শিরোনামঃ

তমব্রু সীমান্তের

দাবি না মানলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরবে না

কৌশিক দাশ (তমব্রু সীমান্ত থেকে ফিরে ): বান্দরবান। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে মিয়ানমারে ফিরবে রোহিঙ্গারা, না হলে তারা আর ফিরবে না বলে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা নেতা মো. নুরু। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, আত্মীয়-স্বজনকে মেরে ফেলেছে। আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সরকারের কাছে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এ দাবিসহ ২৫ আগস্ট পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ি ও দখল করা ভূমি ফিরিয়ে দেওয়াসহ ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিজ দেশে ফিরবো না। আমাদের দাবি মানতে হবে, আমাদের মিয়ানমারে মানুষের মত বাঁচতে দিতে হবে।’

শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির তমব্রু সীমান্ত সরেজমিন পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেছেন রোহিঙ্গা নেতা মো. নুরু। তিনি আরও বলেন, ‘সারা বিশ্ব যদি আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসে আমাদের ওই দেশে (মিয়ানমারে) নিরাপদে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে নিশ্চয়তা দিয়ে পাঠাতে পারে, তবেই আমরা ফিরব। আমাদের এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরব না।’

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরেই মিয়ানমারে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তবে এ বছরের মতো এত নির্যাতিত হইনি। তারা আমাদের চোখের সামনে অনেক মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা প্রাণ বাঁচাতে এ দেশে ফিরে এসেছি। আমরা যদি এমনিতেই ফিরে যাই, তাহলে আবারও আমাদের ওপর হামলা করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা নিশ্চয়তা ও অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত কোনও রকমের ঝুঁকি নিতে চাই না।’

তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া আরেক রোহিঙ্গা জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের জন্য মিয়ানমারে কিছু ঘরবাড়ি তৈরি করেছে মিয়ানমার সরকার। আর এ ঘরবাড়ির চারপাশে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। আমরা যদি ফিরে যাই, তাহলে আমাদের ওইসব ঘরের মধ্যে রাখা হবে। আমরা আর ইচ্ছে করলে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে আসতে পারব না। আমাদের ওখানেই জেলাখানার বন্দির মতো জীবন কাটাতে হবে। বের হওয়ার আর পথ থাকবে না। আগের চেয়ে নির্যাতনের পরিমাণ আর ও বেশি হবে।

রোহিঙ্গা আবদুল্লাহ বলেন, এখানে (সীমান্তে) সেনাবাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা প্রতিরাতে আমাদের ওপর ঢিল মারে। মাঝে মধ্যে গুলি ছোড়ে। এছাড়া প্রতিদিন মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাদের এখান থেকে সরে যেতে বলছে। তাদেরই আমাদের নিয়ে যাওয়ার কোনও উৎসাহ দেখছি না। আমাদের সুন্দরভাবে নিয়ে গেলে অবশ্যই চলে যাব। তবে আমাদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে তারও বিচার হতে হবে। আমরা বিশ্ববাসীর কাছে এর বিচার চাই।’

নাইক্ষংছড়ির তমব্রু ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা অনেক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার কাজ করছে। আমরাও সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। আশা করছি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমরা নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারবো।’

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি মিয়ানমারে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে প্রস্তাব দিয়েছি। তারাও আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি শিগগিরই তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তবে সীমান্তে সেনা বৃদ্ধি ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এতে রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 247 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen