সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন রক্ষায় মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামীলীগ। প্রতীক বরাদ্ধ পেয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ ১৮ দল অংশ গ্রহণ না করায় আঞ্চলিক পাহাড়ী সংগঠন ইউপিডিএফ নতুন চমক দেখাতে পারে বলে মনে করছেন পাহাড়ের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ও সচেতন ভোটাররা।
পার্বত্য জনপদের গুরুত্বপূর্ণ জেলা খাগড়াছড়িতে বেশীরভাগ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক প্রার্থী জয়ী হলেও এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করায় ভোটের হিসাব পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সচেতনরা। জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয়দের গ্রীণ সিগনাল নিয়েই খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করছে জাতীয় পাটি। আওয়ামীলীগের সাথে আসন ভাগা-ভাগির অংশ হিসেবে এ আসন জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, পাহাড়ের মানুষ কোনো অতিথি পাখিকে ভোট দেবে না। নৌকাই পাহাড়ের মানুষের প্রতীক। বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, মহাজোট সরকার পাহাড়ের উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানান তিনি। এছাড়াও এসময় তিনি উল্টাছড়ি বিহারে ভান্তের জন্মদিন অনুষ্ঠানে যোগদেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দূরাবস্থা দূর করতে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরীর নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে তারা। অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীর গণসংযোগেও। সাধারণ ভোটারদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দিপনা দেখা না গেলেও সাধারণ ভোটারদের মন জয় করে ভোট পেতে প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় গণসংযোগে নির্ঘম রাত কাটাচ্ছেন এ আসনের প্রতিদ্বন্ধি চার প্রার্থী।
অপরদিকে আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি এম এন লারমা গ্র“পের মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা বই প্রতীক এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রসিত বিকাশ খীসা হাতী প্রতিক নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্র এলাকায় নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও আগামী দিনের প্রতিশ্র“তি নিয়ে সাধারণ পাহাড়ী ভোটারদের নিজ নিজ দলের প্রাপ্ত প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান অব্যাহত রেখেছেন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ১ লাখ ২২ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রার্থী সমীরণ দেওয়ান ৬২ হাজার ৯৭৬ ভোট ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী উজ্জল স্মৃতি চাকমা ৬০ হাজার ৪শ ১০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯শ ৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ নয়শত ৫৯ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩শ ১৫ জন।
গত নির্বাচনে ফলাফলে তৃতীয় স্থান অধিকারী আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের রাজনৈতিক সচেতন অভিজ্ঞ মহল। তাদের অভিমত আওয়ামীলীগের দুর্বলতা এবং বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানো ও অপর স্বতন্ত্র প্রর্থী মৃণাল কান্তি ত্রিপুরার নিরব প্রচারণার ফলে ভোটের হিসাব পাল্টে গিয়ে নতুন চমক দেখাতে পারে ইউপিডিএফ।
এ আসনের সচেতন ভোটাররা বলছেন, সব মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ গ্রহণ না করায় আওয়ামীলীগের মিত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বিপদে আছে নৌকা প্রতীক প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গতবারের তৃতীয় স্থানে থাকা প্রশীত বিকাশ খীসা ভোট ভাগা-ভাগির হিসেবে অধিকাংশ পাহাড়ি ভোটারের ভোট পেয়ে বিএনপি ছাড়া এ নির্বাচনে নতুন চমক দেখাতে পারে।