শিরোনামঃ

লোড শেডিং নয় লোড ম্যানেজমেন্টের নামে বিদ্যুৎ এখন রাঙ্গামাটি বাসীর দুর্ভোগ : মোঃ মোস্তফা কামাল

খুব আশায় বুক বেঁধে ছিলেন রাঙ্গামাটি বাসী। পবিত্র রমযান মাসে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচ্চ র্পযায় থেকে যে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে অন্তত রমযান মাসে বিদ্যুৎ এর দুর্বিসহ অবস্থা Mostafa55 copyথেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু বরাবরের মতোই র্দুভাগ্য রাঙ্গামাটি বাসীর। কেন না তাদের আশা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে ।বিগত কয়েক বছরের পবিত্র রমযান মাসের চাইতে এ বছরের রমযান মাসে সর্বাধিক বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে রাঙ্গামাটিতে। রাঙ্গামাটি জেলার প্রেক্ষাপটে বলা যায় রাঙ্গামাটি বাসীর জন্য এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট দুর্র্র্বিসহ হলেও দুই একটি উপজেলা বাদে অন্যান্য উপজেলার জনগনের জন্য এটি চরম দুর্বিসহ।
এবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে রমযান মাসের শুরু হয়েছে বিধায় রাঙ্গামাটি বাসী বিশেষ করে রোযাদার দের কাছে বিদ্যুতের স্বস্তির বাতাস পানি সরবরাহ নিয়মিত ছিল পরম কাঙ্খিত । রমযানের ইফতারের সময় একটু ভাল পরিবেশে ইফতার, একটু স্বস্তিতে তারাবির নামাজ আদায়, ভোররাতে সেহেরী সম্পন্ন্ এ টুকুই ছিল রাঙ্গামাটি বাসীর প্রত্যাশা। কিন্তু প্রথম রোযা থেকে শুরু করে শেষ রোযা পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে রাঙ্গামাটি বাসীর এই প্রত্যাশা কি নিদারুন ভাবে হতাশায় পরিণত হয়েছে। এই দুর্ভোগ ছিল কল্পনার বাইরে। দিনে রাতে মিলে কি সেহেরী, কি ইফতারি, কি তারাবি , কি দিন আর কি রাত প্রতিদিন কতবার যে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়েছে রাঙ্গামাটি বাসী তা খোদ বিদ্যুৎ অফিসের পরিসংখ্যানে আছে কিনা সন্দেহ ।

রাঙ্গামাটিতে এবার রমযান মাসে নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কতটুকু আন্তরিক ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক মাস বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পবিত্র রমযানের সভায় ও বিদ্যুৎ বিভাকে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জন্য অনুরো জানানো হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এখানকার বিদ্যুৎ বিভাগ শতভাগ আন্তরিক ছিল না । দিনে রাতে মিলে ১০ হতে ২০ বার বিদ্যুৎ যাওয়া আমার ঘটনার কোন সদুত্তর বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। অত্যাবশ্যকীয় সেবাদান কারী একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই ধরনের দায় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিগত ১ মাসের বিভিন্ন স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকার খবরের দিকে চোখ বুলালে দেখা যাবে পবিত্র রমযান মাসে বিদ্যুৎ এর দুঃসহ যন্ত্রনার কথা সবচাইতে বেশী এসেছে রাঙ্গামাটির নাম। অর্থাৎ বিদ্যুতের যাওয়া আসার খেলায় রাঙ্গামাটি দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে এগিয়ে, এটি কি আমাদের জন্য সুখবর নাকি লজ্ঝার খবর কে জানে ?

সামান্য বাতাস কিংবা বৃষ্টির বড় ফোটা পড়লেই রাঙ্গামাটি বাসী বুঝে যায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সময় এসেছে। বিদ্যুৎ না থাকলে অনেক কষ্ট করে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হলে প্রচলিত উত্তর কখনো কাপ্তাই কিংবা হাটহাজারী লাইন ফল্ট করেছে কিংবা কোথাও বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ পড়েছে। অপেক্ষা করুন ফল্ট খোজা হচ্ছে বিদ্যুৎ পাবেন। আশায় থাকে রাঙ্গামাটি বাসী।

গত ১২ জুলাই একটি দৈনিকের পত্রিকায় প্রথম পাতায় কিদ্যুৎ এর দুর্বাস্থার চিত্র নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে বিদ্যুৎ বিভাগের স্থানীয় র্শীষর্কতা ব্যক্তির বক্তব্যের একাংশে বলা হয় রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ না থাকাটা লোড শেডিং নয় লোড ম্যানেজমেন্ট।বিদ্যুৎ বিভাগের এই কর্তা ব্যক্তির বক্তব্যে আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিমোহিত। কেননা আমরা লোড শেডিং নামক যন্ত্রনার বাইরে নিঃসন্দেহে সুখবর। তবে লোড শেডিং মুক্ত হলেও আমরা লোড ম্যানেজমেন্টের কবলে। এ যেন মরার উপর খরার খা।

লোড ম্যানেজমেন্ট নামক নতুন যন্ত্রনার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাহের এই র্কমর্কতা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেখা যায় রাঙ্গামাটি বাসীর চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হলে বিদ্যুৎ এর লোড ক্যাপাসিটি নেয়া সম্ভব হয় না । ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগের র্কতা ব্যক্তির এই জবাব তার কারিগরী জ্ঞানে ভিত্তিক হলে ও আমার মতে অজ্ঞ ব্যক্তির কাছে কেমন যেন ধোরাশায় সৃষ্টি করেছে।

বিদ্যুৎ বিভাহের নির্বাহী প্রকেীশলী পদবী ধারী এই কর্তাব্যক্তি তার বক্তব্যে আরো একটি হতাশার কথা শুনিয়েছেন তা হচ্ছে লোড ম্যানেজমেন্ট এর দুর্বিসহ অবস্থা নিরসনে এখানে ১৩২ কেভির একটি সাবষ্টেশন নির্মান করতে হবে। নতুবা লোড ম্যানেজমেন্ট ম্যানেজ হবে না। আর এই সাব ষ্টেশন স্থাপনের কোন কাজ এখন অবদি শুরু হয়নি। কাজ শুরু করতেই দু এক বছর লেগে যাবে। অর্থাৎ লোড শেডিং এর কবল থেকে রাঙ্গামাটি বাসী মুক্ত হলেও লোড ম্যানেজমেন্ট এর কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে না। সোজা কথায় যেই লাউ সেই-ই কদু। অতএব রাঙ্গামাটি বাসী প্রস্তুত হোন।আরো বিদ্যুৎ বিভ্রাট সহ্য করার জন্য উপায় নেই “গোলাম হোসেন”। নতুবা বিদ্যুতের উপর ভরসা না করে আলোর জন্য কেরোসিরে প্রদ্বীপ আর বাতাসের জন্য তাল পাতার পাখা মজুদ করুন। আর যদি টাকা থাকে তাহলে সোলার প্যানেল বসান । তবে এটা ভাবার অবকাশ নেই যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়মিত না হলেও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মাত্রা কমে আসবে । এটি বরঞ্চ বাড়বে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এই র্শীষ কর্তা পরার্মশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য। অব্যশই মূল্যবান পরার্মশ। একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া।

তবে এই প্রসঙ্গে বছর কয়েক আগে রাঙ্গামাটি জেলার আইন শৃংখলা কমিটির একটি সভায় জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সম্পাদক হাজী মোঃ কামাল উদ্দিন এর একটি অভিযোগ উদাহরন স্বরুপ উপস্থাপন করা যায়। সে দিন অভিযোগের সুরে তিনি বলেছিলেন রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ এর অপচয়ের কথা। বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য মতে যা সিষ্টেম লস। আর এই সিষ্টেম লসের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ সরাসরি দায়ী। যারা অবৈধভাবে হিটার ব্যবহার করেন ,মিটার ফিক্সিং করে নিজের পকেট ভারী করেসন এর ফলে গুটি কয়েক গ্রাহক অবৈধ সুবিধা পেলেও অধিকাংশ গ্রাহক দুর্ভোগে পড়ে।

বিদ্যুৎ বিভাগ রাঙ্গামাটির বিদ্যুৎ ম্যানেজমেন্ট এর কিছু চিত্র রাঙ্গামাটি বাসীর কাছে খুবই পরিচিত। মাসের একাধিক সময় বিদ্যুৎ লাইন মেরামত কিংবা লাইনের আশে পাশের গাছপালা কাটার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা কিদ্যুৎ লাইন বন্ধ রাখা হয়।এটি ম্যানেজমেন্ট লোড।তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কিছু র্কমকান্ড নিঃসন্দেহে প্রশ্নের সৃষ্টি করে তারা কি আদৌ লোড শেডিং কিংবা লোড ম্যানেজমেন্ট এর কবল থেকে রাঙ্গামাটি বাসীকে মুক্ত রাখার জন্য আন্তরিক।

প্রসঙ্গের বাইরে একটি ছোট্ট ঘটনার অবতরন করা এখানে প্রয়োজন, অতি সম্প্রতি রির্জাভ বাজারের শুটকি পট্টী এলাকায় ১১ হাজার কে ভি বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে পড়ায় লাইনে স্পৃস্ট হয়ে একজন ব্যবসায়ীর করুন মৃত্যু হয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর অভিযোগ র্পাশ্ববর্তী যে খুটি থেকে এই তার ছিড়ে পড়েছে সেখানে সন্ধ্যা থেকে স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছিল এবং এই বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে একাধিকবার তাগাদা দেয়া হয়েছিল কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সন্ধ্যার পর রাত গড়িয়ে যখন চূড়ান্ত ভাবে বিদ্যুৎ লাইনটি ছিড়ে একজনের মৃত্যু হলো সেদিন সকালে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বাহিনী এসে ছিলেন কি দুঃখ জনক ব্যাপার। অথচ বিপরীত চিত্র ও আছে । মাস খানেক আগেই প্রথমে শুটকি পট্টি এবং পরে রিজার্ভ বাজার টেক্সী ষ্টেশস এলাকায় দুইটি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেলে বিদ্যুৎ বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যক্তিরা বিনয়ের সাথে জানিয়ে দেন ট্রান্সফরমার আসতে সময় লাগবে। অতএব বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হবে কয়েকদিন।কিন্তু এর পরেই ঘটে চমৎকার ঘটনা স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে হাজার বিশেক টাকা চাঁদা তুলে তা দেয়া হয় বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজনের কাছে আর সাথে সাথে যোগাড় হয়ে যায় ট্রান্সফরমার।বিকল্প ট্রান্সফরমারে আবার আলোকিত হয় এই এলাকা। টাকার বিনিময়ে ট্রান্সফরমার বসানেসর এই অভিযোগও দীর্ঘদিনের। বিষয়টি আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।

ফিরে আসি লোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে, বিদ্যুৎ বিভাগ একটি কারিগরী বিভাগ বিধায় কারিগরী জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিরাই এই বিভাগের দাযিত্বে। কাজেই লোড ম্যানেজমেন্ট কিংবা সিষ্টেম লস ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করতে হয় সেটি তারাই ভালই জানবেন। যার বিভাগ সবার আগে দায়িত্ব তার আর নিজ বিভাগের ম্যানেজমেন্ট যদি তারা নিজেরাই করতে না পারেন তাহলে ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন এমন দক্ষ লোকদের দায়িত্বে আনা দরকার। বিদ্যুৎ বিভাগের লোড ম্যানেজমেনের অদক্ষতায় রাঙ্গামাটিবাসী দিনকে দিন দূর্ভোগ পোহাবে।তা মেনে নেয়া যায়না।তাই লোডশেডিং, সিষ্টেম লস, কিংবা লোড ম্যানেজমেন্ট যে কারনেই হোক না কেন এই সব দোহাই দিয়ে রাঙ্গামাটি বাসীকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে আর রাখবেন না।

পরিশেষে একটি ছোট কৌতুকের কথা বলে শেষ করা, শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন বলতো হাত কয়টি ও কি কি? ছাত্রের উত্তর স্যার হাত ৩টি ডানহাত, বামহাত আর অজুহাত। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এই দুর্বিসহ যন্ত্রনা থেকে রাঙ্গামাটি বাসীকে মুক্তির পিছনে নতুন কোন অজুহাত দেখাবেন না। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি এটি বিনীত অনুরোধ।

(লেখক একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 633 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen