সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসলে আওয়ামীলীগ শান্তি চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারাগুলো বাস্তবায়ন করবে। পার্বত্য এলাকায় মানুষের দারিদ্র দুরীকরনে ছোট ছোট শিল্প কারখানা স্থাপনে প্রনোদনা দিবে। পার্বত্য চট্রগ্রামের পর্যটন শিল্পের সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে এটি শিল্প হিসেবে পরিনত করা হবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ শনিবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে এসব কথা বলেন। ইশতেহারের শিরোনাম দেয়া হয়, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, দেশবাসী সংঘাত নয়, শান্তি চায়। তারা অসাংবিধানিক পথে বা স্বৈরশাসনে ফিরে যেতে চায় না। তারা চায় সহিষ্ণু গণতন্ত্রের আলোকোজ্জ্বল অভিযাত্রা। ইশতেহার যাকে তিনি ‘জাতীয় সনদ’ বলে অভিহিত করেছেন, সেটিতে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের, সাংসদদের জবাবদিহি নিশ্চিতের, প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গঠনের এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশনকে সংহত করার। শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর দল যেসব অঙ্গীকার করেছিল তা পালন করেছে। সংকট মোচন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে কর্মসূচি দিয়েছিল, তা অত্যন্ত সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
দেশবাসীর কাছে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসী সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত হবে, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অপুষ্টির অভিশাপ দূর হবে, দারিদ্র্যের লজ্জা ঘুচে যাবে, নিরক্ষরতা দূর হবে, শিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে, শিল্প-সভ্যতার ভিত্তি রচিত হবে, প্রতি ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছাবে, বেকারত্বের অবসান ও কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে, পরিকল্পিত নগর-জনপদ গড়ে উঠবে, রাজধানী ঢাকা যানজটমুক্ত তিলোত্তমা নগরে পরিণত হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সমৃদ্ধির সোপানে পা রাখবে। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি, সংঘাতের অবসান হবে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে। গড়ে উঠবে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও “হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর” প্রতীক; স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক নৌকায় ভোট দিন। আসুন, আমরা বিভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই। হত্যা সন্ত্রাস হানাহানি সংঘাত-রক্তপাতের চির অবসান ঘটাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি। দেশ গড়ার এই সংগ্রামে জনগণের জয়—বাংলাদেশের জয় অনিবার্য।’
ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হলে ২০২১ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৪ ডলার থেকে এক হাজার ৫০০ ডলার হবে, প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ, বিদ্যুত্ উত্পাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।
ইশতেহারে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে শান্তি-স্থিতিশীলতা। বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সব জায়গায় শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান, তাদের কাজের ও চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। বলা হয়েছে, সংসদের ভেতরে ও বাইরে সাংসদদের সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত কাজের জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ বিধিবিধান করা হবে।
ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা ও রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য স্থায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সূচনা হয়েছে। এটিকে সংহত এবং শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করা হবে। যুগের প্রয়োজনে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার অব্যাহত থাকবে।
ইশতেহারে বলা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিকাশের ফলে সামাজিক গণমাধ্যম এবং অনলাইন পত্রিকার ভূমিকা বেড়েছে। অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক গণমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। তবে বলা হয়েছে, সব ধরনের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার নীতি অবিচলিতভাবে অব্যাহত রাখা হবে। জনগণের তথ্য জানা এবং সরকারের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রণীত তথ্য অধিকার আইন এবং তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা হবে। যোগাযোগ খাতে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে গেলবার দক্ষিণাঞ্চলের ভোটারদের আকৃষ্ট করেছিল আওয়ামী লীগ। এবার ইশতেহারে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। পাশাপাশি দ্বিতীয় যমুনা সেতু ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কারিগরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত শেষ করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।