মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় সভানেত্রীর অনুষ্ঠানে লোক সমাগম দেখে অন্তরের ক্ষত বোঝা যাবে না। বুঝতে হলে আপনাকে যেতে হবে পথে প্রান্তরে যেখানে, যেখানে বিএনপি জামাত সরকার বিরোধী সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আগেরকার দিনে আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন রাজপথে থাকতো। ইদানিং থাকছে না এবং আগামী দিনে আরো থাকবে না। এর কারন -আমরা নিজেরাই নিজেদেরকেই ক্ষত বিক্ষত করেছি ভয়াবহ অর্ন্তদ্বন্দের মাধ্যমে।
সারাদেশে মন্ত্রী- উপদেষ্ঠা -এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়রগণ একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ সংঘাতে জড়িয়ে এক বহুমূখি সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরী করে দলকে প্রায় নির্জিব করে ফেলেছে। এই স্থান থেকে রাতারাতী ঘুরে দাড়ানোর উপায় দলীয় প্রধানই জানেন।
সরকারের অরাজনৈতিক ও অযোগ্য মন্ত্রীগুলো ক্ষতি করছেন সবচেয়ে বেশি। কোন এলাকার যে কেউ এসে তাদেরকে একটু তোষামদ করলেই তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিকে বাদ দিয়ে এমন সব কর্মকান্ড করে বসেন যাতে করেই এলাকার দলীয় শৃঙ্খলা বলতে কিছু থাকে না। কয়েকজন মন্ত্রীর প্রত্যক্ষ মদদে গত এক বছরে সারাদেশে দলীয় হানাহানি মারাত্নকভাবে বেড়েছে। সেই সব অযোগ্য মন্ত্রীরা তাদের নিজেদের এলাকায় যেমনি অজনপ্রিয় তেমনি জাতীয় পর্যায়ে চরমভাবে ঘৃনিত এবং সমালোচিত বটে। এই অবস্থায় তাদের হতাশার আগুন তারা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের সেই সব এলাকায় যেখানে আওয়ামী লীগ তুলনা মুলকভাবে ভাল অবস্থানে ছিলো। দলীয় প্রধান এই সর্বনাশা খেলার ইতি কথা জানেন কিনা তা আমি বলতে পারবো না।
এই প্রসঙ্গে আমার নিজের এলাকার উদাহরনটি টানছি। বাংলাদেশের ২/১ টি সংসদীয় আসনে যদি আওয়ামী লীগের ১০০ ভাগ জয়লাভের নিশ্চয়তা ছিলো তার মধ্যে আমার এলাকাটির নাম আসতো সর্বাগ্রে। কিন্তু ২ জন মন্ত্রীর কারনে গত ৩ মাসে পটুয়াখালী-৩ আসনের সেই সুদীন আর নেই। আমি যখন জেলে তখন গলাচিলা থানায় আমার বিরুদ্ধে ছিনতাই, ডাকাতি, দোকান লুটের বেশ কয়েকটি মামলা হয় ঐ মন্ত্রীদের সরাসরি নির্দেশে। প্রায় ২০০ নেতৃস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে- জড়ানো হয় সেইসব মিথ্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী হিসেবে। আমার ৫০ দিনের জেলবাসের সময় ঐ সব নেতৃবৃন্দ এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। তাদের পরিবার পরিজনের উপর নেমে আসে প্রশাসনিক নির্যাতন, হুমকি-ধামকী এবং সামাজিকভাবেও তারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হন।
আমি জেল থেকে বের হবার পর অনেককে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করেছি। অনেকে আবার ১০/১৫ দিন জেল খেটেছেন। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের সুরক্ষিত দৃষ্টিতে বিএনপি জামাতের লোকেরা বার বার হানা দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন। গত হরতালে তারা নজিরবিহীন তান্ডব চালিয়েছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে কারন আমি দলীয় কোন নেতাকর্মীকে মাঠ জমাতে পারছি না। তারা সবাই একই খোমী দিয়ে বলছেন- সরকারী দল করে বিনা দোষে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই মামলার আসামী হলাম, জেল খাটলাম আর এখনো পুলিশী হয়রানী হয়রানীর শিকার হচ্ছি! এর ওপর আবার বিএনপি জামাতের প্রতিরোধের ধকল সইবো কেমনে! বা কিসের জন্য!
আমি ওসির সঙ্গে কথা বললাম, ওসি বললো এসপির কথা, এসপি বললো মন্ত্রীর কথা, আর মন্ত্রী বললো…….। এই অবস্থায় আমি কি করতে পারি তা ভেবে পাচ্ছি না। এতো তো গেলো কেবল একটি এলাকার কথা- সমগ্র পটুয়াখালী জেলার সর্বত্র- পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। আর যদি বরিশার বিভাগের কথা বলি-তবে আপনারা আরো হতাশ হবেন।
কাজেই জননেত্রী তার সুযোগ্য পুত্র যদি সরকারের ক্ষমতার একক অর্থ্যাৎ এমপিগণকে জঞ্চালমুক্ত করে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার বলয়টি পাকাপোক্ত করার উদ্যোগ না নেন তবে কোন শুভফল আসবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।