সিএইচটি টুডে ডট কম,বান্দরবান। রাজনৈতিক অস্থিরতায় বান্দরবান হোটেল মোটেল রেস্তোরা ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। মেঘলাস্থ পর্যটন কমপ্লেক্স হলিডে ইন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন হতাশ কন্ঠে বলছিলেন ভাই বড়ই দুর্দিন যাচ্ছে। পরপর হরতাল অবরোধ এবং সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পর্যটক না আসায় ব্যবসা লাটে উঠেছে। কোন রুমেই অতিথি নেই। কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে পারছিনা। ঠিকমতো বেতন দিতে না পারায় অনেককে ইতোমধ্যে ছাঁটাইও করেছি। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।
গত ঈদুল-আযহার পর থেকেই বিভিন্ন দাবী আদায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর টানা হরতাল-অবরোধের কারণে ভ্রমন পিপাষু মানুষ পর্যটন শহর বান্দরবানে আসা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে এখন এক প্রকার পর্যটক শূন্য বান্দরবান শহর। পর্যটক কেন্দ্রিক ব্যবসাগুলোতে এখন হাহাকার। রাস্তাাঘাটে স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কোন লোক সমাগমই নেই। খালি পড়ে আছে বিলাসবহুল হোটেল,মোটেল, রিসোর্টগুলো।
পর্যটকদের পদচারনায় মুখর থাকার এই সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় চরম হুমকিতে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত হোটেল গ্রীনহিলের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস যাবৎ আমার হোটেলে অতিথি নেই বললেই চলে। টানা হরতাল-অবরোধে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এখানকার পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। কোটি টাকার এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার উপক্রম। নিরাপত্তাহীনতা এবং দেশব্যাপী রাজনৈতিক উদ্বেগ উৎকন্ঠার কারণে মানুষ বের হতে চাননা। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে বান্দরবান শহরের ফিষ্ট রেষ্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাৎ উর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা টানা হরতাল অবরোধে দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সাধারণ মানুষ বের হতে পারছেনা। আমরা এখানকার পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে লোকসান গুনছি। এভাবে চলতে পারেনা। রাজনৈতিক দলগুলোর আরও সহনশীল হওয়া দরকার।
পর্যটকদের কেন্দ্র করে বান্দরবান শহরে গড়ে উঠেছে নানা ছোট বড় ব্যবসা। রেন্ট এ কার, পাহাড়ীদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ছোট ছোট দোকান, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আশপাশে পসরা সাজিয়ে বসা দোকানী, পাহাড়ের ভাঁজে তৈরি কটেজ ব্যবসাতেও এখন লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা।
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের কাউন্টারম্যান শহীদুল আলম বলেন, মেঘলাতে এই সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সমাগম হবার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে কোন পর্যটক নেই। আমরা সম্পুর্ন বেকার সময় কাটাচ্ছি।
এদিকে পর্যটক না থাকায় বেকার সময় পার করছেন যানবাহন মালিক শ্রমিকরাও। শহরের বাসষ্টেশন সংলগ্ন জিপ ষ্টেশনে গিয়ে দেখা যায় সারি সারি গাড়ী পড়ে রয়েছে। যাত্রী নেই। রেন্টএ কারের ড্রাইভার আলী জানান, হরতালের কারনে বেশ কিছুদিন যাবত পর্যটক নেই তাই ভাড়াও নেই। আমরা এখন বেকার হয়ে পড়ছি। অনেকে গাড়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে গাড়ী বিক্রি করতে চাইছে। আগে এই সময়ে আমরা দৈনিক হাজার টাকা কামাই করতাম। এখন ধার দেনা করেও চলতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর শামীম হোসেন বলেন, প্রশাসন পরিচালিত পর্যটন স্পটগুলোকে অপরুপ সাজে সাজিয়েছিলাম কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটন মৌসুমে পর্যটকের আগমনকে বাধাগ্রস্থ করেছে। রাস্তাঘাটের নিরাপত্তার অভাবে মানুষ ঘর থেকে বের হতে চাননা। আগামী দিনগুলো আরো খারাপ যেতে পারে। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকলে বান্দরবানে এবার সর্বোচ্চ পর্যটকের আগমন ঘটতো। আমরা এখন সুদিনের অপেক্ষায় আছি।