শিরোনামঃ

রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বস

পুনর্বাসন না করলে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়বে না ক্ষতিগ্রস্তরা

শাহ আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে আর খেতে চাই না, থাকতে চাই না। আমরা পুনর্বাসন চাই। আমরা আমাদের আগের জায়গায় ফিরে যেতে চাই। আমরা পুনর্বাসন ছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কোথাও যাবো না। যদি আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে যেতেই হয় তাহলে প্রশাসনকে বলেন, ভাতের সাথে এক বোতন বিষ দিতে, আমরা খেয়ে মারা যাব। তার পরেও আমরা পুনর্বাসন ছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কোথাও যাবো না। আমাদের পুনর্বাসন না করলে আমরা কোথায় যাবো? যাওয়ার জায়গাতো নাই। এমনটাই হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে বলছেন, ১৩ই জুন পাহাড় ধ্বসে ভেদভেদী রুপনগর এলাকার বাসিন্দা ঘরবাড়ী হারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত তিন ছেলে-মেয়ের জননী ফাতেমা বেগম।

প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ৪ সেপ্টেম্বরের পর আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আর চালানো সম্ভব হবে না। আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য সরকারি বরাদ্দ শেষ। এখন এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। রাঙামাটি শহরে খোলা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন খবর শুনার পর থেকেই পাহাড় ধ্বসে ঘরবাড়ি হারা ক্ষতিগ্রস্থরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

রাঙামাটি ভাবনা কেন্দ্রের আশ্রয় কেন্দ্রে আবস্থানরত সজীব চাকমা বলেন, বাড়ীঘর হারা পরিবার পরিজনসহ নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে গাদাগাদি করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। কিন্তু সরকারি পুনর্বাসন ছাড়াই প্রশাসন থেকে হঠাৎ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে বলেছেন। কোথায় যাবো? আমরা কী করবো? তা নিয়ে কিছুই বুঝতে পারছেন না । আমরা সরকারি পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা চাই।

আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত জরিনা বেগম (৩৫) বলেন, ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আর চালানো সম্ভব হবে না। যদি আমাদের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো। বের করে দিবে তাহলে আমাদের আড়াই মাস আশ্রয় কেন্দ্রে রাখলো কেনো? আমরা সব হারিয়েছে। আমাদের এখন তো আর কিছুই নেই। যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। এ মুহূর্তে কোথায় যাব, কী করব কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। এ মুহূর্তে সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, সরকার আমাদের পুনর্বাসন করুক আর না হয় আমাদের মেরে ফেলুক।

অন্যদিকে পাহাড় ধ্বসে স্বামী হারা রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থিত দুই ছেলে মেয়ের মা রাবেয়া আক্তার (৩০) বলেছেন, আমি ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছি, তাদের ভবিষ্যত কি হবে বুঝতে পারছি না। এমন অবস্থায় পুনর্বাসন ছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বের করে দিলে আমরা কোথায় যাবো তা এখনো জানিনা। আমাদের বলেছিলো সরকার থেকে পুনর্বাসন করে দিবে। কিন্তু এখন নাকি পুনর্বাসন দুরের কথা আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বিদায় করবে আমাদের। আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিলে আমরা কোথায় যাবো। আমরা পুনর্বাসন ছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র থেকে যাবো না।

রাঙাপানির ভাবনা কেন্দ্রে আশ্রয়ীত রানু চাকমা (৩৫) বলেন, আমাদের প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিতে। আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিলে আমাদের আগের ভিটেবাড়ি ছাড়া অন্য কোথায়ও যাওয়ার জায়গা নেই। থাকলেও বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আগের আবাসস্থলে আবার যেতে হবে। আমরা আগের জায়গায় যাবো না। মরলেও আশ্রয় কেন্দ্রে থাকবো, বাচলেও আশ্রয় কেন্দ্রে থাকবো। আমরা ঝুকিপূর্ণ জায়গায় ফিরে যেতে চাই না। যদি যেতেই হয় তাহলে আগের জায়গায় গিয়ে কি করব। ঘরবাড়িতো নেই আমাদের। এখন আগের জায়গায় গেলে বাড়ি ঘর মেরামত করতে হবে। টাকা পয়সা নাই। পড়ার জামা-কাপড় পর্যন্ত নেই। তাছাড়া ঝুকিপূর্ণ জায়গায় জীবনের ঝুকি নিয়ে থাকতে চাই না। তিনি আরও বলেন, সরকার নাকি আমাদের নগদ ৬ হাজার টাকা,২ বান্ডেল টিন ও ত্রিশ কেজি চাল দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বিদায় করবে, কিন্তু এই স্বল্প টাকা দিয়েতো আমাদের কিছুই হবেনা। আমরা কি ঘরভাড়া দিবো নাকি নিজের জীবন বাঁচাবো? আমাদরে একটাই দাবি আমাদের পুনর্বাসন করা হোক,তা নাহলে আমরা আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে কোথাও যাবো না।

পরিবার পরিজনসহ নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে গাদাগাদি করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কিন্তু সরকারি পুনর্বাসন ছাড়াই প্রশাসন থেকে হঠাৎ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে বলায় কোথায় যাবেন, কী করবেন তা নিয়ে কিছুই বুঝতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা চান সরকারি পুনর্বাসন এবং তার নিশ্চয়তা।

পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও আশ্রয় কের্ন্দের সার্বিক বিষয় নিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন মানজারুল মান্নান সিএইচটি টুডে ডট কম কে বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র চালানোর জন্য সরকারি বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে কেন্দ্রগুলো চালানো হচ্ছে। তাও শেষ হয়ে আসছে। এ অবস্থায় আশ্রয় কেন্দ্র চালানো আর সম্ভব নয়। তবে বরাদ্দের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে চালু রাখা যাবে। অন্যথায় ঈদুল আজহার পরেই আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। এ জন্য যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তাদেরকে যার যে সুবিধা মতো নিরাপদে কোথাও চলে যেতে বা ভাড়া বাসা খুঁজে নিতে বলা হয়েছে। যাওয়ার সময় কেন্দ্র অবস্থান করা ৩১৩ পরিবারের প্রত্যেককে ত্রাণের ২ বান্ডেল ঢেউ টিন, নগদ ৬ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদের দিন উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে রাঙামাটিতে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থরা এবং ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত পরিবারগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,488 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen