সিএইচটি টুডে ডট কম।
পার্বত্য চট্রগ্রামে পুরুষের তুলনায় আদিবাসী নারীরা কর্মঠ ও পরিশ্রমী। তে-খামার থেকে শুরু করে হাটবাজার-অফিস-আদালত সর্বজায়গায় আদিবাসী পুরুষদের চেয়ে নারীদের পদচারণা বেশী। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী সমূহের জীবন জীবিকার েেত্র কর্মেেত্র জুম্ম নারীদের ব্যস্ততা এতই লণীয় যে- সেই কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি কর্মচাঞ্চল্যে জড়িত থাকে তারা।
ভোরে ঘুম থেকে পাহাড়ি ছড়া বা নদীর ঘাটে গিয়ে ডেকসি পাতিল মাজা-ঘষা, ব্যবহার্য ও খাবার পানি তোলা, চুলা জ্বালনো, রান্না-বান্না, সন্তান-সন্তুতি লালন-পালন ও দেখভাল করাসহ গৃহস্থালীর যাবতীয় কাজ সামলানোর পরও জুম ও েেত খামারের কাজ করতে হয় জুম্ম নারীদের। একই সঙ্গে বুনন কাজে পরিবারের সকলের জন্য চরকায় সুতা কেটে ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে কাপড় ও পোষাক তৈরীর কাজও তাদের। এছাড়া হাঁ-মুরগি, ছাগল, গরু, শুকরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি পালন করে নারীরা। যেন এক মূহুর্ত ফুরসৎ নেই তাদের। বলা যায় পরিবারের জীবন জীবিকার েেত্র পুরুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশী কাজ বর্তায় নারীদের ওপর। স্কুল-কলেজে পড়–য়া মেয়েদেরও পারিবারিক ও গৃহস্থালীর সব কাজে সহযোগিতা করতে হয়। পূজা পার্বন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সামজিকতায় সর্বেেত্র এদের উপস্থিতি ও অংশিদারিত্বও সর্বাধিক।
বর্তমানে জীবন জীবিকার তাগিদে তে-খামারে কিংবা জুম চাষে ফলিত ফসল এবং ুদ্র ও কুটির শিল্পে তৈরী পণ্যসহ বন-জঙ্গল হতে আহরিত লাকড়ি, তরি-তরকারি হাট-বাজারে বিক্রি করছে পাহাড়ি নারীরা। পাহাড়ি মহিলারা হাট-বাজারে এনে বিক্রি করছে শাক-সবজি, আদা, হলুদ, মরিচ এবং বিভিন্ন ফলমুল। শুধু গ্রামাঞ্চলের েেত্র নয়। শহরের চিত্রও একই। শহরের মধ্যবিত্ত, নিুবিত্ত আদিবাসী পরিবারের মেয়েরা ব্যস্ত সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে। চাকরির পাশাপাশি একই সঙ্গে সামলাতে হয় পারিবারিক ও গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ। আর যারা বেকার বা কম শিতি তারা পরিবারের আয়-রোজগারে এবং জীবন জীবিকায় ব্যস্ত হাঁস-মুরগি, গাভী, শুকর পালন, সেলাই, বুনন, মাশরুম চাষ ইত্যাদি কাজ নিয়ে।
কর্মেেত্র প্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিা েেত্রও পিছিয়ে নেই জুম্ম আদিবাসী মেয়েরা। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও শিা গ্রহণে এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে বহু পাহাড়ি মেয়ে উচ্চ শিা লাভ করে সরকারি, বেসরকারি দায়িত্বপূর্ণ পদবীতে কর্মব্যস্ত। এককালে শুধুমাত্র পূরুষরা হাটে বাজারে আসতো পণ্য বিকিকিনি করতে। হাটে বাজারে পাহাড়ি মেয়েদের যাতায়াত খুবই কম ছিল। কিন্তু পূর্বে যেখানে পুরুষরা ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহী ছিলেন না-বর্তমানে সেখানে শত বাঁধা-বিঘœ পেরিয়ে মেয়েরা এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে। যা ব্যবসা েেত্র নারীদের বর্তমান চিত্র ভিন্ন। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও হাটে বাজারে স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। বহু মেয়ে ঘরে বসে কাপড় তৈরী করে বিভিন্ন ভাবে বিক্রি করছে। কেউ কাপড় তৈরীর পাশাপাশি হাঁস-মুরগীর খামার, গরু-ছাগল পালন করে জীবন জীবিকায় এগিয়ে চলেছে। অনেক মহিলা স্থায়ীভাবে মুদির দোকান, তৈরী পোষাক, শাড়ী-জুতা-ব্যাগ, প্রসাধনী সামগ্রী, খাবার দোকান, অনেক ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। মোট কথা- জুম্ম মেয়েরা এখন আর ঘরে বসে নেই। যার যতটুকু সামর্থ্য স্বাধীনভাবে ছোট খাটো ব্যবসায় ব্যস্ত। এটা অনেকটা আত্ম উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম।