একবার ঘুরে এলে যেখানে আবারো যেতে মন চায়। আকাশ-মেঘ যেখানে ভ্রমন পিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। মেঘের সাথে পাহাড়ের যেখানে আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতির এমন বন্ধুত্ব যে কারো মন ভালো করে দেবে মুহুর্তেই।
মেঘ পাহাড়ের বন্ধুত্বের পাশাপাশি আপনিও হতে পারেন মেঘের বন্ধু। এখানে এলে মেঘ আপনাকে বন্ধু না বানিয়ে ছাড়বেনা। বলছি নীল গিরি পর্যটনের কথা।
এখানে পাহাড় ও মেঘের সাথেই বসবাস করে পাহাড়ি আদিবাসী ম্রো সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা। ম্রোদের জীবন ধারায় রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এরা যুগ-যুগ ধরে নিভৃতে বসবাস করছে দুর্গম পাহাড়ে।
সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২ হাজার ২ শত ফুট উচ্চতায় এই নীলগীরি পাহাড়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। এখানে থাকার জন্য রয়েছে মনোরম কটেজ এবং খাবার জন্য আধুনিক মানের রেঁেস্তারা।
কিভাবে আসবেন ঃ
সারা দেশের সাথে বান্দরবানের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম সড়কপথ। সড়ক পথে ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুর, কলাবাগান থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এসব ষ্টেশন থেকে এস.আলম, সৌদিয়া পরিবহণ, হানিফ পরিবহণ, ইউনিক সার্ভিস, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ, বি.আর.টি.সি, সেন্টমার্টিন , ঈগল পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করে থাকে। এসি এবং নন এসি উভয় বাসই বান্দরবান যাতায়াত করে। ভাড়া ৮শ থেকে ১ হাজারের মধ্যে।
সড়ক পথের যানজট এড়িয়ে আকাশ পথে আসতে চাইলে দেশের সব বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হয়েও বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা করা যায়। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট নামক বাসটার্মিনাল থেকে এবং রেলষ্টেশন সংলগ্ন বি.আর.টি.সি ষ্টেশন থেকে বান্দরবানে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাস সার্ভিস চালু আছে।
কোথায় থাকবেন?
বান্দরবানে এসেই আপনাকে কোন আবাসিক হোটেলে রুম নিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। শহরের মধ্যে বিভিন্ন দামের এসি/ ননএসি হোটেল পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত হোটেল থাকায় রুম পেতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে পর্যটনের ভরা মৌসুমে আগেভাগে বুকিং দিয়ে আসা ভালো। এখন বেশির ভাগ আবাসিক হোটেলের সাথেই খাবারের রেস্তোরা রয়েছে।
খাবার-দাবার সেরে রুমে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আপনি নীলগিরীর পথে রওনা হতে পারেন। নীলগিরী যাবার পথে শৈলপ্রপাত ঝর্নাও আপনি দেখে যেতে পারেন। এই এলাকায় নেমে ঝর্নার স্বচ্ছ জলে আপনি একটু মুখ-হাত ধুয়ে নিলে যাত্রা পথের ক্লান্তি অনেক কমে যাবে। স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের বিচিত্র জীবন প্রনালী উপভোগ করাটা হবে যাত্রা পথে অতিরিক্ত পাওনা।
শহরের রুমা বাসষ্টেশন থেকে বিভিন্ন চাঁদের গাড়ী, জীপ ইত্যাদি নীলগিরী পর্যটন কেন্দ্রে চলাচল করে। আপনাকে এসব গাড়ী রিজার্ভ করেই যেতে হবে গন্তব্যে। কারণ রিজার্ভ গাড়ীতে না গেলে আপনাকে পথে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। যা আপনার ভ্রমনের আনন্দকে ম্লান করে দিতে পারে। গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব গাড়ী ২-৩ ঘন্টা সময় নিতে পারে।
শহর থেকে চাঁদের গাড়ীগুলো নীলগিরী পর্যন্ত ৩/৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। এসব চাঁদের গাড়ীগুলো একসাথে ২০/২৫ জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করে।
নীলগিরী পৌঁছে আপনি সেখানে রাত যাপনও করতে পারবেন। এখানকার কটেজগুলো একটু ব্যয়বহুল। এখানকার প্রতিটি কটেজের ভাড়া রাতপ্রতি ৪/৫ হজার টাকার মধ্যে। আর থাকতে না চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে আবার বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।
নীলাচল ঃ
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুট উচ্চতায় এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে পরিচালিত নীলাচলের এই পাহাড়ি এলাকাটিকে অনেকে বাংলার দার্জিলিং বলে থাকেন।
এখান থেকে বান্দরবান শহরটি একনজরে দেখা যায়। সন্ধ্যায় মেঘমুক্ত আকাশে কর্নফুলী নদীর মোহনায় দাড়ানো অসংখ্যা লাইটারেজ জাহাজের আলোকছটা আপনার মনে এনে দেবে অপুর্ব তৃপ্তি। বিকেলের সুর্যাস্তের দৃশ্যও মন মাতানো।
যেভাবে যাবেন ঃ
বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, সিএনজি, মাহেন্দ্র, জিপ ইত্যাদি ভাড়ায় চলাচল করে এই রুটে। প্রতিটি চাঁদের গাড়ীর আসা যাওয়া ভাড়া ৫শত টাকা। অন্যান্য যানগুলো আলোচনা সাপেক্ষে।
কোথায় থাকবেন ঃ
নীলাচলে রাত্রি যাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে একটি রেষ্টহাউস আছে। বুকিংয়ের জন্য প্রশাসন থেকে আগাম অনুমতি নিতে হয়। রাত যাপন করতে না চাইলে শহরে ফিরেই যে কোন হোটেলের রুম বুকিং দেওয়া যায়।
শৈল প্রপাত ঃ
প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট হিমশীতল ও ঝর্নাটিতে সর্বদা পানি বহমান থাকে। এখানে স্থানীয় অধিবাসীদের হাতের তৈরী বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া যায়। বছরের যে কোন সময় এ ঝর্নার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য প্রকৃতি প্রেমী মানুষকে কাছে টানে।
এখানে বসবাসরত বম সম্প্রদায়ের বিচিত্র জীবনধারাও আপনার মনের ফ্রেমে বেধে রাখতে পারেন বহুদিন।
বুদ্ধ ধাতু জাদি ঃ
বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে বুদ্ধ ধাতু জাদি বা স্বর্ন মন্দিরের অবস্থান। এখানকার পাহাড়ের চুড়ায় দেবতা পুকুর নামে একটি পুকুর আছে। এই পুকুরকে ঘিরে অনেক কল্প কাহিনী প্রচলিত আছে। এখানে নির্মিত মন্দিরটি স্থাপত্য শিল্পের এক অনবদ্য সৃষ্টি।
চিম্বুক ঃ
শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দুরত্বে চিম্বুক পাহাড়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১৫শ ফুট। এ পাহাড় থেকে একই সাথে সুর্যোদয় এবং সূর্যোদয়ের অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। পাহাড়ের আশে পাশের বম ও ম্রো জনগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবন ধারাও উপভোগ করার মতো।
বগালেক ঃ
এটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাহাড়ের উপরে একটি লেক। প্রায় ১৫ একর জমির উপর এই লেকের অবস্থান। যার পানির উচ্চতা শীত কিংবা বর্ষা কখনোই পরিবর্তিত হয়না। লেকটি নিয়ে অনেক রুপকথা প্রচলিত আছে। অনেকেই এখানে ড্রাগনের অস্তিত্ব রয়েছে বলে মনে করে থাকেন।
কিভাবে যাবেন ঃ বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত বগালেক। সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সুন্দর। তবে বর্ষা মৌসুমে না যাওয়াই ভালো। বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ী ও জিপে বগালেক ভ্রমন করা যায়। ভাড়া ৭ হাজার টাকার মধ্যে। বগালেকে রাত্রি যাপনের জন্য জেলা পরিষদ নির্মিত একটি রেষ্ট হাউস আছে। তবে বুকিংযের জন্য আগে ভাগে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। রেষ্ট হাউস ছাড়াও বগালেকের আশে পাশের গ্রামে স্থানীয়দের তৈরি বিভিন্ন কটেজেও কম খরচে রাত্রি যাপন করা যায়।
রুমা বাজার এলাকার বাসিন্দারা বগালেকগামী পর্যটকদের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে।
রিপোর্টটি তৈরি করেছেন আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি রফিকুল আলম মামুন।
Pingback: Polin Roy Chakma
Pingback: Gbon Ahamad