সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। অনিশ্চিত পুনর্বাসনের মধ্যে ত্রাণ নিয়েই আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে হচ্ছে রাঙামাটিতে ১৩ জুনের পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণে এসব সরকারি ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদারকে। এ সময় ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে বলে দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে।
জেলা প্রশাসনক মো. মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার ত্রাণ বিতরণ করলেও কোনো বক্তব্য দেননি। এ সময় পুলিশ সুপার সাঈদ মো. তারিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু শাহেদ চৌধুরী, রাঙামাটি পৌরসভা মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. জসিম উদ্দিন বাবুল উপস্থিত ছিলেন। পরে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ৬ হাজার টাকা, ২ বান্ডেল ঢেউ টিন ও ৩০ কেজি চাল এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ১ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এ দিন রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১৪০ পরিবার এবং আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করা ২৬৩ পরিবারকে এসব ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালানা দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সরকারি বরাদ্দ শেষ। এ অবস্থায় কোনোতেই আশ্রয় কেন্দ্র চালানো সম্ভব নয়। তাই জমা রাখা ত্রাণ থেকে এসব সহায়তা দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে বলা হচ্ছে। আশা করি এসব ত্রাণ নিয়ে ঘরমুখী হবেন। তবে নিজেরার উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বা বিধ্বস্ত ভিটায় গিয়ে ঘরবাড়ি বানানোর চেষ্টা করবেন না। যেখানে ঘর বানাবেন প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তা করবেন। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ঘর করলে আমরা পরে তা ভাঙতে বাধ্য হব।
তিনি বলেন, পুনর্বাসনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলে এবং জায়গা খুঁজে পেলে তাৎক্ষণিক পুনর্বাসনের জন্য বাড়িঘর করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) হতে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো দ্রুত বিতরণ করা সম্ভব হবে। এর আগে এনজিও সংস্থা গ্রিণহিল হতেও আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ পুনর্বাসন করা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি জেলা প্রশাসক।
পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া এক ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক জানান, ১৩ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় শহরসহ জেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১২৩১ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯ হাজার ৫৩৭। জেলায় এসব ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ৭৭৬ টন চাল, নগদ ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৬ হাজার, ৫০০ বান্ডেল ঢেউ টিন এবং গৃহ নির্মাণ ব্যয় মঞ্জুরি বাবদ ১৫ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, সামান্য এ ত্রাণ নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন তা কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা। তারা বাড়িভিটা বিধ্বস্ত হয়ে সর্বহারা। তাদের মধ্যে অনেকে বলেন, সরকার পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয়ায় এত দিন তার অপেক্ষায় আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলাম। কিন্তু আজও পুনর্বাসনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছুই বলা হচ্ছে না। প্রশাসন থেকে এখনও সেই একইভাবে উপযুক্ত জায়গা খোঁজা এবং সরকার বরাদ্দ দিলে পরবর্তীতে পুনর্বাসন করার কথা বলা হচ্ছে। এখন সামান্য এই ত্রাণ দিয়ে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে বলে দেয়া হচ্ছে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ ও বিধ্বস্ত ভিটায়ও বাড়িঘর করতে দেয়া হচ্ছে না। জানি না, এ অবস্থায় কোথায় গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু করে নেব।