শাহ আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। হাইকোর্টের রায়ের পরেও যুদ্ধাপরাধী চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ে নামে বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে একটি অংশ ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামফলক অপসারণে আপত্তি করেছেন রাঙামাটি জেলা দুনীতি প্রতিরোধ কমিটি ও ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মায়াধন চাকমা।
রাঙামাটি জেলার জুলাই মাসের আইন শৃঙ্খলা সভায় আজ রোববার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আপত্তি জানান।
গত ২২ই মে ২০১৭ইং তারিখে রাঙামাটি থেকে সকল স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত চাকমা (রাজা) সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায়ের নাম ৯০ দিনের মধ্যে মুছে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ত্রিদিব রায়ের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সচিব, এলজিআরডি সচিব, শিক্ষা সচিবসহ সংশিষ্টদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তারই প্রক্ষিতে গত জুলাই মাসে জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে জেলা প্রশাসক রাজা ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বলপিয়ে আদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নাম করণের বিষয়ে বিদ্যালয়টির কমিটির সাথে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে পত্র পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। কিন্তু রায়ের ৯০দিনের কাছাকাছি হলেও রাঙামাটির বনরূপায় চাকমা (রাজা) সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায়ের নামে কোন স্থাপনা এখনো পরিবর্তন করা হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বনরুপাতে এখনো দোকানগুলোর সাইন বোর্ড, এলাকার নাম ত্রিদিব নগর নামটি রয়ে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পত্র পাঠানোর বিষয়ে বলেন, জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি বিদ্যালয়টির কমিটির সাথে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে যে চিঠিটি দিয়েছে, আমার কাছে যে কাগজটি রয়েছে সেখানে বলা আছে, বিদ্যালয়টি রাজা ত্রিদিব রায়ের নামে নাম করণ করা হয়নি। বিদ্যালয়টি ত্রিদিব নগর নামে নাম করণ করা হয়েছে। রেজুলেশনে বিদ্যালয়টি রয়েছে বিদ্যালয়টি কোন ব্যক্তির নামে নয়। তাই বিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তনে তারা বাধা প্রদান করছে।
রাজা ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মায়াধন চাকমা এই বিষয়ে তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমার প্রশ্ন ত্রিদিব হলেই কি যুদ্ধাপরাধী হয়? ত্রিদিব নাম হতেই পারে। ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে রাজাও উল্লেখ নাই, রায়ও উল্লেখ নাই। তাহলে বিদ্যালয়টি রাজার নামে কিভাবে হলো? যদি রাজার নামে হয় তাহলে আমরা রেজুলেশন নিয়ে আসতাম। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় একজন গুণী ব্যক্তি, সম্মানিত ব্যক্তি, চাকমাদের প্রদীপ। সেই হিসাবে আমরা জানতাম। ওনাকে স্মরণ রাখার জন্য এই ধরনের কোন কথা বার্তা আমাদের রেজুলেশনে আসে নাই। আপনারা যাচাই করেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখেন। ত্রিদিব নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামটি পূর্বে থেকেই ছিল। একটি এলাকার অনেক নাম থাকতে পারে। সুতারাং বিদ্যালয়টি একটি জায়গার নামে নামকরণ করা হয়েছে। কোন ব্যক্তির নামে নয়। বিদ্যালয়টির নামকরণের সময় সমাজের সকলকে নিয়ে এলাকার নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেহেতু এলাকারটির নাম ত্রিদিব নগর। তাই আমাদের দাবি ও এলাকার মানুষের দাবি বিদ্যালয়টি যেই নামে আছে, সেই নামেই থাকুক।
এসময় অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ডাঃ প্রকাশ কান্তি চৌধুরী’র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু এমপি। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ, উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে প্রবীণ সাংবাদিক ও রাঙামাটি জেলার মুক্তিযোদ্ধার সংগঠক সুনীল কান্তি দে বলেন, আমি মনে করি, এভাবে হাই কোর্টের রায়কে নিয়ে মশকরা করার কোন মানে হতে পারে না। ত্রিদিব নগরে চাকমা রাজা ছিলেন একজনই। তিনি হলেন, চাকমা (রাজা) সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায়। তার বিরুদ্ধে কোর্টে রায় হয়েছে। তিনি একজন স্বাধীনতাবিরোধী। তার নামে কোন স্থাপনা বা নামফলক থাকবে না। এখানে কারো হস্তক্ষেপ করা হাই কোর্টের রায় অবমাননার সামিল। তিনি জেলা প্রশাশনের প্রতি হাই কোর্টের রায়কে অতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
হাই কোর্টের রায়ের পর পর রাঙামাটি বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ হাই কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক চাকমা রাজাকার রাজা ত্রিদিব রায়ের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাসহ এই রাজাকারের নামে থাকা সড়কের নামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম অবিলম্বে পরিবর্তনের দাবিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের রায় অনুসরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পার্বত্য চট্টগ্রামের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
এসময় আইন শৃঙ্খলা সভায়, রাঙামাটিকে পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে পৌর এলাকার রাস্তার দুপাশে সকল ধরণের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও যান বাহন পার্কিং না করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র কারণে যে গাছ পড়ে গেছে কিংবা ঝুকিতে রয়েছে সেসব গাছ, জনমাল রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নিজ দায়িত্বে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আইন শৃঙ্খলা সভায়, কাঁচা বাজার যাতে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে তদারকি করার সকল নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসন।