সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। উন্নয়ন কর্মকান্ডে কোন একটি জেলাকে বাদ দিয়ে দেশ কখনোই এগিয়ে যেতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। তিনি বলেন, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে দেশের সকল এলাকার সমউন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার যেসব উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে এগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে দেশ অতি দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
বুধবার সকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সভাকক্ষে আয়োজিত পরিষদের মাসিক সভায় সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান একথা বলেন।
চেয়ারম্যান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৯৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে এবং চুক্তি মোতাবেক বিভিন্ন বিষয় ও দপ্তর হস্তান্তরিত হয়েছে। হস্তান্তরিত বিভাগের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ জেলাবাসীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। মানুষ তার সুফল পেতে শুরু করেছে। তিনি রাঙামাটির উন্নয়ন কর্মকান্ড আরো বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জেলার উন্নয়নের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করলে এ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। একদিকে মানুষ যেমন উন্নয়নের প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারবে, তেমনি দেশও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি রাঙামাটির উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ জনকল্যাণকর যেকোন কাজে পরিষদের হস্তান্তরিত দপ্তরসহ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান।
পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ছাদেক আহমদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও হস্তান্তরিত বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন বলেন, রোগীদের সুবিধার্থে বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালে এম্বুলেন্স সার্ভিস, ইসিজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফী, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সরকারি মূল্যে করা হচ্ছে এবং প্রসূতি মায়েদের নরমাল ও সিজার ডেলিভারী সুষ্ঠভাবে করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০বেডে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২লক্ষ ৮০হাজার কীটনাশক যুক্ত মশারী আনা হয়েছে যা শীঘ্রই জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিতরণ করা হবে। তৃণমূল পর্যায়ে কোন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী থাকলে তাকে দ্রুত উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করার অনুরোধ জানান তিনি। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ এবং রোগীকে যাতায়াতের জন্য ব্র্যাক হতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী বলেন, শহরের পানির লাইন লিকেজের মেরামত কাজ ও ই টেন্ডারিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে জেলা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে একযোগে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৭অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সমাপ্ত হয়েছে। টুর্নামেন্টে জেলার ১০টি উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ২০টি দল অংশগ্রহণ করে এবং ফাইনাল খেলায় বাঘাইছড়ির পাকুজ্জ্যাছড়ি ও কাউখালীর সাপমারা প্রাথমিক বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, আগামী ২৬ অক্টোবর ৭ম শ্রেণী মেধাবৃত্তি পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হবে।
জেলা সমাজসেবা বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা’সহ অন্যান্য ভাতাসমূহ সঠিকভাবে প্রদান করা হচ্ছে।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। আগামী মাসে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তিনি আগামী ১লা নভেম্বর যুব দিবস উপলক্ষে র্যালী, আলোচনাসভা ও যুবদের ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানান।
হর্টিকালচার সেন্টার বালুখালী, লংগদু ও বনরুপা, নানিয়ারচর এবং আসামবস্তী হর্টিকালচার সেন্টারে বিভাগীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চারা কলম উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যক্রম চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরকারী গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সরকারী গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে রচনা, চিত্রাংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এর ব্যবস্থাপক জানান, ১৩জুন প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে পর্যটক কম হচ্ছে। তবে আগামী মাসে পর্যটক মৌসুমে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় হস্তান্তরিত বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ তাদের বিভাগের স্ব স্ব কার্যক্রম উপস্থাপন করেন এবং বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।