শিরোনামঃ

টেলিফোনে আড়ি পাতার ঘটনায় চাপে ওবামা প্রশাসন

সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। টেলিফোনে আড়িপাতার ঘটনায় তোল পাড় চলছে  ওবামা-প্রশাসনে। রোববার জার্মানির এক সংবাদপত্র দাবি করেছে, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেলের ফোনে যে আড়িপাতা হয়েছে, তা বিলক্ষণ জানতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এবং তারপরও দীর্ঘদিনের ‘বন্ধু’ জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর নজরদারি চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

সংবাদপত্রটির আরো দাবি, শুধু জার্মানি নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০টি ‘আড়িপাতা-কেন্দ্র’ চালায় মার্কিন জাতীয় গুপ্তচর সংস্থা বা এনএসএ। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে প্রবল প্রতিক্রিয়া। কার্যত একই রকম প্রতিক্রিয়া কালও দেখেছে মার্কিন প্রশাসন। তবে গত কালের বিক্ষোভ-সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন নাগরিকরাই। এনএসএ-র নজরদারি বন্ধের দাবিতে ক্যাপিটল হিলের সামনে জড়ো হন তারা।Obama

বেশ ক’মাস ধরেই এনএসএ-র অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রবল চাপে ওবামা-সরকার। এডওয়ার্ড স্নোডেনের সৌজন্যে সামনে এসেছে এনএসএ-র একের পর এক বিতর্কিত গতিবিধির তথ্য। তাতে সাম্প্রতিকতম সংযোজন, ব্রাজিল ও জার্মানির প্রধানদের ফোনে আড়িপাতা। ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী দিলমা রোউসেফ আমেরিকার এই পদক্ষেপে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। এ হেন অবস্থায় আঙ্গেলা মার্কেলের ফোনে আড়িপাতা নিয়ে ওবামার নির্দেশ সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

জার্মানির সংবাদপত্রটির দাবি, ২০০২ সাল থেকে আঙ্গেলার উপর নজরদারি চালাচ্ছে এনএসএ। ওবামা যা জানতে পারেন ২০১০ সাল নাগাদ। চলতি বছরের জুন মাসে ওবামার বার্লিন-সফরের আগে পর্যন্তও সে নজরদারি চলেছে বলে দাবি ওই সংবাদপত্রের। নাম না করে এনএসএ-র এক অফিসারকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, ওবামা মোটেও মার্কেলের ওপর বিশ্বাস রাখতেন না। মূলত সে কারণেই ফোনে নজরদারি। এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এ তথ্য, যে এনএসএ-র সদর দফতর নয়, তা সোজা পৌঁছত হোয়াইট হাউসে। অথচ গত সপ্তাহেই ফোনে ওবামা আঙ্গেলাকে আশ্বস্ত করেন, নজরদারি নিয়ে কিছুই জানতেন না। ক্ষুব্ধ জার্মানি আমেরিকার সঙ্গে নজরদারি-বিষয়ে নতুন করে আলোচনা চালাতে আগামী সপ্তাহেই প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারে বলে খবর।

তবে অতলান্তিকের ওপারে শুধু জার্মানি নয়, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনের মতো দেশগুলির সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্ক এখন টালমাটাল। কারণ, অসমর্থিত সূত্রের মতে, এ সব দেশের রাজধানীতেও একই রকম নজরদারি চালানোর অভিযোগ উঠেছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নয়া বৈঠকে স্থির হয়েছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে গোয়েন্দা-তথ্য আদানপ্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন চুক্তি করা হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে কী বলছে আমেরিকা? মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র কাইটলিন হেডেন বলেছেন, “প্রত্যেক ছোটখাটো গোয়েন্দা-কর্মকাণ্ড নিয়ে জনসমক্ষে মন্তব্য করা হবে না।” অর্থাৎ নজরদারির যাবতীয় অভিযোগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করছেন না, আবার উড়িয়েও দিচ্ছেন না তারা। তবে মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি জানিয়েছেন, এ ধরনের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আমেরিকা এবং তার সঙ্গী দেশগুলির সম্পর্কে গভীর চিড় ধরেছে।

চিড় ধরেছে মার্কিন মুলুকেও। আসলে এনএসএ-র নজরদারি থেকে বাদ যাননি আমেরিকার বাসিন্দারাও। ই-মেল, চ্যাট, মেসেঞ্জারে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপরও নজর রেখেছিল এনএসএ। গোটাটাই তাদের অজান্তে। দেশবাসীর গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় শনিবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মার্কিনরা। ‘স্টপ মাস স্পায়িং’, ‘থ্যাঙ্ক ইউ, এডওয়ার্ড স্নোডেন’-লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ক্যাপিটল হিলে জড়ো হন প্রায় ২০০০ মানুষ। রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে তাদের প্রত্যেকেরই ছিল একটিই দাবি ‘স্টপ ওয়াচিং আস’। কংগ্রেসের সদস্যদের উদ্দেশে একটি অনলাইন চিঠিও লেখেন তারা। তাতে বলা হয়েছে, যে বিশেষ আইনের বলে এনএসএ এমন ক্ষমতার অধিকারী, তাতে সংশোধন আনুক কংগ্রেস। সন্ত্রাস রোখার নামে দেশের মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর আক্রমণ সহ্য করবেন না মার্কিনরা।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 192 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen