সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশে সিং এমপি বলেছেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক কথা থাকতে পারে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে কি হয় নাই এই বির্তকে না জড়িয়ে আমাদের উচিত সকল পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এবং সরকারসহ চুক্তির পক্ষগুলোকে এক সাথে কাজ করা। চুক্তি বাস্তবায়ন অনেকাংশে হয়েছে এটা যেমন সত্য তেমনি চুক্তির কিছু অংশ বাস্তবায়ন হয়নি এটাও ঠিক। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া তাই এটা আজ হোক কাল হোক বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শিক্ষা বৃত্তি বিতরন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশী সময় ধরে ছিল, ২৪টি বছরের সমস্যা সমাধানে অনেকে অনেক ধরনের আলাপ আলোচনা করেছেন কিন্তু বিশ্বাস আর আস্থার সংকটের কারনে সেই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। সে সময় পাহাড়ী বাঙ্গালী হানাহানি আর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অনেকের বাবা ভাই বোন প্রান হারিয়েছিলো। আওয়ামালীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সনের ২রা ডিসেম্বর শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার কারনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাই বলব বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন চুক্তির বাকি অংশগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই, উনাদের (জেএসএস) আঞ্চলিক দল তারা চুক্তি করেছেন তাদের কথা থাকতেই পারে। আমরা চুক্তি অনুযায়ী অনেকগুলো বিভাগ জেলা পরিষদগুলোতে হস্তান্তর করেছি। পাহাড়ের মুল সমস্যা হচ্ছে ভুমি সেটা নিয়ে মন্ত্রনালয়গুলো কাজ করছে, ভুমি নিয়ে আইন মন্ত্রনালয়, ভুমি মন্ত্রনালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয় কাজ করছে ইতিমধ্যে ভুমি কমিশন আইন সংশোধিত আকারে কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে পরে এটি সংসদে পাশ করা হবে। এরমধ্যে ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। এগুলো হয়ে গেলে সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না এমন কথা হয়ত উনারা জেএসএস) বলবে না। উনারা জানেন আমরা কেউ বসে নেই কাজ করছি প্রধানমন্ত্রী চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক। আমার মনে হয় আমরা উভয়-ই যে লক্ষ্য নিয়ে চুক্তি করেছি এটা হয়ত সময়ে কোন কোন ক্ষেত্রে ঢিলে হচ্ছে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আগাচ্ছে কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কোন কার্পন্যে নেই।
চুক্তি বাস্তবায়নের ধারা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার শান্তি চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেটা মুল সমস্যা ভুমি সেটার আইন সংশোধন হলে কাজ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অনেকগুলো বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে। কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে এগোতে থাকবে।
অসহযোগ আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা তো একটা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসুচী থাকতে পারে। তারা সরকারের সাথে বসেন তো। আমাদের সম্মানীত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়োজনে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমার সাথে কথা বলেন। যদি দুই মেরুতে থাকতেন তাহলে বসতেন না আলাপও করতেন না। উনারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তো কথা বলছেন যে বিষয়গুলোর গতি কম সেটাকে কিভাবে গতিশীল করা যায় সে সব বিষয়ে নিয়ে কথা বলছেন আমরাও আলাপ করছি। সব কিছু পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের আওতায় নেই বিভিন্ন মন্ত্রনালয়কে সাথে নিয়ে আমি এবং সচিব সাহেব কাজ করছি আমরা কেউ বসেনি পুরো টীম কাজ করছে।
ইউএনডিপির কার্যক্রম বিষয়ে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, একসময় ইউএনডিপি নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করত কিন্তু আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইউএনডিপিসহ দাতা সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হলে তাদের প্রকল্পগুলো পার্বত্য মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং জেলা পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাঙামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ের মানুষ গরীব ইচ্ছা থাকা সত্বেও নিজেদের সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না তাই প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারনে মেডিকেল কলেজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এক সময় তো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না কার্যক্রম শুরু হয়েছে আস্তে আস্তে একাডেমিক ভবনসহ সব কিছু হবে। কোন সমস্যা থাকলে আমরা সেটি আলাপ আলোচনা করে সমাধান করব , অনেক কঠিন সমস্যাও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে।
আমরা সরকার এবং জনসংহতি সমিতি যারা শান্তির পক্ষের মানুষ তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে একটা প্লাট ফর্মে আসতে হবে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে তাহলে সমৃদ্ধিশালী পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে তোলতে পারব অন্যথায় আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে।