শিরোনামঃ

এবারো থাকছে না নারী প্রতিনিধি

পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধনীতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ

বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম। পার্বত্য ৩ জেলা পরিষদ আইনের পঞ্চম সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রী পরিষদে নীতিগত অনুমোদনের সংবাদে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও copyবান্দরবান জেলায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও এর সরাসরি বিরোধীতা না করলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় জনসংহতি সমিতি।
গত মেয়াদে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে পাঁচ বছর জুড়েই আইনটির সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর পরিধি বিস্তারের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা বাস্তবে রুপ পেলো গতকাল সোমবারই। তবে এ সংশোধনীতে সদস্য সংখ্যা বাড়লেও বাদ পড়েছে না নারী প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্তি’র বিষয়টি। অনির্ধারিত থেকে যাচ্ছে, চেয়ারম্যান-সদস্যদের পদ-মর্যাদা নির্ধারণের বিষয়টিও।
বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরটি প্রচার হবার সাথে সাথেই তিন পার্বত্য জেলার সদস্য মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা জোরে শোরে লবিং শুরু করেছেন।
একই সাথে পরিবর্তনের আভাস শোনা যাচ্ছে, বর্তমান ১ চেয়ারম্যান ও ৪ সদস্য বিশিষ্ট অর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদেরও।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আইনটির ১৬ (ক)-এর ২ নং উপধারাটি পরিবর্তন করে ১ জনকে চেয়ারম্যান করে সদস্য সংখ্যা ৪ জনের স্থলে ১০ জন করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে পরিষদের বর্তমান মনোনীত ‘অর্ন্তবর্তীকালীন’ অবস্থাটা পাল্টে নির্বাচন ছাড়াই পূর্নাঙ্গ অবয়ব দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চাইথোঅং মারমা’র পূর্নবহাল হবার সম্ভাবনা বেশী।
এছাড়া চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ে আছেন, জেলা আওয়ামীলীগের বর্ষীয়াণ নেতা মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা, পানছড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা এবং জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য বীর কিশোর চাকমা অটল।
সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে অ-উপজাতীয়দের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মোঃ কাশেম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শামছুল হক, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’র সাঃ সম্পাদক মোঃ শানে আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাঃ সম্পাদক মোঃ দিদারুল আলম ও মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ জব্বারের নাম।
পাহাড়ীদের মধ্যে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মংক্যচিং চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা কংজরী চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ক্রইসাঞো চৌধুরী, এড. আশুতোষ চাকমা, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র সাঃ সম্পাদক জুয়েল চাকমা।
বান্দরবানে বর্তমান চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ−া স্ব পদে বহাল থাকবেন। এর মধ্যে সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক, লক্ষ্মীপদ দাশ, লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক বাথোয়াইচিং মারমা, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাংলাই ¤্রাে, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক, রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী এবং সংরক্ষিত মহিলা এমপি’র পদ বঞ্চিত সুচিত্রা তঞ্চগ্যা’র নাম আলোচনার শীর্ষে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন প্রত্যাশা করছেন, দলের একাংশ। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা’র দলের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে।
এক্ষেত্রে পরিবর্তন হলে বর্তমান পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতা অংশ প্র“ চৌধুরী বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা, আওয়ামীলীগ নেতা অংশু চাইন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা এবং কেরল চাকমা’র নাম শোনা গেলেও সবশেষে নিখিল কুমার চাকমাই স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। কারন এরই মধ্যে তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন। অন্যদের ততটা গ্রহনযোগ্যতা নেই।
রাঙামাটি জেলা পরিষদে সদস্য পদে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ সোলায়মান, সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা আবু সৈয়দ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মৃণাল তঞ্চগ্যা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাঃ সম্পাদক নব কুমার চাকমা’র নাম শোনা যাচ্ছে। জেলা স্বেচ্চাসেবক লীগ নেতা মিন্টু মারমা, বরকল আওয়ামীলীগের নেতা মেনন রাখাইন, যুবলীগ নেতা স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জমিরউদ্দিন উল্লেখখযোগ্য।
তবে দীর্ঘদিন ধরে অনির্বাচিত মনোনীত ব্যক্তি ও দলনির্ভর পরিষদ ব্যবস্থাপনার ফলে বর্তমানে পরিষদগুলো অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাবে পরিষদগুলোতে ভর করেছে, ভয়াবহতম দলীয়-স্বজনকরণ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনী সংশোধন বিষয়ে বলেন, পার্বত্য চুক্তি উত্তর সময়ে ১৯৯৮ সালের প্রথম সংশোধনীতে পাহাড়ের মানুষের প্রত্যাশা ছিলো চুক্তি’র মূল চেতনাকে অক্ষুন্ন রেখেই সংশোধনী হবে। তাছাড়া নির্বাচন’র প্রত্যাশাও পুরোনো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি’র কোনটিই হয়নি।
সরকার তাঁর নিজের স্বার্থে দফায় দফায় আইনটির পরিবর্তন করছে এমন দাবী করে তিনি বলেন, পরিষদের চেয়ারম্যান সদস্যদের পদ-মর্যাদার বিষয়টিও উপেক্ষিতই থেকেছে।
ফলে বিশেষ আইন হিসেবে এটিকে গুরুত্বের বদলে সংশোধনী খড়গের মাধ্যমে দূর্বল করা হচ্ছে।
প্রবীন এই নাগরিক অভিযোগ করেন, ১৯৯৮ সালের সংশোধনীতে ৪২ নং আইনের ৪ নং উপ-ধারা সংশোধন করে পরিষদের কর্তৃত্ব খর্ব করা হয়েছে।
পার্বত্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, দীর্ঘদিন থেকেই সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর একটি রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত ছিলো। আর তাই আওয়ামীলীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে আসার অল্পদিনের মাথায় প্রস্তাবটি পার্বত্য মন্ত্রণালয় কেবিনেট সভায় পাঠানোর পর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বান্দরবানের নারীনেত্রী ও রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য ডনাই প্র“ নেলী বলেন, পার্বত্য চুক্তিতে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নারী প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও পরিষদ আইনের সংশোধনীগুলোতে তা গুরুত্ব পাচ্ছে না।
তবে এ প্রসঙ্গে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, নতুন করে প্রক্রিয়াধীন সংশোধনীতে নারী প্রতিনিধি রাখার আইনী বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সরকার গঠিতব্য ১ চেয়ারম্যান ও ১০ বিশিষ্ট পরিষদে নারী প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত।
সূত্রটি দাবী করেছে, আগামী অধিবেশনে বিলটি আইনে রুপান্তর হবার বিষয়টি চুড়ান্ত প্রায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ আইনের সংশোধনী প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক উদ্যোগ আখ্যায়িত করে বলেন, এটি বিল আকারে জাতীয় সংসদের অধিবশেন তোলা হবে। এবং আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই এটি কার্যকর হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা সদস্য বাড়ানোর বিষয় নিয়ে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রনয়ন এবং নির্বাচন না দিয়ে কেবল দলীয় সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কি এতে করে ঝামেলা বাড়বে। সংশোধনী প্রস্তাবটি চুক্তির সাথে সাংর্ঘষিক। এতে করে জটিলতা বাড়বে।
রাঙামাটি আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা উষাতন তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে সমন্বয় সাধন করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।
তবে শান্তি চুক্তির পর জনৈক ব্যাক্তির রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে সরকার সময় বাড়িয়ে জেলা পরিষদগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 2,151 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen