শিরোনামঃ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ

নুরুচ্ছাফা মানিক, সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমের দ্বিতীয় বছরও পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ থাকছে। শিক্ষক স্বল্পতা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা না থাকায় আলোর মুখ দেখছে না সরকারের ইতিবাচক এমন কার্যক্রম। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে গত ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে খাগড়াছড়ি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৯০ জন(চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের) শিক্ষককে পনের দিনের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হলেও এখনও প্রশিক্ষণ পাননি অধিকাংশ শিক্ষক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ক অনুচ্ছেদের ৩৩- এর খ-তে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। দীর্ঘ ঊনিশ বছর পর ২০১৬ সালে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে পাচ সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয়। পরবর্তীতে তা প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে খাগড়াছড়ির ৫৯২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে চাকমা সম্প্রদায়ের ৫১১২ জন, মারমা সম্প্রদায়ের ২৮৪৭ জন ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩৫৭৩জন শিক্ষার্থী এবং প্রথম শ্রেণীতে চাকমা সম্প্রদায়ের ৪২৪৬জন, মারমা সম্প্রদায়ের ২০৪৭জন ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৮৯৮ জন শিক্ষার্থী মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক নিজেরাই মাতৃভাষার বর্ণমালার সাথে পরিচিত না থাকায় শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করাতে পাচ্ছেন না। বিদ্যালয়ের আলমারিতে স্তুপ করে রেখে দেয়া হয়েছে মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তকগুলো।
খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরভী তালুকদার বলেন, আমার বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীতে ৩৬ জন চাকমা ও ৬ জন ত্রিপুরা শিক্ষার্থী এবং প্রথম শ্রেণীতে ৫৮ জন চাকমা ও ১০ জন ত্রিপুরা শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃভাষায় বই থাকলেও তা আলমারিতে রেখে দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
একই বিদ্যালয়ের অভিভাবক অনুরবা চাকমা বলেন, এই বছর মেয়েকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। মাতৃভাষায় বই পেলেও তা পড়ানো হয় না। আমরাও পড়তে পারি না। এই সমস্যা সমাধানে সরকার যেন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, প্রথা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে কাজ করছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট। ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে সীমিত ভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে খাগড়াছড়ি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৯০ জন(চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের) শিক্ষকদের নিয়ে পনের দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।
তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষার লেখক প্যানেলের সদস্য মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, কয়েকজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে এতো বড় একটি উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরী।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন জানান, মাতৃভাষায় পাঠদানে সক্ষমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক সুসময় চাকমা জানান, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তিন জন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের চলতি ব্যাচের ৩০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম বোর্ড মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লেখকদের সমন্বয়ে স্টাডিং কমিটি গঠন করে। লেখক প্যানেলদের প্রণীত পাঠ্যপুস্তকে ২০১৬ সাল থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় পাঠ্য পুস্তক মুদ্রিত হয়ে আসছে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 694 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen