সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি রাজবনবিহারে আগামী ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ২ দিনব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান উৎসব। প্রতিবছরের মত এবারো রাজ বনবিহার পরিচালনা কমিটি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। গত বছর বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের আর্য পুরুষ শ্রীমৎ সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তে পরলোক গমন করার পর অন্যান্য বছরের তুলনায় লোক সমাগম কম হয়েছিল। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান আগত বৌদ্ধ পুন্যার্থীরা কমিটির অসহযোগিতা এবং হয়রানির স্বীকার হওয়াতে এবং বনভান্তে মারা যাওয়াতে তারা রাজবনবিহার বিমুখ হয়ে পড়েছেন।
রাজবন বিহার সুত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে এ কঠিন চীবর উৎসব উদ্যাপিত হবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতাই তাঁতে কাপড় বোনা হয়। পরে সে কাপড় সেলাই করে চীবর তৈরী করে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তা পার্বত্য ধর্মীয় গুরু বনভন্তের কাছে দান করা হয়। দেশের মধ্যে একমাত্র রাঙামাটি রাজবন বিহারে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে এ চীবর দান উৎসবের প্রচলন থাকলেও বিশ্বের আর কোথাও এ নিয়মের প্রচলন ছিল না।
এদিকে কঠিন চীবর দান উৎসবকে কেন্দ্র করে দু’দিন ব্যাপী উৎসব উপলক্ষে রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ১৪ ও ১৫ নভেম্বর দু’দিন ব্যাপী নেয়া হয়েছে নানা অনুষ্ঠান মালা। বনবিহার সুত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠান মালার মধ্যে রয়েছে ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহণ,বিকাল ৩টায় বেইন ঘরে কঠিন চীবর তৈরীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন রাজমাতা আরতি রায়। বিকাল ৩টা ১১মিনিটে চরকায় সুতা কাটা, বিকাল সাড়ে ৫টায় সুতা লাগনো, সন্ধ্যা ৬ টায় সুতা সিদ্ধ ও রং করা , সন্ধ্যা ৭ টায় সুতা টিয়ানা, রাত সাড়ে ৮ টায় সুতা শুকানো, রাত ১০ টায় সুতা থুম করা ও নলিকরা, রাত ১০ টায় বেইন টানা শুরু পরদিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত বেইন বুনা।
১৫ নভেম্বর শুত্র“বার সকাল ৬ টায় চীবর সেলাই, একই সময় বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ৬টা ১০ মিনিটে পুজনীয় ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, সকাল ৯ টায় বনভান্তের প্রতিচ্ছবিসহ ভিক্ষু সংঘের মঞ্চে আগমন, সকাল সোয়া ৯ টায় ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন। এছাড়া বেলা ১টায় শোভাযাত্রা সহকারে কঠিন চীবর ও কল্পতরু মঞ্চ আনায়ন, বিকাল ২টায়, অতিথি বৃন্দের মঞ্চে আসন গ্রহণ, বিকাল সোয়া ২ টায় বনভান্তের প্রতিচ্ছবিসহ সহকারে ভিক্ষদেও মঞ্চে আগমন, ২.২০মিঃ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন, ২.৩০মিঃ পঞ্চশীল গ্রহণ, বিকাল ২.৫০ মিনিটে কঠিন চীবর দান উৎসর্গ, বিকাল ৩টায় সাধারণ প্রার্থনা, ৩ টা ২০ মিনিটে সাধারন সম্পাদক/সভাপতির স্বাগত ভাষণ, ৩টা ২০ মিনিটে সম্মানীত ব্যক্তিবর্গের ভাষণ, বিকাল ৩ টা ৪০মিনিটে ভিক্ষু সংঘের ধর্মদেশনা এবং ৩টা ৫৫ মিনিটে বনভান্তের রেকর্ড করা ধর্মীয় দেশনা বাজিয়ে শোনানো হবে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬ টায় সার্বজনীন প্রদীপ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক উপাসিকা কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রতুল বিকাশ চাকমা জানিয়েছেন প্রতি বছরের মত এবারো রাজ বনবিহারে ৪০তম কঠিন চীবর দান সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহন করা হচ্ছে। লোক সমাগম আগের চেয়ে ভালো হবে বলে তিনি জানান।