সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের শুরুতেই নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। ইউএনডিপিসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার অনুদানে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা এ প্রকল্পে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। ‘স্ট্রেনদেনিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন চিটাগাং হিল ট্রাকস’ নামের প্রকল্পটিতে বিদেশী অনুদানের টাকা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খরচের মাধ্যমে ব্যয় দেখানো হচ্ছে। এরমধ্যে অত্যধিক পরামর্শক নিয়োগ, লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন, দাতা সংস্থার কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন কায়দায় অর্থ ব্যয়ের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। ৯ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পের মূল কার্যাবলীর চেয়ে অপারেটিং (পরিচালন) ব্যয় অত্যধিক। তাই ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনাসহ ভবিষ্যতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশী-বিদেশীসহ মোট ৬৫ ক্যাটাগরিতে পরামর্শক নিয়োগে ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দও চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এ পরামর্শক ব্যয় অত্যধিক বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার প্রকল্প দলিল অনুমোদনের আগেই ইউএনডিপির প্রকল্পের আওতায় কোনো খরচ নির্বাহ বিধি সম্মত নয় দাবি করে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৗধুরী এসপিইসি বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমরা যেসব প্রশ্ন তুলেছি সেগুলোর সমাধান করে সংশোধিত প্রস্তাব এলেই অনুমোদনের জন্য একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ এবং ইউএনডিপি, ডানিডা, এসডিএফ ও ইউএসএআইডির অনুদান হিসেবে ২১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় করার কথা। প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমি, সম্পদ ও জীবন-জীবিকা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রেসপনসিভ প্রতিষ্ঠান ও কার্যকরী সেবা প্রদানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ৬৫ ক্যাটাগরিতে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পের প্রকৃতি অত্যন্ত গতানুগতিক। তাই প্রস্তাবিত বিদেশী পরামর্শকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের পরামর্শকের সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে হবে। তাছাড়া মোট পরিচালন ব্যয় কমিয়ে মূল কর্মসূচির ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা টিমের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া প্রোগ্রাম সাপোর্ট ইউনিটের মূল দফতর রাঙ্গামাটি এবং দুটি ব্রাঞ্চ খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে স্থাপন করা হবে। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি পূর্ণ অফিস স্থাপনসহ একজন প্রকল্প সমন্বয়ক, প্রোগ্রাম অফিসার, আইটি অ্যাসোসিয়েটস এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদি পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকায় একটি লেসন অফিস স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পের আকার ও প্রাপ্ত অর্থের তুলনায় এসব প্রস্তাবনা অত্যধিক। প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর যৌক্তিকতা বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে ব্যাখা দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রস্তাবিত অফিসগুলোর পরিচালন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে এনে ঢাকায় লেসন অফিস সেটআপের প্রস্তাব বাদ দেয়া দেতে পারে বলে মতামত দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, চুক্তি অনুযায়ী মোট ৩১ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ১৯ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। এরমধ্যে স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং সদর দফতরের ইউএনডিপির স্টাফ বাবদ খরচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আঞ্চলিক ও সদর দফতরের স্টাফ ব্যয় প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে নির্বাহ করার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তাছাড়া প্রস্তাবিত জনবল প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনবলের দ্বৈদ্বতা রয়েছে বলে মনে হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই স্বাক্ষরিত প্রকল্প দলিলের সংস্থান অনুযায়ী প্রকল্পের অফিসগুলো, জনবল ও পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, অনুমোদিত প্রকল্প দলিলের সঙ্গে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যতে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। বলা হয়েছে, ইউএনডিপি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে নিজস্ব অর্থে প্রকল্পের বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করে আসছে, যা অনুমোদনের পর সমন্বয় করা হবে।
সংবাদটি দৈনিক যুগান্তর থেকে নেওয়া