরা যদি সব সময় আপনার সঙ্গে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি একের পর এক ভুল করতে থাকবেন এবং এক সময় মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়বেন।

২. সাংগঠনিক ভ্রমণ, গণসংযোগ কিংবা নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার পূর্বে আপনি অবশ্যই সেই সব এলাকায় যাবেন সেখানে আপনার প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা শতভাগ। এরুপ কয়েকটি এলাকায় মত বিনিময় করার পর আপনি এক নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হবেন এবং বুঝতে পারবেন এলাকা ভেদে ভোটারদের রুচি, চাহিদা এবং তাদের মন জয়ের মূলমন্ত্র।
পরবর্তীতে, আপনি সেইসব এলাকায় যান সেখানে জয়ের সম্ভাবনা শতভাগ নয় কিন্তু ৫০ ভাগের বেশি। কিন্তু যেখানে প্রার্থী ইমেজ সংঙ্কট রয়েছে এবং পরাজয়ের সম্ভাবনা খুব বেশি সেই সব এলাকায় এই মুহুর্তে আপনার যাওয়া ঠিক হবে না।

৩. আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি দীর্ঘদিন বিদেশ ছিলেন। কাজেই বাংলার কথা বলা এবং বাঙ্গালীর বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ কথার মর্মাথ বুঝার ক্ষমতা অর্জন করতে আপনার আরো কিছুদিন সময় লাগবে। কাজেই আপনার বক্তব্য প্রথমত লিখিত এবং দ্বিতীয়ত সেই লিখিত বক্তব্য একাধিক বার নিজে নিজে প্র্যাকটিস করা জরুরী। অন্যথায় আপনি অনেকের হাসির পাত্র হবেন। যেমনটি হয়েছিলেন জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওর্য়াদীর মতো মহান ব্যক্তিগণও।

৪. শারিরীক অঙ্গভঙ্গি বা বডি ল্যঙ্গুয়েজও বিরাট এক নিয়ামক। এক্ষেত্রে আপনি বঙ্গবন্ধু, বেনজির ভূট্রো, এডলফ হিটলার, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং বারাক ওবামার বিভিন্ন জনসভার ভিডিও ফুটেজগুলো প্রতিদিন একবার করে দেখতে থাকুন।

৫. যখন সুধী সমাজ কিংবা সাংবাদিকগণের মখোমুখি হবেন তখন আপনার মন- মানসিকতা এবং দেহ এই তিনের মধ্যে আপনাকে সমন্বয় সাধন করতে হবে প্রতি মুহূর্তে। কোন রকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া আপনি এই কাজটি সফলভাবে করতে পারবেন না- এমনকি মহামানব হলেও। মনিকা লিউনিস্কী কেলংকারী ঘটনায় স্বাক্ষ্যদানকালে বিল ক্লিনটনের অভিব্যক্তি, কিংবা ফকল্যান্ড যুদ্ধের প্রাক্কালে মার্গারেট থ্যাচারের ভাষণের অভিব্যক্তি কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া স্টার প্লাসে সিমি গাড়োয়ালকে দেয়া বেনজির ভূট্টোর সেই অভিস্মরণীয় স্বাক্ষাৎকারটিও দেখতে পারেন।

৬. মানুষের আবেগের যায়গা গুলোতে কথা, বাচনভঙ্গি এবং মোলাকাতের মাধ্যমে স্পর্স করে তা জয় করার জন্য আপনার সবচেয়ে শ্রেষ্ট উদাহরণ হচ্ছে- আপনার মহান নানা। বেশী বেশী তারঁ ভিডিও ফুটেজ গুলো দেখুন এবং তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নতুন করে খোঁজ খবর নিয়ে তা অনুসরণ করুন।

৭. আপনার দরজা, মোবাইল ফোন এবং আপনার হৃদয় সর্বদা সকলের জন্য খোলা রাখুন। নিজের ন্যয় বিচার বোধ, ভদ্রতা এবং বিনয়ের সর্বশ্রেষ্ট সম্বলটি কেবল আপনজন নয়- আপনার প্রতিপক্ষ এমনকি শত্রুর জন্যও সমান ভাবে অবারিত রাখুন। দেশবাসীকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করুন যে- সজীব ওয়াজেদ জয় মিথ্যা বলে না, প্রতারণা করে না, কথা দিয়ে কথা রাখে, সময়ের নড়চড় করে না এবং হৃদয়ে শত্রুতা পোষণ করে না।

আশা করা যায় আপনি সফল হবেন আর আমরা আপনার সেই সফলতার স্বর্ণস্বাদে আহলাদিত হয়ে এগিয়ে যাবো এই প্রত্যাশায়-

গোলাম মাওলা রনি

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 453 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen