মেডিকেল কলেজে বাঁধা আসবে এই কথা কল্পনাতেও আনতে পারেননি মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোঃ নাসিম। যেখানে অন্যান্য জেলা গুলোতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সেখানকার মন্ত্রী , এম.পি সহ জনপ্রতিনিধিরা সরব সেখানে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজের যাত্রা লগ্নে বাঁধা তিনি কল্পনা করেননি।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ বিষয়ে ঢাকায় গত ১৭ ফেব্রয়ারি অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের এই চম্বুক অংশ টুকু পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এবং স্থানীয় দৈনিক গুলোতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ বিষয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সে বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই । তবে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের াগ্যে কি ঘটে সে বিষয়ে পরবর্তীতে জানা যাবে কেননা এই মেডিকেল কলেজ নিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপট কারো অজানা নয় । গত ১০ জানুয়ারি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে রাঙামাটির সেই সব অনাকাংখিত ঘটনাগুলো দেশ এবং দেশের বাইরে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্ঠি করেছে । এখন সেই সব বিষয়ের পূনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দৃশ্যপটে আনার জন্য এখানকার স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু ঘটনা তুলে ধরা প্রয়োজন । এই সব ঘটনা অনেকের কল্পনার বাইরে হলেও রাঙ্গামাটি বাসীর কাছে এইসব ঘটনা এখন অনেকটা স্বাভাবিক ।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের জনগনের স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকারের আমলেই গেল বছরের শেষ দিকে প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয়েছে এবং পদায়নকৃত স্থানে চিকিৎসকদের নূন্যতম পক্ষে দু বছর দায়িত্ব পালনের বাধ্য বাধকতা প্রদান করা হয়েছে। তবে অবাক হওয়ার বিষয় হলো এই যে জেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন গুলোার স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহে এখনো এই সব চিকিৎসকদের দেখা পায়নি স্থানীয় লোকজন। এমনি সংশ্লিস্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা দেখা পাননি এই সব চিকিৎসকদের। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় কর্মস্থলে এই সব চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির বিষয়টি বারং বার আলোচিত হলেও অবস্থার পরিবর্তন আসেনি। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে সরকারী বিধি নিষেধকে উপেক্ষা করে এই সব চিকিৎসকদের নতুন কর্মস্থলেও বদলীর কথা ও শোনা যাচ্ছে । এটা কি কল্পনা করা যায় ?
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন যারা সরকারী চিকিৎসক এবং সপ্তাহের কর্ম দিবস গুলোতে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগীদের চিকিৎসা করবেন এটিই তাদের দায়িত্ব । তবে আম্চর্যজনক হলেও সত্য যে এই সব সম্মানিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গন এর মাস হয় ৮ অথা ১০ দিনে । আর বেতন পান পুরো মাসের । অর্থ্যাঃ এই সব সম্মানিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন সপ্তাহে দুই অথা তিন দিন কর্মস্থলে আসেন আর বাকী দিন গুলোতে চট্টগ্রামেই থাকেন । আর সেখানেই নিজস্ব চেম্বারে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কর্মস্থলে উপস্থিতির এই চিত্রটি গত কয়েক বছর যাবৎ ধরে হয়ে আসলেও কোন প্রতিকার পায়নি রাঙামাটি বাসী । এটি কি কল্পনা করা যায় ?
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল রাঙামাটি বাসীর চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ স্থান হলেও এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোয়া পায়নি এখনো । আধূনিক চিকিৎসার কোন যন্ত্রপাতিই এখানে নেই বললেই চলে । এখানে কর্মরত চিকিৎসকগন তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীদের রেফার করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । চিকিৎসকরা কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে চান না কেননা দ্রুত গতিতে রোগ নিরুপনের কোন ব্যবস্থাই এই হাসপাতালে নেই । এর ফলে এই হাসপাতালের সবচেয়ে বড় ব্যবস্থা পত্র রেফা টু চিটাগাং । যেখানে জেলা সদরের হাসপাতালের এই অবস্থা সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র গুলোর কি অবস্থা হতে পারে সে বিষয়ে কি কিছু চিন্তা করার অবকাশ আছে ?
বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি করনারী ইউনিট চালু করেছিলেন । অথচ এই বনের উদ্বোধনের পর ৫ বছরের ও অধিক সময় পার হলেও এখানে কোন যন্ত্রাপাতি সরবরাহ করা হয়নি । করনারী ইউনিট রয়ে গেছে বিল্ডিং সর্বস্ব । এটি কি ভাবা যায় ?
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ নিয়ে তাঁর যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেটির অবসান অবশ্যই হবে। যারা মেডিকেল কলেজের বিরোধীতা করছেন তাদের সাথে সরকারের ফলপ্রসূ অলোচনার মাধ্যমে একটি ইতি বাচক সমাধান হবে — এই বিষয়ে পার্বত্য বাসী আশায় আছেন।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ নিয়ে এখন পক্ষ-বিপক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। হয়তবা এ সময় এই সবের অবসান হবে। তবে রাঙামাটি পার্বত্যবাসীর ন্যুনতম চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত কল্পে সকলে ঐক্যমত হবেন এবং এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় কল্পনা করা যায় না। এসন বিষয় গুলোর প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি গোচর হবে — এমন প্রত্যাশায় রয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বাসী। কথায় আছে সংশ্লিস্ট মন্ত্রী মহোদয় যে সব জেলায় যান সেসব জেলার সংশ্লিস্ট বিভাগ গুলোতে কিছুটা হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। দুই মেয়াদে বর্তমান সরকারের ৬ বছরের ও অধিক সময় পার হলেও এখানে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আগমন ঘটেনি । তাই হয়তবা এখানকার স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিও হয়নি ।
লেখক একজন সংবাদকর্মী
Pingback: Aggasre Bhikkhu