সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৭ সনের ২রা ডিসেম্বর পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে শান্তি চুক্তি করা হয়েছিল বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বয় এবং স্থানীয় মানুষ এর সুফল পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার পার্বত্য এলাকার জনগণের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।পার্বত্য জেলাগুলোতে বসবাসকারীরাও এ দেশের নাগরিক। এ জন্য দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো তারাও ভূমির অধিকার ভোগ করবে। ভূমির মালিকানাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ল্যান্ড কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠিত হবে।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে মন্ত্রণালয়সমূহ পরিদর্শনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ এ মন্ত্রণালয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে চাই, যা এ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দু’দশক থেকে এখানকার মানুষ কষ্ট করছে।’
ভূমি সমস্যা সমাধানে সবাই সহায়তা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মন্ত্রণালয়টির প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ৩ পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, অনেক লোক এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে আসে এবং তাদের অভিভাবকত্ব দেখায়। তাদের কেউ কেউ পাহাড়ি লোকদের শুভাকাঙ্খী ও বন্ধুর ন্যায় আচরণ করে। তাদের নানা উপদেশ দেয়।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি বলতে চাই যে এই পাহাড়িরা আমাদের নাগরিক, কেউ না চাইলেও আমরা তাদের ভাল-মন্দের দিকে খুব গভীরভাবে খেয়াল করবো।’ তিনি আরো বলেন, ‘পাহাড়িদের অত্যন্ত কঠিন সময় যখন ওই বন্ধুদের এখানে আসতে দেয়া হয়নি এবং ওই সময় তারা এর বিরুদ্ধে কোন কথাও বলেনি তখন আমরা আমাদের স্বেচ্ছায় ওই শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি।’
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ-১৯৭৩ সংশোধন করেছে। এই সংশোধনের ফলে দুই কোটি টাকার পর্যন্ত প্রকল্প গ্রহণের অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকদের আশা পূর্ণ করতে ‘সিএইচটি কমপ্লেক্স’ নির্মাণের জন্য সরকার বেইলী রোডে ১ দশমিক ৯৬ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি আর বিলম্ব না করে এই কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির মোট ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ইতোমধ্যে সরকার বাস্তবায়ন করেছে। ১৫টি ধারার আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাদ বাকি ৯টি ধারা বাস্তবায়নও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কৃষি, শিক্ষা, ধর্ম, যোগাযোগ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক হাজার ২৪৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষাগত সুবিধা প্রদানে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাঁর পূর্ব মেয়াদে সার্কেল প্রধান, হেডম্যান ও কারবারিদের ভাতা বৃদ্ধি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়িতে যুব উন্নয়ন অফিস ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের অশান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভারতে প্রায় ৬৪ হাজার শরণার্থী বসবাস করতো। শরণার্থী হিসেবে অন্য একটি দেশে বসবাসের এই সংখ্যাটি আমাদের জন্য সঠিক ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাঙ্গামাটি নার্সিং ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়িতে যুব উন্নয়ন অফিস ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের অশান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভারতে প্রায় ৬৪ হাজার শরণার্থী বসবাস করতো। শরণার্থী হিসেবে অন্য একটি দেশে বসবাসের এই সংখ্যাটি আশাদের জন্য সঠিক ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পরও অস্ত্র সমর্পন করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এক বিরল দৃষ্টান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পন করেছে। একই সময়ে সরকার উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনেও পদক্ষেপ নিয়েছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির পটভূমি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন খুব সহজ ছিল না। কারণ বিএনপি ও তার মিত্ররা এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। এমনকি চুক্তি স্বাক্ষর ও অস্ত্র সমর্পনের দিন তারা হরতালও ডেকেছিলো। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ফেনী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে। তাদের এই অপপ্রচারের স্বপক্ষে পার্বত্য অঞ্চলে হাজার হাজার ভারতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। এসব অপপ্রচার ও বাধা পেরিয়ে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাঁর সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় ও একটি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ পার্বত্য সমস্যা ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর আমলে ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য অন্যান্য স্থান থেকে মানুষ স্থানান্তর করে। এতে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে, যা ছিল সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে এ এলাকার মানুষের স্বনির্ভরতা অর্জন এবং তাদেরকে শিক্ষায় আলোকিত করে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য জেলাগুলোর কোথায় কোথায় প্রিপারেটরি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবাসিক ও অনাবাসিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং এর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
Pingback: Belal Hossan
January 10, 2015 at 6:13 pm
I am happy the honorable PM has taken the steps. I hope I will get back all my land confiscated by the settlers.
Pingback: Monogeet Jumma
Pingback: রমিত চাকমা
Pingback: Jhuman Chakma