শিরোনামঃ

স্মরণীয় ১০ নভেম্বর এবং এমএন লারমা’কে নিয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখার বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া শান্তিদেব চাকমা

কাল ১০নভেম্বর, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ৩১তম মৃত্যু বার্ষিকী। প্রতি বছরই দিবসটিকে ঘিরে জেএসএস (সন্তু) ও জেএসএস (লারমা) উভয় দলই কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। নিজেদের মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার উত্তরসূরী হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উভয় দলের মধ্যে প্রাণপন প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়। লারমা নিঃসন্দেহে তখনকার সময়ে তাঁর সমসাময়িকদের Manabendra Larma-মধ্যে ছিলেন সবচে’ অগ্রসর ও অগ্রণী। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে এটা বলা দরকার, কতকক্ষেত্রে তাঁর সীমাবদ্ধতাও ছিল, যা এখানে আলোচনার বিষয় নয়। গুণাবলী-সীমাবদ্ধতা সব মিলিয়ে তিনি তাঁর সময়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর যতটুকু সম্মান-মর্যাদা প্রাপ্য, তা তিনি পাবেন অবশ্যই। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাকে যোগ্য সম্মান দেবার পাশাপাশি অন্য বীর শহীদেরও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে স্মরণ করা উচিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ পর্যন্ত জেএসএস কর্তৃক লারমার সহযোগী উক্ত বীর শহীদদের সম্মানার্থে অনুষ্ঠান আয়োজন তো দূরের কথা, তাদের নামও গুরুত্বসহকারে উল্লেখিত হয়নি।
অথচ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্বরণে অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে এক সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে জেএসএস বলতে গেলে অশোভন রকমের প্রতিযোগিতা করেছিল, সে তিক্ত স্মৃতি তিন সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের মনে থাকার কথা। জেএসএস-এর পাল্টাপাল্টি মনোভাবের কারণে সে সময় পর পর ২/৩ বছর দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ি উপজেলাতে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। তাদের কারণে শহীদ ভরদ্বাজ মুুণি ও কল্পনা অপহরণের প্রতিবাদ কর্মসূচি কার্যতঃ ভ-ুল হয়ে গিয়েছিল।
এখানে সঙ্গত কারণে এটাও স্মরণ করা প্রয়োজন যে, জেএসএস-এর সংগ্রামের আগেও এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশী বীরত্বব্যাঞ্জক ও গৌরবোজ্জ্বল। সে লড়াইয়ে শের দৌলত খাঁ ও রণু খাঁসহ বেশ ক’জন জাতীয় বীর ছিলেন, যাদের এ অঞ্চলের জনগণ আজও গর্বভরে স্মরণ করেন। জাতীয় বীর শহীদদের সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের কারোরই হীনমন্যতা থাকা উচিত নয়।
প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার স্মরণে অনেক কর্মসূচি পালিত হলেও তার ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী (২০০৭) উপলক্ষ্যে জেএসএস-এর পক্ষ থেকে “শ্রদ্ধাঞ্জলি মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা” নামে এক ফর্মার পুস্তিকা প্রকাশ ও প্রচার মনে পড়লে আজও যুগপৎ হতবাক ও মর্মাহত হতে হয়। উক্ত পুস্তিকার প্রবন্ধ নিয়ে আজ পর্যন্ত (সাত বছরেও) জেএসএস বা লারমার অনুসারী বলে পরিচয়দানকারী কারো পক্ষ থেকে কোন সংশোধনী দেয়া হয় নি, সঙ্গত কারণে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, উক্ত পুস্তিকায় প্রকাশিত বক্তব্যের সাথে জেএসএস (সন্তু) বা জেএসএস (লারমা) উভয়ই একমত, নয়ত উভয় গ্রুপ উক্ত পুস্তিকার নিবন্ধটির মর্মার্থই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি, তা-ই বা কী করে হয়, যা আরও বেশী বিস্ময় ও সংশয়ের সৃষ্টি করে।
সে কারণে ২০০৭ সালে লারমার ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকীতে প্রকাশিত “শ্রদ্ধাঞ্জলি” পুস্তিকা নিয়ে কিছু কথা বলার প্রয়াস পাচ্ছি। আমার কথা হলো, লারমাকে তাঁর কাজের স্বীকৃতি পাইয়ে দেবার জন্য কেন উকিল ধরতে হবে? তাও আবার সৈয়দ আবুল মকসুদের মত একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেব মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে প্রশংসা না করলে কী লারমার এত আত্মত্যাগ পানিতে পড়বে, অবদান স্বীকৃতি পাবে না, বৃথা যাবে? আবুল মকসুদ লারমাকে প্রশংসা করেছেন বলেই কী লারমা ‘বড় জাতীয় নেতা’ হয়ে গেলেন, প্রশংসা না করলে তা হতেন না, কোন হীনমন্যতাবোধ বা মতলব থেকে তা করা হয়েছে, সেটাই ভাবতে অবাক লাগে। পার্বত্য চট্টগ্রামে লড়াই-সংগ্রামে লারমার ভূমিকার নৈর্ব্যক্তিক পর্যালোচনা এখনও হয়নি। তবে আগামীতে তা হতে বাধ্য। তা না হলে জনসংহতি সমিতি ও শান্তিবাহিনীর বর্তমান অবস্থাকে সঠিকভাবে বোঝা যাবে না। লারমা যে বীজ বপন করে গিয়েছিলেন, সে বীজটিই পরে বৃক্ষ হয়ে ফল দিয়েছে এবং দিচ্ছে এখনও! সে-ই বৃক্ষের ফল ভোগকারী জনগণ অবশ্যই লারমার যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন “আমার কষ্ট হয়, তার (লারমার) রাজনীতি ভিন্ন পথে না গেলে তিনি বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে একজন বড় ও দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হতে পারতেন। সে যোগ্যতা তার পুরোপুরি ছিল। ……তিনি সংসদীয় রাজনীতি থেকে চরমপন্থী রাজনীতিতে না গেলে………….”। (মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা : শ্রদ্ধাঞ্জলি, ২০০৭) আবুল মকসুদ সাহেব খুব ধূর্ততার সাথে লারমাকে প্রশংসা করে লারমার বুকে ক্ষুর চালিয়ে বলতে গেলে তাঁর হৃদপি- কেটে দিয়েছেন। এটাকেই বলে ‘ওপরে তুলে আছাড় মারা’। কোন কিছুকে জোরে আছাড় মারতে হলে ওপরে তুলতে হয়, আবুল মকসুদও তাই করেছেন। লারমার আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়াকে তিনি “চরমপন্থী রাজনীতি” বলে নাকচ করে দিয়েছেন। এখানেই আবুল মকসুদ সাহেবের লারমাকে প্রশংসা করার আসল উদ্দেশ্য ধরা পড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন এসে যায়, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানি, জেনারেল জিয়াউর রহমান, কর্ণেল তাহের, কর্ণেল নূর-উজ্জামানসহ বাংলাদেশের ১১ জন সেক্টর কমান্ডারসহ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কি চরমপন্থী ছিলেন? হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরোচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা একেক জন বীরোত্তম, বীর বিক্রম………ইত্যাদি খেতাব লাভ করেছিলেন। আর অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিচালিত জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আত্মগোপন করাকে তিনি “চরমপন্থী রাজনীতি” আখ্যা দিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এটা কোন ধরনের মানদ-? এক নিপীড়িত জাতি অস্ত্র হাতে তুলে নিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়, খেতাব লাভ করে, তাদের নামে দেয়া হবে জিন্দাবাদ ধ্বণি। আবার আরেক নির্যাতিত জাতি নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রামে অবতীর্ণ হলে তা হবে “চরমপন্থী রাজনীতি”!!! যা শাসকগোষ্ঠীর বিবেচনায় ‘গুরুতর অপরাধ’, সে পথ ‘সর্বতোপায়ে পরিত্যজ্য’, সে পথের যাত্রীরা ‘সন্ত্রাসী’ ‘দুষ্কৃতকারী’ ‘বিপথগামী যুবক’–ইত্যাদি আরও কত কী!!! আবুল মকসুদ স্পষ্টতই বাঙালি শাসকগোষ্ঠীর চোখ দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার রাজনীতিকে বিচার করেছেন, সে কারণে লারমার আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়া তার বিচারে “চরমপন্থী রাজনীতি”। রাজাকাররাও তো সেভাবে বিচার করত, মুক্তিযোদ্ধাদের বিবেচনা করত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চোখ দিয়ে।
জনসংহতি সমিতি হয় আবুল মকসুদদের নিবন্ধটির মর্মার্থ উদ্ধার করতে ব্যর্থ, নয়ত তারা লারমার অনুসৃত রাজনীতির মূলোচ্ছেদ করে দিতেই আবুল মকসুদকে দিয়ে এই নিবন্ধটি লিখিয়েছে। তা না হলে জেএসএস (সন্তুগ্রুপ) কোন উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য আত্মঘাতি এ কাজ করতে গেলো? জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মত পরিচিত ব্যক্তিকে আহ্বায়ক হিসেবে খাড়া করে বাস্তবত ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী পালনের নামে লারমার অনুসৃত রাজনীতিকে যার পরনাই অসম্মান করা হয়েছে। পুস্তিকার শেষে জুড়ে দেয়া হয়েছে নামের একটি দীর্ঘ তালিকা, যাদের অনেকে স্ব স্ব সমাজে পরিত্যক্ত ঘৃণিত ও সংগঠন কর্তৃক বহিঃষ্কৃত, এটিকে জাতীয় কমিটি বলে গালভরা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অথচ লক্ষ্যণীয় যে, চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেএসএস কর্তৃক কোন কমিটি গঠন বা কর্মসূচি দিতে দেখা যায় না।
আবুল মকসুদ গঙদের লারমা বন্দনার আসল উদ্দেশ্যও হচ্ছে প্রতিবাদী ধারার রাজনীতি থেকে তরুণ যুব সমাজকে বিযুক্ত করা। তাদের চিন্তা চেতনা ভোঁতা করে দিয়ে সুবিধাবাদী ধান্দাবাজ স্বার্থপর বানানো। আরো পরিষ্কার ভাষায় বললে বলতে হয়, তরুণ যুব সমাজকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র দিকে ঠেলে দিয়ে তাদেরকে শাসকগোষ্ঠীর জালে আটকে ফেলা ।
কথার কথা, ’৭৫ সালে তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লারমা আন্ডারগ্রাউন্ডে না গিয়ে যদি মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করতেন, তাহলে কী হতো? নিঃসন্দেহে তাঁর নামও মন্ত্রী-উপদেষ্টা হিসেবে স্থান পেতো সুবিমল দেওয়ান, বিনয় কুমার দেওয়ান, উপেন্দ্রলাল চাকমা, কল্পরঞ্জন চাকমা, দীপঙ্কর তালুকদার, মণি স্বপন দেওয়ান ও বীর বাহাদুরদের তালিকায়। তিনি পাহাড়ি জনগণের জাতীয় নেতা ‘আজকের লারমা’ হতে পারতেন না। তাঁকে যেভাবে এখন সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়, সেভাবে করা হতো না। লারমার সময়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি তো একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন। কিন্তু তিনি কী করতে পেরেছেন ? ন্যাপ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তাঁর মান-মর্যাদা খুইয়েছেন, রেলমন্ত্রী হয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। ’৭৫ সাল থেকে ’৯০-এ এরশাদ সময়কাল পর্যন্ত দেশে কার্যত সামরিক শাসনই ছিল। তখনকার পরিস্থিতিতে উপেন্দ্রলাল চাকমা জনপ্রিয়তা অর্র্জন করেও এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে নিজের অবস্থান ক্ষুন্ন করেছিলেন, রূঢ় শোনালেও এটি হচ্ছে সত্য।
বাঙালি শাসকগোষ্ঠীর চোখ দিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও লারমাকে বিচার করে আবুল মকসুদ সাহেব তো রীতিমত জেএসএস-এর একজন বিরাট উপদেষ্টা হয়ে বিভিন্ন সভা মঞ্চে আসন অলঙ্কৃত করে যাচ্ছেন! তার বিতর্কিত লেখা নিয়ে কোন সংশোধনী তার ব্যক্তিপক্ষ কিংবা জেএসএস-এর কারো পক্ষ থেকে পাওয়া যায় নি। সবচে’ বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে এই, যারা আগে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার রাজনীতি মত-পথকে সমালোচনা করত, এমনকী যারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার কারণে জেএসএস কর্তৃক ‘দুলো’ দালাল হিসেবে চিহ্নিত ছিল, সে সব ব্যক্তিরা একেক জন এখন জেএসএস (সন্তু)-এর নিকট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাদের নিয়ে সন্তু লারমা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ১০নভেম্বর মৃর্ত্যু বার্ষিকীর নানা অনুষ্ঠান পালন করেন। লারমার সম্মানে শুধু একদিন ফুল দিয়ে, গলাবাজি করে কিংবা লেখা (গল্প ফেঁদে) লিখে নিজেদের অতীত কর্মকা- আড়াল করে সে সব চিহ্নিত ব্যক্তিরা একেক জন বিরাট দেশপ্রেমিক সংগ্রামী সেজেছে, যা বাংলাদেশের কলুষিত রাজনীতির পার্বত্য চট্টগ্রাম সংস্করণ। অন্যদিকে যারা লারমার অনুসৃত পথ ধরে তার সাথে আন্দোলন করেছিলেন এবং এখনও আন্দোলন করেছেন, তারা জেএসএস (সন্তু) কর্তৃক হিট লিস্টের তালিকায় স্থান পেয়েছেন, অবিভক্ত জেএসএস-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর চাকমাকে তো প্রাণ হারাতে হয়েছে। জেএসএস-এর আরও অন্য শীর্ষ নেতাদেরও খুনের জন্য গুপ্ত ঘাতক লেলিয়ে দেয়ার অভিযোগ বারে বারে উত্থাপিত হচ্ছে। লারমাকে “চরমপন্থী” আখ্যায়িত করে এবং আন্দোলনরত তার সহযোগীদের নির্মূলের কর্মসূচি গ্রহণ করে সন্তু লারমা আসলে কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিযুক্ত? ১৯৮২ সালে যে প্রশ্ন ও বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, নিজ কর্মকা-ের মাধ্যমে সন্তু লারমা তার ব্যাপারে যে সন্দেহ সংশয় আবারও জাগিয়ে তুলেছেন।

 

লেখকঃ- শান্তি দেব চাকমা, কেন্দ্রীয় নেতা, ইউপিডিএফ।

 

লেখাটি লেখকের একান্ত ব্যাক্তিগত।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 967 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen