শিরোনামঃ

পার্বত্য অঞ্চলের নেতৃত্বের অংশীদারিত্ব এবং আওয়ামীলীগের ২০-তম জাতীয় সম্মেলন :প্রদীপ চৌধুরী

গত ২৪ অক্টোবর শেষ হওয়া আওয়ামীলীগের ২০-তম জাতীয় সম্মেলনে পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দারা একটি দু:সংবাদ পেয়েছেন। সেটি হলো, নতুন নেতৃত্ব তো দূরে থাক; যিনি দীর্ঘ সময় ধরে দলের দু:সময়ে ভালো ভূমিকা রাখার বদৌলতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, তিনি পদ হারিয়েছেন।
সুখবরের বদলে এমন হতাশাজনক খবরের জন্য অন্তত: পাহাড়ের সংবাদকর্মীরা মুখিয়ে ছিলেন না। সে যাক ক্ষমতা বা পদ-পদবী কারোর জন্যই চিরস্থায়ী 4-lederবন্দোবস্ত নয়।
কেন এমন হলো? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা, রাজনীতি সচেতন অথবা আওয়ামীলীগ মনস্ক সব মানুষের জন্য অনুসন্ধিৎসার বিষয় বটে।
বিষয়টি আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে খুবই স্পষ্ট এই কারণেই যে, টানা প্রায় আট বছরের ক্ষমতাসীন আমলে পাহাড়ের তিনটি সংসদীয় আসনে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ার বদলে শুধু কমেই-নি। বরং জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক দেউলিয়াত্বের চরম এক বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে।
আমার অত্যন্ত পছন্দের সংবাদকর্মী এস. বাসু দাশ। বান্দরবান জেলার সক্রিয় এই সংবাদকর্মী ফেইসবুকে অতি সম্প্রতি একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এই নেতৃত্ব বঞ্চনার অন্যতম কারণ, নেতাদের প্রচার বিমুখতা অথবা মিডিয়া বিরুপ মানসিকতা। তিনি একই সাথে এই বঞ্চনাকে পাহাড়ি এলাকার প্রতি বৈষম্যমূলক বলেও ইঙ্গিত করেছেন।
আমার আরেক সহকর্মী এবং পাহাড়ের সাংবাদিকতায় আমার সিনিয়র ও পেশার জন্য কষ্টক্লান্ত ‘সাদেক হোসেন চৌধুরী’ তিনি বিষয়টিকে একেবারে নিস্পৃহভাবে গ্রহণ করে ফেইসবুকে উদ্ধৃত করেছেন, ‘বীরের জন্য কোন পদ-পদবীর দরকার হয় না। বীর সব সময় বীর। তিনি (বীর বাহাদুর) কোন পদ-পদবী ছাড়াই পাহাড়ের প্রধানতম নেতা হয়ে থাকবেন এবং আছেন।’
আওয়ামীলীগ, এমন একটি রাজনৈতিক দল; যার অবস্থান একটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে একটি দেশের অসাম্প্রদায়িক মানসকাঠামো বিনির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। অধিকন্তু এই দলটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম পুরনো এবং ভিন্নতরো রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিস্থাপক।
আমরা সকলে স্বীকার করি আর নাই করি, মহা মনীষি আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘আওয়ামীলীগ জিতলে আমরা জিতি না, আর আওয়ামীলীগ হেরে গেলে আমরা হেরে যাই’।
প্রকৃত অর্থে আওয়ামীলীগ হেরে গেলে সব সময় পুরো বাংলাদেশই হেরে যায়। ১৯৭৩ সাল থেকে পাহাড়ে আওয়ালীগের জয়-পরাজয়ের ইতিহাস সবারই জানা। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দলটি পাহাড়ে খুবই দূর্বল ছিল। এমনকি দলটির সাংগঠনিক কাঠামোও খুব সবল ছিল, এমন দাবী করা যাবে না। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অধিকাংশ পাহাড়ি জনগণের নিরংকুশ সমর্থনে দলটির স্বল্প পরিচিত প্রার্থীরাই নৌকা প্রতীকে জিতে নেয় তিনটি আসন।
দীর্ঘ সময় ধরে অতি মাত্রায় সামরিকায়নের ফলে এখানে এক ধরনে ও বিচ্ছিন্নতাবাদ বা যুদ্ধাবস্থা টিকে ছিল। যা স্বৈরাচারী এরশাদ পতনের মধ্য দিয়ে সারাদেশের মতো পাহাড়েও ভিন্ন মাত্রায় বিকশিত হয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
১৯৯১ সালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পার্বত্যাাঞ্চলের তিনটি আসনে একযোগে তিনজন আওয়ামীলীগ মনোনীত মাননীয় সংসদ সদস্যের অসামান্য শ্রমের মধ্য দিয়ে পার্বত্যবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হন, জিঁইয়ে থাকা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের।
এবং এই সময়কালেই পার্বত্যাঞ্চলের পুজ্ঞিভুত রাজনৈতিক সমাধোনের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সূচিত হয়। যা ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামীলীগ শাসনামলে ঐতিহাসিক ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’-তে উপনীত হয়।
সেই চুক্তিটি পাহাড়ে কতোটা বাস্তবায়িত হয়েছে বা বাস্তবায়নযোগ্য তা, গত দেড় যুগে প্রতিভাত হয়েছে আগ্রহী মানুষদের কাছে। টানা এই আঠারো বছরের মধ্যে আবারো টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে; চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামীলীগ।
১৯৯১ সালে অধিকাংশ পাহাড়ি জনগোষ্ঠির ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে টিকে থাকেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বান্দরবানে বীর বাহাদূর টিকে গেলেও অন্য দুই আসনের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। একমাত্র বান্দরবানের বীর বাহাদূর উশৈসিং ছাড়া অন্যরা জনপ্রিয়তায় দ্রুত পিছিয়েছেন। ২০০৮ সালে যখন সারাদেশে দলটির রমরমা অবস্থা তখন হেরে রাঙামাটিতে হেরে যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। যিনি পঁচাত্তরের জঘন্যতম গণহত্যার প্রতিবাদে দেশত্যাগী ছিলেন।

 

চলবে

লেখক : প্রদীপ চৌধুরী, সিনিয়র সংবাদকর্মী, খাগড়াছড়ি।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,180 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen