শিরোনামঃ

খাগড়াছড়ি’র সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা

নানা উন্নয়নমুখী কর্মসুচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাগড়াছড়িবাসীর জীবনমান পাল্টানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখব

সিএইচটি টুডে ডট কম,,খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেছেন,, ব্যবসা, ক্ষুদ্রশিল্প এবং পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে-Kujendra Lal Tripura (Khagrachari) 13-12-2013 খাগড়াছড়িবাসীর জীবনমান পাল্টানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। কারণ এই জেলার কৃষি, বাঁশ ও কাঠ, পাহাড়ীদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প এবং নান্দনিক পর্যটন ঐশ্বর্য্যকে কাজে লাগিয়ে বড়ো রকমের পরিবর্তনের দুয়ার খুলে দেয়া সম্ভব। 
রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বর্ণিল ভাষা-সংস্কৃতি আর জীবনাচারের জনপদ ‘খাগড়াছড়ি’। মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান-চাকমা-মারমা-ত্রিপুরা’র জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে দেশে-বিদেশে সমান পরিচিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। রাজনীতি আর সংঘাতময়তার জন্যও অনেকবার মিডিয়ার শিরোনাম ছিলো, এটিই। তাই এই জেলার মানুষের স্বপ্ন ও বাস্তবতা অনেক বেশী পরিপক্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শপথ গ্রহণের পর গত এক সপ্তাহ ছিলেন ঢাকাতেই। শুক্রবার রাতে তিনি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ফিরে ব্যস্ততার মাঝেই তিনি আগামী পাঁচ বছরে চলার পথের অগ্রাধিকার স্বপ্ন’র কথাগুলো প্রতিবেদককে বলেন।
নিজের করণীয় সর্ম্পকে তিনি বলেন, এর আগে বেশ ক’বছর পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ যেমন কাছ থেকে বুঝতে পেরেছি; তেমনি মানুষের অমিত সম্ভাবনাও জানা হয়েছে। তবে খাগড়াছড়ির সব শ্রেণী-পেশার মানুষই ব্যক্তি উন্নয়নের চেয়ে সামষ্টিক উন্নয়নে অধিকতর প্রত্যাশী।
তাই নিজের অবস্থান ও অভিজ্ঞতা থেকে মনে করছি, খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং তথ্য-প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সম্ভব। তাছাড়া প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার সময়োপযোগী আধুনিকায়ন, কারিগরী প্রশিক্ষনকে প্রয়োগের সুযোগ এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীর দিকে আমাদের সরকারেরও বিশেষ মনোযোগ রয়েছে।Kujendra-1
তিনি পার্বত্য এলাকার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দায়বোধ এবং ঐতিহাসিক ‘শান্তিচুক্তি’র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পাহাড়ের অনেক সমস্যা যেমন এখনো অমীমাংসিত আছে; তেমনি এসব সমস্যার গভীরতাও অনেক বেশী। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার-ই পাহাড়ী-বাঙ্গালী সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখে। অতীতে অনেক সরকার গেলেও সমস্যা সমাধানে ঝুঁকি নেননি।
তিনি আশা করেন, এই মেয়াদে পাহাড়ের মানুষের অনেকখানি কষ্টই ঘুচে যাবে।
নিজের পদ-পদবীর রাজনৈতিক গন্তব্য সর্ম্পকে তিনি নাতিদীর্ঘ মন্তব্যে বলেন, ‘দলও আমাদের, সরকারও আমাদের। সংসদ এবং সচিবালয়ের দরোজা তো খোলা থাকবে। তাই জনগণের ভালোবাসায় হয়তো সংসদ সদস্য হিসেবেও অনেক দূর এগোতে পারবো’।

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র বেড়ে উঠা 
স্বচ্ছল কৃষি পরিবারের সন্তান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে আশি’র দশকে কর্মজীবন শুরু করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে’র কর্মকর্তা হিসেবেই। বাবা প্রয়াত হরি কুমার ত্রিপুরা ও মা উমাদেবী ত্রিপুরা’র তিন ছেলে এবং এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ফলে সমাজ ও সংস্কৃতি পরায়ণতার কৈশোর মানসিকতা তাঁকে আলাদা করেছে, অন্যসব বন্ধুদের কাছ থেকে।
কলেজ জীবনে থাকার সময় থেকেই তিনি নানামুখী সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হন সকলের। ১৯৮৯ সালের মাঝামাঝি ‘খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ (বর্তমানে পার্বত্য জেলা পরিষদ)’-এর নির্বাচনে তরুনতম বয়সে নির্বাচিত হন, সদস্য।kujendro-2
ব্যক্তিগত জীবনে প্রগতিশীল মানসিকতা লালন করলেও আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে জড়ানোর তেমন অনুকুল পরিবেশ ছিলোনা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়। তাই ব্যবসা’র পাশাপাশি ক্রমশঃ শিক্ষা প্রসার ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের স্বাতন্ত্রিক সত্তা বিকাশেই তিনি অধিকতর মনোযোগী হন।
১৯৮৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হাতে খড়ি নেন। দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজসহ দীঘিনালা উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তনে তাঁর অবদান স্মর্তব্য।
নিজের শ্রম-অধ্যবসায় আর একাগ্রতায় মাত্র এক দশকের ব্যবধানে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ী-বাঙ্গালী সবার কাছেই অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
নব্বই দশকে রাজনীতি ও ব্যবসায় তাঁর সমান্তরাল উত্থান ঘটে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও দলে তাঁর প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা সবাইকে ছাপিয়ে যায়। আর এই কারণেই ২০০১ সাল থেকে নেতাকর্মীদের অনুগ্রহে খাগড়াছড়ি আসনের নির্বাচনী দৌড়ে তিনিও শামিল হতে থাকেন।
কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হলে এক বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়, খাগড়াছড়িতে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অমানুষিক নিপীড়ন-নির্যাতনে খাগড়াছড়ি হয়ে পড়ে একেবারে আওয়ামীলীগ শূন্য। ২১ জন নেতাকর্মীকে হত্যা, শত শত মামলা আর কয়েক হাজার নেতাকর্মী হন, বাড়ীঘর ছাড়া। খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্যমন্ত্রী এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ।
অনেকটা সময়ের প্রয়োজনেই কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকেই ধরতে হয়, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক হাল। নিজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিকিয়ে তিনি টানা ৫ বছর বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন মোকাবিকাবেলায় শক্ত হাতে হাল ধরেন, দেশের প্রাচীনতম এই দলটির। কিন্তু বিধিবাম। ২০০৫ সালের জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সব আয়োজন নিজের গাঁটের পয়সায় সফল করলেও সফল হতে পারেননি নিজে। তাঁরই পিতৃতুল্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সভাপতি পদ দাবী করায় তাঁকে (কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা) ছাড় দিতে হয়, প্রত্যাশিত পদটিতে। একইভাবে ২০০৬ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পেলেও দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে বাতিল হয়ে যায়, সেই নির্বাচন। আবার ২০০৮ সালে মনোনয়ন দৌড়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি আর মনোনয়নের মুখ দেখেননি। গত মেয়াদে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেও সংসদ সদস্য এবং শরণার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র সাথে বিদ্যমান সর্ম্পকের শৈথিল্যে প্রায় দুই বছরের মাথায় তিনি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনীত হন। সেই সুবাদে তিনি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি বিগত ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের বিপুল ভোটে যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে হারিয়ে, সভাপতি নির্বাচিত হন।
এবার ভাগ্যের তীরে ঘটে অন্যরকম সূর্যোদয়। ধীরলয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য। সফলও হন, সেভাবেই। গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে তিনি ৯৯ হাজার ৫৮ ভোটে নির্বাচিত হন, প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য।
শিক্ষিকা স্ত্রী মল্লিকা ত্রিপুরা, দু’মেয়ে আর দু’সন্তান নিয়ে তাঁর সুখের সংসার।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 351 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen