চেয়ারম্যান বিহীন ১৯ দিন পার করেছে পার্বত্য চট্রগ্রামের উন্নয়নের প্রধান প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড । বোর্ডের প্রধানের এই পদটি এই প্রথম বারের মতো দীর্ঘ ১৯দিন ধরে শুন্য রয়েছে। বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর ১ ডিসেম্বর স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগের পর অদ্যাবধি এই পদে সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে নিয়োগ কিংবা দায়িত্ব প্রদান না করায় এই শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এই প্রস্তাবনায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান পদ হতে বান্দরবান জেলা হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ১ ডিসেম্বর পদত্যাগের পর চেয়ারম্যান পদে শুন্যতার সৃষ্টি হয়। পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্ডিন্যান্স এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম বোর্ড আইন ২০১৩ (খসড়া অনুমোদিত) এ চেয়ারম্যানের পদ খালি হলে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হলেও পদত্যাগের পরের দিনই এই বিষয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারী না হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মূখী কথা শোনা যায়। প্রথমে এই পদে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর নাম শোনা গেলেও পরবর্তীতে মন্ত্রনালয়ের সচিবের নাম আলোচিত হয়। এই বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের সচিবকে বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দানের জন্য পার্বত্য মন্ত্রনালয় থেকে একটি প্রস্তাবনা প্রেরন করা হলেও এই প্রস্তাবনা প্রথম পর্যায়ে অনুমোদন না পেলেও এখন যে কোন মূহুর্তে এই প্রস্তাবনায় অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রনালয়ের সচিবের নিয়োগের প্রস্তাবনার বিষয়টি সকলের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্ঠি করেছে।
১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৯০সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনী চট্রগ্রামের জিওসি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করে আসলেও ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতুৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই পদটিতে বান্দরবান জেলা হতে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর কে (উপমন্ত্রীর পদ মর্যাদা দিয়ে) বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ৭ অক্টোবর নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার গঠন করলে এই পদে নিয়োগ পান খাগড়াছড়ি জেলা থেকে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ওয়াদূদ ভূইয়া । তিনি ১৩ ফেব্র“য়ারি ২০০২ সাল থেকে ২২ নভেম্বর২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বীর বারহাদুর কে নিয়োগ দেন।(প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায়)। ২৯ মার্চ ২০০৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান হতে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ১ লা ডিসেম্বর ২০১৩ সালে চেয়ারম্যানের পদ হতে পদত্যাগ করেন।
পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে জনপ্রতিনিধি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুর হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান পদ হতে পদত্যাগ পত্র গ্রহন পূর্বক জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় হতে পদত্যাগ পত্র গ্রহনের প্রজ্ঞাপন জারী করা হয় এবং একই দিন মন্ত্রনালয় থেকে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন পত্রে বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যানকে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ জারী করা হয়ে আসছে। এরই ধারাবিহকতায় প্রথমবার বীর বাহাদুর পদত্যাগের পরদিন ২৩ আগষ্ঠ ২০০১ সালে তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান তারাচরন চাকমা, ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর ওয়াদূধ ভুইয়া চেয়ারম্যান পদ হদে পদত্যাগের পরদিন ২৩ নভেম্বর বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ফিরোজ কিবরিয়া চৌধুরী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অডিন্যান্স ১৯৭৬ এ চেয়ারম্যানের পদত্যাগের পর ভাইস-চেয়ারম্যানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের কথা বলা ছিল।পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৩ (খসড়া অনুমোদিত )এর ৬ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে চেয়ারম্যানে পদ শুন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থ্যতা বা অন্য কোন কারনে চেয়ারম্যান তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান তাহার পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা চেয়ারম্যান পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত বোর্ডের ভাইস- চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
মোঃ মোস্তফা কামাল
রাঙামাটি।