সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অধীনে ৯ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ২২ মে শুক্রবার এবং আজ ২৬ মে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং রাতে ফলাফল দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের নিজস্ব আইন ভেঙ্গে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৩টি আলাদা বোর্ড গঠন করে তড়িঘড়ি করে দুপুরের মধ্যে ৯০টি পদের বিপরীতে ২০৮জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়।
পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগের নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মচারী নিয়োগ প্রবিধানমালা ২০০০ অনুসারে নিয়োগ কমিটির প্রধান থাকবেন চেয়ারম্যান, অন্য সদস্যরা হলেন- মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের আহবায়ক, ৩জন পরিষদের সদস্য (এর মধ্যে ২জন উপজাতীয় ১জন বাঙ্গালী), পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের একজন প্রতিনিধি এবং সদস্য সচিব থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান।
কিন্তু রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে প্রবিধানমালা অনুসরন না করে নিয়োগ কমিটি ৩টি বোর্ড গঠন করে একই সময়ে মৌখিক পরীক্ষা নেয়। ৩টি বোর্ডের মধ্যে ১ম বোর্ডটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এটিতে সদস্য হিসেবে জেলা পরিষদ সদস্য সাধন মনি চাকমা এবং পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহম্মেদ ছিলেন। তারা লংগদু ৫৬জন, নানিয়ারচর ১২ এবং কাউখালী ৩জন মোট ৭১জনের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহন করেন।
২নং বোর্ডের প্রধান ছিলেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য মুছা মাতব্বর এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী। তারা বাঘাইছড়ি ৩৩জন, রাজস্থলী ২৫ এবং ৯ মোট ৬৭ জনের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহন করেন।
তৃতীয় বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের শিক্ষা কমিটির আহবায়ক অং শু প্রু চৌধুরী, এতে সদস্য ছিলেন চান মুনি তংচঙ্গ্যা এবং পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি সিনিয়র সহকারী সচিব নুরুল ইসলাম। তারা সদর উপজেলা ২১জন, বরকল উপজেলা ৪৩জন এবং বিলাইছড়ি উপজেলার ৬জন মোট ৭০জন থেকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহন করেন।
অনেকের মতে জেলা পরিষদ আইনে একটি মাত্র কমিটির কথা বলা হয়েছে এবং এতে নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে থাকার কোন সুযোগ নেই, কিন্তু জেলা পরিষদ মুল যাচাই বাছাই কমিটিকে ৩ বোর্ডে ভাগ করায় এটি এখন অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। জেলা পরিষদে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এরকম বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কোন অফিস আদেশ নেই, কেবল মৌখিক সিদ্ধান্ত বলেই ৩টি বোর্ড গঠন করে পরীক্ষাগুলো নেয়া হয়েছে। আর এতে করে জেলা পরিষদ তার নিজস্ব আইন সে নিজেই লংঘন করেছে।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের একজন প্রাক্তন সদস্য জানান, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে একেক দিন একেক উপজেলার দিনক্ষন ঠিক করে মৌখিক পরীক্ষা নিতে পারত। কিন্তু এভাবে আলাদা করে বোর্ড গঠন করে একই দিন একই সময় পরীক্ষা নেয়ায় পরীক্ষাটি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এতো তাড়াহুড়ো করে সব করতে হবে কেন? এটি কি আদৌ পরীক্ষা নাকি নামমাত্র আই ওয়াশ, সেটি এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীদের অনেকে বলেন, পরীক্ষায় শতভাগ প্রশ্নের সঠিক উত্তর লেখার পরও তাদের রোল নম্বর উত্তীর্ণ তালিকায় স্থান পায়নি। অপরপক্ষে যারা লিখতে না পারিনি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তাদের নামে পূর্ণ প্রশ্নোত্তর সম্বলিত খাতা জমা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ঘুষ, দলীয় ও আত্মীয়করণের আশ্রয়ে যাদেরকে পূর্বেই বাছাই করা হয়েছে তাদের রোল নম্বর নিশ্চিত করে উত্তীর্ণ তালিকার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে জামায়াত শিবির প্রার্থীর রোল নম্বরও উত্তীর্ণ তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এছাড়া বরকলসহ কয়েকটি উপজেলার কিছু পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভুয়া স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন এবং চুড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হওয়ার অভিযোগ করে তাদের ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়ে চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করা হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী বলেছেন, প্রত্যেক পদে ৩ প্রার্থীকে রাখা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার হিসাব নিয়ে এমনটি হয়েছে। তিনি নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রশ্নে বলেন, সেসব অভিযোগ নিয়ে তার কিছুই জানা নেই। কিছু হয়ে থাকলেও সেখানে তাদের করার কোনো কিছু নেই। কেননা, এসব নিয়োগে তাদের ভূমিকা শুধু কেরানির মতো। জেলা পরিষদ প্রবিধান মালার বিষয়ে তিনি জানান, আমি নতুন জেলা পরিষদের আইনে কি আছে সেটি ভালোভাবে বলতে পারব না।
জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে কয়েকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে জেলা পরিষদে প্রত্যেক নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবাদহীতার স্বার্থে জেলা পরিষদের নিয়োগ ও বাছাই কমিটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি রাখার দাবী উঠেছে ।
Pingback: Sushil Chakma