যদিও বা তিনি কর্মসুত্রের কারনে রাঙামাটি ছেড়ে চলে যাবেন তবুও রাঙামাটি বাসীর মতে তার মত বিজ্ঞ অভিজ্ঞ, যোগ্য, ক্রিয়েটিভ মানুষের রাঙামাটি থাকা বড় প্রয়োজন। অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, অনেক কঠিন কাজকে সহজ করেছেন। রাঙামাটিতে যে কয়জন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যে বর্তমান জেলা মোস্তফা কামালের নাম রাঙামাটি মানুষের হৃদয়ে লিখা থাকবে। কেউ ভোগে বিশ্বাসী আর কেউ বা ত্যাগে বিশ্বাসী। কেউ কাজ করে আনন্দ পায় কেউ বা ভোগ করে আনন্দ পায়। বর্তমান জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নেবার পর থেকে সব সময় সাধারন জনগনের পাশে থেকেছেন মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন।
২০১২ সালের ২৭ মে রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকে মোস্তফা কামাল ঝড়ে যাওয়া রোধ করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস, ব্যাগ বিতরণ, মিড ডে মিল চালু, পাবলিক কলেজ, বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়াও ইভটিজিং বিরোধী অভিযান, ভেজাল বিরোধী অভিযান,ফুটপাত বেদখল, জেলার একমাত্র শিশু পার্ক উদ্ধার, জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, জেলা ওয়েব পোর্টাল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ওয়াই ফাই জোন এবং জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে সেবা প্রদানের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া পর্যটন শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে শহরের রাস্তার দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শহরবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হন।
দুর্গম লেক বেষ্টিত স্কুলগুলো ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে শিক্ষার তরী বিতরন করেন।
কাজের সাফল্য স্বরুপ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৩ এবং ২০১৪ এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রাঙামাটির জেল প্রশাসক মোস্তফা কামাল শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হয়েছেন। রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে উদ্ভাবনীমূলক ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এ পদক লাভ করেন।
রাঙামাটি পাবলিক কলেজ নামে রাঙামাটি জেলা সদরের পৌর এলাকার নারিকেল বাগান এলাকায় একটি কলেজ স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার গত ১১ মে কলেজটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষ হতে ২৯১ শিক্ষার্থী নিয়ে রাঙামাটি সদরের তবলছড়ি এলাকার মিনিস্ট্রিয়াল ক্লাবে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কলেজটি যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এখনো ভবন তৈরি হয়নি।
এছাড়া বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। তার আন্তরিকতার কারনে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম অস্থায়ী ভবনে শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্র ছাত্রী ভর্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আগামী মাসে ক্লাস শুরু হবে।
অনেক জেলা প্রশাসকের সময় টেবিলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকলেও বর্তমান জেলা প্রশাসকের আমলে দ্রুত ফাইল তার জায়গায় চলে যেত কোন তদবির বা লবিং করতে হতো না। জেলা প্রশাসনের অনেকটা স্বচ্ছতা ও জবাব দিহীতা ফিরে এসেছে। মানুষ এখন আর আগের মত হয়রানির শিকার হয় না। সব কিছু মিলিয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার বিদায় রাঙামাটিবাসীর জন্য অপুরনীয় ক্ষতি বলে অনেকে মনে করছেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোঃ মনিরুজ্জামান মহসিন রানার মতে জেলা প্রশাসক সত্যি একজন অসাধারণ মনের মানুষ। তিনি শিক্ষানুরাগী ও বিগত ডিসিদের তুলনায় মন মানষিকতা অত্যন্ত উদার এবং সৎ লোকও বটে। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার পরে বদলী হলে এলাকার ভাগ্য আরো প্রসারিত হতো।
রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে জেলা প্রশাসক থাকাকালীন সময়ে রাঙামাটিতে তিনি এক সাথে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ হাতে নিয়ে মাঝামাঝি সময়ে বদলী হওয়ার কারনে রাঙামাটিবাসীর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও স্বাধীনতার পরে এ জেলাতে অনেক ডিসি আসছে গেছে কিন্তু কোন ডিসি সময়ের চাহিদা ও কাজের পরিধি নিয়ে এত ভুমিকা রাখতে দেখেনি।তাই এ জেলা প্রশাসকের আরো কয়েক বছর থাকা দরকার।
রাঙামাটির প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে এর মতে বর্তমান জেলা প্রশাসকের অনেক অসমাপ্ত কাজ আছে এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি পাবলিক কলেজ ও পৌর পার্ক রয়েছে। তাই এসব কাজ সমাপ্ত করতে জেলা প্রশাসকের কম পক্ষে আরো ২ বছর থাকা উচিত। জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামালকে রাঙামাটিতে আরো প্রয়োজন আছে।
রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী (ভুট্টো) বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক আরো দীর্ঘ সময়ে থাকলে ভালো হতো। তবে যে ডিসি আসবেন তিনি যদি এ ডিসির অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করেন তা হলে এ ডিসির চলে যাওয়ার ক্ষতিটা রাঙামাটির মানুষ পুষিয়ে উঠতে পারবে। অন্যথায় পার্বত্য এলাকার প্রেক্ষাপটে আমাদের অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হবে।