শিরোনামঃ

পাহাড়ের সাধারন মানুষ রক্তক্ষয়ী সংঘাত চায় না

ফজলুর রহমান রাজন, রাঙামাটি। পাহাড়ের সাধারন পাহাড়ী জনগন রক্তক্ষয়ী ভ্রাত্বংঘাত সংঘাত আর দেখতে চায় না। সবুজ পাহাড় যেন কারো ভাই কিংবা বাবার রক্তে রঞ্জিত না হয় সে জন্য প্রয়োজনে আলাপ আলোচনার দাবী জানিয়েছে। অপহরন চাদাবাজি খুন পাল্টা অপহরন এসব বন্ধ করে সাধারন মানুষের নিরাপত্তার দাবী প্রদান দাবী উঠেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি অপহরন হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাধারন পাহাড়ী জনগন উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত হয়ে উঠেছে। প্রতি মুহুর্তে তারা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর দীর্ঘ দুদশকের বেশী সময় ধরে চলা সংঘাত বন্ধে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ বছরেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। পাহাড়ে বিবদমান দুটি উপজাতীয় গ্র“পের ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত কখনো পাহাড়ী বাঙালী দাঙ্গায় প্রতিনিয়ত সবুজ পাহাড় রক্তে লাল হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। কখনো আদিবাসী, কখনো বা বাঙালি অধিবাসীর তরতাজা প্রাণ ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। কারো ভাই কারো বাবা কারো স্বামী ভ্রাত্বঘাতি সংঘাতে প্রান হারাচ্ছে আর পরিবারগুলো হয়ে পড়ছে নিঃস্ব ও অসহায়, তাদের চোখের পানি বন্ধ করারও কেউ নাই। জীবনহানির আশংকায় ভয়্ওে কেউ মুখ খুলছেন না।5
সাম্প্রতিক সময়ে এবছর কয়েকটি ঘটনায় অপহরন পাল্টা অপহরন এবং হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাধারন মানুষসহ পুরো পার্বত্যবাসীকে নাড়া দেয়। পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে সংস্কার এবং ইউপিডিএফের আধিপত্যে বিস্তার লড়াইয়ে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। মুলত এলাকার আধিপত্যে বিস্তার ও চাদাবাজি নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে সংঘাত সংঘর্ষ চলছে।
গত ডিসেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত অপহরন ও হত্যাকান্ডের মত অপ্রতাশিত ঘটনা ঘটেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩ ডিসেম্বর ২০১২ রাঙামাটির সমতাঘাট থেকে সমতা স’মিলের একজন ম্যানেজারসহ ৩ জন বাঙালি শ্রমিককে অপহরণ; ২০ ডিসেম্বর কুতুকছড়ি থেকে এক বাঙালী হিন্দু ব্যবসায়ীকে অপহরণ, ১৬ জানুয়ারী ২০১৩ সুবলং ইউনিয়নের দিঘলছড়ি গ্রাম ১২ জন পাহাড়ী নারী অপহরণ; গত ৮ ফেব্র“য়ারি ২০১৩ রাঙামাটির কুতুকছড়ি এলাকা থেকে গ্রামীণফোনের ২ কর্মচারীকে অপহরণ, ১৬ ফেব্র“য়ারি কাট্টলি থেকে ৬৫ জনকে অপহরণ,৬ মার্চ ঘিলাছড়ি থেকে এক বিএনপি নেতার ছোটভাইকে অপহরণ সর্বশেষ টেলিটকের ৫জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে অপহরন ঘটনা কেবল পাহাড়ে নয় সারাদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
গত ১২ মার্চ জনসংহতি সমিতি সন্তু লারমা গ্র“পের হাতে সংস্কারের ৪জন নিহত হওয়ার ঘটনা অন্যতম। এর মধ্যে গত ১৬ ফেব্র“য়ারী ইউপিডিএফের ৬৫জন জেএসএস কর্মী অপহরন ও শর্তসাপেক্ষে ৯জনকে ছেড়ে দিয়ে ৫৬জনকে আটক রাখা এবং জেএসএস সংস্কারের সুদীর্ঘ চাকমাসহ ৪জনকে হত্যা করার ঘটনা সাধারন পাহাড়ী মানুষকে নাড়া দিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল ৪ নভেম্বর ইউপিডিএফের হাতে নিহত হয়েছেন জনসংহতি সমিতি সন্তু লারমা গ্র“পের মানিকছড়ি উপজেলার সাধারন সম্পাদক পেশকা মারমা। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে অনেকগুলো অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এই সব অপহরণ ঘটনার বেশিরভাগই ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে ইউপিডিএফ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। একইভাবে জনসংহতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ীদের পক্ষে থেকে ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত বন্ধে দাবী উঠলে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমা তাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের সাথে কিসের আলোচনা সরকারের উচিত তাদের নিষিদ্ধ ঘোষনা করা।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় ইউপিডিএফ জেএসএসের মধ্যে কয়েকবার সমঝোতার বৈঠকের উদ্যোগ নিলেও একটি পক্ষের অনমনীয় মনোভাবে কারনে তা বেশীদুর এগোতে পারেনি। বিষয়টি তিনি বলেন ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত কারো জন্য ভালো নয় আমি ব্যাক্তিগতভাবে নানাভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু সফল হতে পারিনি। এ সংঘাতের ফলে আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম অকালে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখনো আশাবাদী সমঝোতা হতে পারে। সমঝোতা হলে সবাইর জন্য মঙ্গল হবে।
জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেছেন, আমরা কখনো ভ্রাত্বঘাতি চাই না আমরা ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত বন্ধে সবাইকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করছি। ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত মানে হত্যাকান্ড মানবিধকার লংঘন এই হত্যাকান্ড বা মানবধিকার লংঘন আমরা মানতে পারি না। এই সংঘাতের কারনে সাধারন মানুষের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে তাদের দুর্ভোগ কষ্ট বাড়ে। সব পক্ষের কাছে আবেদন করব তারা যেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বন্ধে আলাপ আলোচনায় বসেন।
সংঘাতের বিষয়ে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা বলেছেন, আমরা সংঘাত সংঘর্ষ চাই না সরকারের মদদে জেএসএস পাহাড় জুড়ে সন্ত্রাস ও চাদাবাজি চালাচ্ছে সরকারই সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। আমরা বলেছিলাম চুক্তি অপুর্ন চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি আসবে না প্রয়োজন পুর্ন স্বায়ত্বশাসনের তারপরও আমরা চেয়েছি শান্তি চুক্তি বা আপোষ চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়নে কোন কর্মসুচী দিলে বলেছিলাম আমরা সমর্থন করব কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে কোন কর্মসুচী না দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে দমনে মেতে উঠেছে। আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত চাই না শান্তি চাই, যে যার মত গনতান্ত্রিক আন্দোলন করতে চাই কিন্তু জেএসএস পাহাড়ের মানুষের সাথে প্রতারনা করে সরকারের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে। সংঘাতে বন্ধে আমরা চেয়েছিলাম তাদের সাথে আলোচনা করতে তারাই আলোচনার টেবিলে বসতে চায় না। সাধারন মানুষ সমঝোতার পক্ষে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনসংহতি সমিতির একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত বন্ধের ব্যাপারে বললেন, কিসের সমঝোতা? সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা তো চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী করে বেড়ায়, অপহরন খুন তো এরাই করে তাদের সাথে আলোচনা করার প্রশ্নই উঠে না। বরং এরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে তখন ভাবা যাবে। আমরা অস্ত্রের রাজনীতি নয় গনতান্ত্রিক আন্দোলন করি।SAM_1325
পাহাড়ের জেএসএস মুল ধারা, জেএসএস সংস্কার এবং ইউপিডিএফ এই ৩টি দলই দাবী করেছে তাদের কোন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নেই অথচ বাস্তবতা হচ্ছে অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকতে সবাইর আর্মস গ্র“প আছে। সবাইয়ের হাতে জিম্মি পাহাড়ী বাঙ্গালী জনগন। তবে ভ্রাত্বঘাতি সংঘাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হন পাহাড়ীরা। একেক সময় একেক গ্র“প এসে তাদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন চালায়। সাধারন পাহাড়ীরা এখন ঐক্যর ডাক দিয়েছেন তাদের দাবী আলোচনা করে ভ্রাত্বঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে হবে। এজন্য সরকার বা যে কোন পর্যায় আলোচনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে অন্যথায় পাহাড়ীদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 383 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen