ঈদুজ্জোহার চাঁদ হাসে, ঐ এলো আবার দুসরা ঈদ! কোরবানি দে, কোরবানি দে, শোন খোদার ফরমান তাগিদ’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কাব্য সুর মনপ্রাণ ভরিয়ে তুলছে ঈদের আনন্দ রোশনাইয়ে। মহান ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আগামীকাল। আল্লাহ পাকের প্রতি অপার আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতি বছর পশু কোরবানি দিয়ে আসছে।
এই ঈদে চাঁদ দেখা নিয়ে ঈদুল ফিতরের মতো আগের দিনের দোদুল্যমানতা নেই। আগেই নির্ধারিত হয়েছে ঈদের তারিখ। ২ সেপ্টেম্বর বা ১০ জিলহজ। এখন কেবল রাত পোহানোর প্রতীক্ষা।
কোরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এরসুন্নত অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুবার তিনি পশু কোরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কেউ নেই। আল্লাহপাক তাকেই কোরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করতে বলেন। কোরবানি করতে উদ্যত হযরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতে এ সময় হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। ঈদের নামাজের জামাতের আগে ইমামরা খুতবায় হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানির এই কাহিনি তুলে ধরবেন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা বিনম্র চিত্তে তাদের স্মরণ করবেন।
কোরবানি দেয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সাধারণত উট, দুম্বা, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এসব পশুই কোরবানি করার বিধান রয়েছে। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য।
পবিত্র ঈদুল আযহা জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সকলের মাঝে নিয়ে আসুক সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি। পবিত্র ঈদুল আযহা হোক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন। সবাইকে পাহাড়ের জনপ্রিয় অনলাইন সিএইচটি টুডে ডট কম পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা। “ঈদ মোবারক”।