শিরোনামঃ

আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির বর্ষপুর্তি, ১৬ বছরেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি

ফজলুর রহমান রাজন, রাঙামাটি। আজ সোমবার ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৬তম বর্ষপুর্তি। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে  রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিনটি পালিত হবে। পার্বত্য চুক্তির বর্ষপুর্তি উপলক্ষে জেএসএসসহ আঞ্চলিকদলগুলো ভিন্ন ভিন্নভাবে নানা কর্মসুচী হাতে নিয়েছে।-Signature of CHT Accord

পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও পাহাড়ে এখনো শান্তি আসেনি। পাহাড়ে বিবদমান দুটি উপজাতীয় গ্র“পের ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত কখনো পাহাড়ী বাঙালী দাঙ্গায় প্রতিনিয়ত সবুজ পাহাড় রক্তে লাল হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে চলছে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সংগঠন আওয়ামীলীগ এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য চুক্তি পক্ষ জনসংহতি সমিতি সরকারকে দোষারোপ করলেও সরকারীদল বলছে চুক্তি পক্ষের অসহযোগিতার জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন ধীরগতিতে এগুচ্ছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আ’লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সবার ধারণা ছিল পাহাড়ে অবসান ঘটবে দীর্ঘ দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাতের। কিন্তু সে আশাকে হতাশায় ফেলে শান্তি চুক্তির গত ১৬ বছরে তিন পার্বত্য জেলায় উভয়ের মধ্যেকার সংঘর্ষে হতাহত হয়েছে বহু পাহাড়ী-বাঙ্গালী চুক্তির বিরোধীতা করে একে আপোষ চুক্তি আখ্যা দিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার নামে জন্ম নেয় ইউপিডিএফ এবং বাঙ্গালীদের অধিকার আদায়ের নামে জন্ম নেয় পার্বত্য চট্রগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন ও বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। কখনো আদিবাসী, কখনো বা বাঙালি অধিবাসীর তরতাজা প্রাণ ক্ষয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও বাতিলের পাল্টা-পাল্টি দাবিতে হিংসাত্মক ঘটনা ও হানা-হানি বাড়ছে। পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেচিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে সাধারন মানুষের জীবন বিপন্নপ্রায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় গত ১৬ বছরে একটি সরকারি পরিসংখ্যানের হিসেবে মতে ৭৪০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে জনসংহতি সমিতির ৩০০জন ইউপিডিএফের ২৯০জন সংস্কারের ৩৭জন এবং বাঙ্গালী কমপক্ষে ১১৩জন। এছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫০০ জন অপহরণের শিকার ১০০০জন, উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে কমপক্ষে ৮শ বার। প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে ৯শটি ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ সময়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৩৫০ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সবশেষে ২১ নভেম্বর বাঘাইছড়িতে প্রতিপক্ষের হাতে জেএসএসের সভাপতিসহ ৩জন নিহত হয়েছে। চুক্তির ১৬ বছরেও চুক্তি নিয়ে বির্তকের অবসান ঘটেনি। চুক্তির ১৬ বছরে এসে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্নভাবে জানান।P1030994
প্রতি বছর চুক্তির বর্ষপুর্তি আওয়ামীলীগ বা বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সংবাদ সম্মেলন করে চুক্তির বাস্তবায়ন সর্ম্পকে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করলেও এবার সংবাদ সম্মেলন করেনি এবং চুক্তি নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখা করেনি।
তবে চুক্তি বাস্তবায়ন সর্ম্পকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ গঠন, জেলা পরিষদ পুর্নগঠন, ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন, ভারত প্রত্যাগত শরনার্থীদের পুর্নবাসন ও অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪২ ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

চুক্তি বাস্তবায়ন সর্ম্পকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেছেন, চুক্তির সব বাস্তবায়ন করা হয়নি এমনটা বলব না, তবে চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো ভুমি কমিশন আইন সংশোধন করা হয়নি, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ আইন কার্যকরা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ (স্থানীয়), ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, মাধ্যমিক শিক্ষা, বন ও পরিবেশ, স্থানীয় পর্যটন, জুমচাষ ও পরিসংখ্যান ইত্যাদি হস্তান্তর করা হয়নি। বরং সরকার চুক্তি নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন।

শান্তি চুক্তির বর্ষপুর্তিতে ইউপিডিএফ সমর্থিত গনতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারন সম্পাদক মাইকেল চাকমা বলেছেন, আমরা আগেই বলেছি এটি আপোষ চুক্তি এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি আসবে না। এটি একটি আপোষ চুক্তি। পাহাড়ে ভ্রাত্বঘাতি সংঘাতের জেএসএস ও সরকারই দায়ী তারা এ সমস্যা জিইয়ে রেখেছে।

পার্বত্য সম অধিকার আন্দোলন একাংশের আহবায়ক পেয়ার আহম্মদ খান বলেছেন, চুক্তির ১৬ বছরেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। চুক্তি পাহাড়ী বাঙ্গালী কারো স্বার্থে আসেনি বলে ইউপিডিএফ জেএসএস পাহাড়ে সন্ত্রাস চাদাবাজি খুন হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং পার্বত্য মন্ত্রনালয়ে গুরুত্বপুর্ণ পদে পাহাড়ীদের নিয়োগের দানের মাধ্যমে বাঙ্গালীদের সাংবিধানিক অধিকারকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার উদ্ধার হলে হলে সন্ত্রাস কমবে বলে তিনি দাবী করেন।09

এদিকে আজ সোমবার পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তির ১৬তম বর্ষপুর্তিতে চুক্তি পক্ষ পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাঙ্গালী ভিত্তিক সংগঠনগুলো ভিন্ন ভিন্ন কর্মসুচী পালন করবে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 735 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen