রফিকুল আলম মামুন. সিএইচটি টু ডে ডট কম বান্দরবান ।
বান্দরবানের পাহাড়ে কলার ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। কম খরচে উৎপাদন ভাল হওয়ায় এবং দেশব্যাপী প্রচুর চাহিদা থাকায় এখানকার কৃষকরা এখন কলা বাগানের প্রতি ঝুঁকছে। পাহাড়ের ঢালে-ঢালে কলা বাগানগুলো চোখে পড়ার মতো। বাংলা কলা (স্থানীয় নাম), চম্পা, আনাজি, সবরি, সাগর কলা ছাড়াও সূর্যমুখী কলার মতো বিরল প্রজাতির কলার চাষও এখন বান্দরবানের পাহাড়ে হচ্ছে সহজেই। আগে যেখানে পাহাড়িরা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ করে সময় কাটাতো সেসব পাহাড়ে এখন আধুনিক পদ্ধতিতে কলার চাষ হচ্ছে।
বান্দরবানে বাজারে বিক্রির অপক্ষোয় কলা বিক্রেতারা
আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বনে কলার চাষের ফলে ফলনও বেড়েছে অনেকগুণ। আর এসব পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির কলা নিয়ে বান্দরবান বাজারে সপ্তাহে ২ দিন বসছে কলার হাট। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে শত-শত কলা চাষী বাজারে আসেন বেচাকেনা করতে। ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এসব কলা পাইকারিতে কিনেনিয়ে যান।
দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে দামে সস্তা হওয়ায় পাইকারেরা কলা কিনতে বান্দরবানমুখী হচ্ছেন বলে জানান চট্টগ্রাম থেকে আসা কলার পাইকারী ব্যবসায়ী মাহমুদ মিয়া। এছাড়াও ঢাকা থেকে এসে দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানের পাহাড়ে উৎপাদিত ফলমূলের ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন-অন্যান্য স্থানের চেয়ে বান্দরবানে কলার দাম অনেক কম। তাই বান্দরবান থেকে পাইকারি দামে কিনে তা ঢাকায় পাঠানো হয়। এক ট্রাক কলা ঢাকা পৌঁছাতে পারলে ৩০- ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়। আর এখানকার কলা প্রাকৃতিক ভাবে পাকানো হয় এবং ফরমালিনমুক্ত বলে এর চাহিদাও বেশি। এখানকার বাংলা কলার চাহিদা ঢাকায় বেশি। খেতে অত্যন্ত মিষ্টি এ কলা পার্বত্যাঞ্চলে বেশি হয়।
পার্বত্যাঞ্চলের কলার উৎপাদন বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ বড়–য়া বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে কলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। এখানকার বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তাছাড়া পাহাড়ের এ ধরনের মাটিতে রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাবও কম। কলার চারা রোপনের পর পরিচর্যা পর্বটি ভালোভাবে করা গেলে কলার উৎপাদন আরো বেড়ে যাবে।
কলা চাষে এ অঞ্চলে কৃষি ব্যাংক কমসুদে চাষীদের ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কলার চাষ করেছেন টাইগার পাড়ার লুনিয়ান বম। তিনি গতবছর কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজের জমিতে ৫শ’টি কলার চারা রোপন করেন। বছর শেষে তিনি এখন প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার কলা বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে লুনিয়ান বম কৃষি ব্যাংকের ঋণের টাকাও পরিশোধ করে দিয়েছেন বলে জানান।