শিরোনামঃ

শ্র্রদ্ধায় স্মরণে সকলের প্রিয় মাহবুব ভাই

মাহাবুবুর রহমান আর নেই । বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে তিনটায় বিদ্যুৎ গতিতে ছোট্ট তিন শব্দের এই বাক্যটি রাঙামাটি বাসীর মাঝে যে শোকের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা যখন এই লেখাটি ছাপা হবে তখন পরের দিন শুক্রবার রাঙামাটি বাসী প্রস্তুত থাকবেন তাঁকে চির বিদায়ের জন্য,। অপেক্ষায় থাকবেন জানাযায় অংশ নেয়ার জন্য। হাজার হাজার জনগন যখন তাঁকে শেষ বারের মতো এক Mahbub pic copyনজর দেখার জন্য থাঁর চারপাশে ভীড় করবেন তখন তিনি অন্য জগতের বাসিন্দা। যদিও বা শারীরিক ভাবে তখনো তিনি আমাদের মাঝে তবে পরপারের স্থায়ী ঠিকানা তাঁর জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে।
মাহবুবুর রহমান সবার কাছে যার পরিচয় মাহবুব ভাই হিসাবে। সদা হাস্যজ্বল, সজ্জন, বিনয়ী এই মানুষটি চির বিদায় নিয়েছেন বৃহস্পতিবার দুপুরের শেষ লগ্নে। কাউকে কোন কিছু বুঝতে না দিয়েই হঠাৎ করেই চিরবিদায় নিলেন তিনি (ইন্নাল্লিাহি——- রাজেউন)। ইহজগতের সকল হিসাব নিকাশ শেষ করে তিন চলে গেলেন পর পারে। সৃষ্টির সেরা জীব প্রতিটি মানুষকেই একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে এটি সৃষ্টিকর্তার বিধান হলেও মাহবুব ভাইয়ের হঠাৎ করেই চলে যাওয়ার এই শোক তাঁর প্রিয় জন হতে তাঁর সকল শুভাকাংীরা অনেক দিন বয়ে বেড়াবেন। যে ব্যাক্তিটি সর্বদা অপরের সূখ , দুঃখ কিংবা অসুখ বিসুখের খবর নিতেন তিনি নিজেই তাঁর চিরবিদায়ের বেলায় কাউকে তাঁর চিকিৎসার সূযোগ দিলেন না।
মাহবুবুর রহমান তিনি কি ছিলেন সে কথা আজ আর বড় বিষয় নয় তিনি কি ছিলেন না সেটাই এখন ভাবার বিষয় কেননা তাঁর অকাল ও অকস্মাৎ মৃত্যুতে রাঙামাটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বিশাল শূণ্যতার সৃষ্টি হলো সেই শূণ্যতা কিভাবে পূরন হবে তা কেউ জানে না। মাহবুব ভাইয়ের সব চাইতে বড় পরিচয় তিনি নিজেই । আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে আমৃত্যু সর্ম্পৃক্ত থেকে তিনি রাঙামাটির রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে তিনি সবার কাছে ছিলেন গ্রহন যোগ্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ন সহ-সভাপতি । পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হওয়ার পর শুরু থেকেই তিনি ছিলেন পরিষদের সদস্য। রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে তিনি একাধিকবার এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রাঙামাটি জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি সহ অসংখ্য সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। রাঙামাটি জেলা স্কাউটস এর কমিশনার, রাঙামাটি শিশু নিকেতনের সহ-সভাপতি হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। রাঙামাটি পাবলিক কলেজের প্রতিষ্ঠা লগ্নেও তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় উদ্যোক্তা।
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সথেও তিনি ছিলেন জড়িত । সবচাইতে বড় একটি পরিচয় ছিল মাহবুব ভাইয়ের যা তিনি খুব বেশী একটা প্রচার করতেন না এর ছিলেন প্রচার বিমুখ। তিনি ছিলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় রাঙআমাটির মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক । রাঙামাটি থেকে ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম যে দলটি পাশ্ববতৃী দেশ ভারতে সশস্্র প্রশিক্ষনের জন্য গিয়েছিলেন মাহবুব ভাই সেই দলেন একজন ছিলেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধার তালকায় তিনি তঁর নাম উঠাননি। সভ্রান্ত পরিবরে জন্ম নেয়া বিপুল বিত্ত বৈভরে মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠা মাহবুব ভাই কখনো অহংকারী ছিলেন না, ছিলেন সবার কাছে মাটির মানুষ। পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ববান এই ব্যক্তিটি কখনো তাঁর বিশাল পরিচিতিকে সম্বল করে কোন সূযোগ সুবিধা ভোগ করেননি।
বৃহস্পতিার দুপুরে বাসায় এসে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বাসায় যখন একটু বিশ্রাম নেব ভাবছি তখন রমযান ভাইয়ের মোবাইল ফোনে খবর পেলাম মাহবুব ভাই এর মৃত্যুর খবর। তাঁর পরামর্শে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে অবস্থান করা অপর বন্ধু প্রিয় এর কাছে টেলিফোন করে নিশ্চিত হলাম মাহবুব ভাই হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছাতে পারেননি। পথিমধ্যেই তিনি মৃত্যুবরন করেছেন। বিলম্ব না করেই ছুটে গেলাম হাসপাতালে প্রিয় মাহবুব ভাইকে এক নজর দেখার জন্য। ততক্ষনে হাসপাতাল থেকে এফপিএবির এ্যাম্বুলেন্স করে মাহবুব ভাইয়ের নিথর দেহটির যাত্রা শুরু হয়েছে নিজ বাসভবনের দিকে। এ্যাস্বুলেন্সের জানালার ফাক দিয়ে এন কজর দেখলাম মাহবুব ভাইকে। স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়া মাহবুব ভাইকে দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল কিছুক্ষণ আগেই তিনি পরপারে পারি জমিয়েছেন। হাসপাতাল এলাকা তখন শত শত মানুষের ভীড়ে পরিপূর্ণ। আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মী সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ , মাহবুব ভাইয়ের বন্ধু মহল, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের লোকজনের ভীড় ঠেলে মাহবুব ভাইয়ের নিথর দেহ যখন তাঁর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো তখন পুরো হাসপাতাল এলাকা জুড়ে বেদনাময় পরিবেশের সৃষ্ঠি হয়।
মাহবুব ভাইকে বহন কারী এ্যাম্বুলেন্সের সামনে ও পিছনে শত শত মোটর সাইকেলের মধ্যে আমিও একটি মোটর মাইকেলের পিছনে চড়ে এ্যাম্বুলেন্সের ঠিক পিছনে তার এই যাত্রায় সামিল হই। মাহবুব ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগৈর অফিস যখন এ্যাম্বুলেন্স অতিক্রম করে তখন ঘড়ির কাটায় বিকাল ৩ টা ৫১ মিনিট। তার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় সময় তিনি যেখানে পার করেছেন। আওয়ামীলীগ কার্যালয় যখন অতিক্রম করছি তখনি স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠে বিভিন্ন সভা সমাবেশ এবং প্রেস কনফারেন্সের মাহবুব ভাইয়ের সরব উপস্থিতির চিত্র। মাহবুব ভাইকে একটি বারের জন্য হলেও এই কার্যালয়ে আনা হবে যেখানে তার কফিনের উপর পুষ্প বৃষ্টি পড়বে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অঙ্গনের সহযোদ্ধাদের অশ্রুশিক্ত নয়নে তাঁর চির বিদায় নিশ্চিত করা হবে। তবে সেই সময় মাহবুব ভাইয়ের বস্থান এই জগৎ থেকে যোজন যোজন দূরে চলে যাবে।
স্কুল জীবনের ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই দেখেছি প্রিয় মাহবুব ভাইকে। সুঠাম দেহের অধিকারী ,সুন্দর চেহারার মাহবুব ভাই রাঙামাটির সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনেও পরিচিতমুখ ছিলেন বিধায় ছোট বেলা থেকেই তার সান্নিধ্যে আসার সূযোগ পেয়েছিলাম । পরবর্তীতে মাহবুবুব ভাইয়ের সাথে একসাথে কাজ করেছি এখানকার স্কাউটিং এর উন্নয়নে। ১৯৯৬ সালে রাঙামাটি শিশু নিকেতনের সহকারী শিক্ষক হিসাবে যখন যোগদান করি সেই সময় মাহবুব ভাই ছিলেন শিশু নিকেতন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি। সেই সুবাদে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠতার পরিধিও বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে পেশাগত জীবন সাংবাদিকতার সুবাদে তাঁর ঘনিষ্ঠজনের মধ্যে একজন হওয়ার সূযোগ পাই ।

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় বিটিভির একটি রিপোটিং প্রস্তুত করার জন্য মাহবুব ভাইয়ের একটা ইন্টারভিউ গ্রহন করতে হয়। সে সময় বিটিভির এই ইন্টারভিউ প্রদানের কাজে তিনি যে সহযোগিতা করেছিলেন তা সব সময় স্মরন থাকবে । আমার ব্যক্তিগত জীবনে অসুস্থ্যতার সময়ও তিনি সব সময় আমার খবরা খবর নিতেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি আমার শারীরিক অবস্থার খবরা খবর রাখতেন। আজ একথা ভাবতে খারাপ লাগছে এই কারনে যে আমি তাঁর শাররীক অবস্থার কোন খবর নিতে পারলাম না বলা যায় তিনি আমাদের কোন সূযোগ দিলেন না।

 

                                                                                                       মোঃ মোস্তফা কামাল
                                                                                                            সিনিয়র সাংবাদিক
                                                                                                                 অধ্যক্ষ
                                                                                                   রাঙামটি শিশু নিকেতন।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 637 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen