শিরোনামঃ

দীপংকর তালুকদার হেরে যাওয়ার পেছনের কারন

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাজনীতির মাঠের পুরানো খেলোয়ার রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর -diponkতালুকদারের নির্বাচনে আঞ্চলিক দলের কাছে পরাজয় নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। 

অসম্প্রদায়িক চেতনার মানুষগুলোর কাছে তিনি মন্দের ভালো হিসেবে পরিচিত থাকলেও অতিমাত্রায় আত্ব অহংকার, মানুষের সাথে খারাপ আচরন বিএনপির পাহাড়ী মানুষগুলোর ভোট হাতিতে পড়ায় দীপংকরের অন্যতম পরাজয়ের কারন বলে সাধারন মানুষ মনে করছেন। যদিও বা আওয়ামীলীগ নেতাদের দাবী নির্বাচনে প্রত্যন্ত এলাকায় নৌকার এজেন্ট দিতে না পারা এবং আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের ভোটদানে বাধাদান করায় তাদের প্রার্থী পরাজয়ের অন্যতম কারন।
দেখা গেছে, আঞ্চলিক দল হিসেবে ১৯৭৩ সনে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা (এমএন লারমা) জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর আর আঞ্চলিক দলগুলো থেকে নির্বাচনের সময় প্রভাব বিস্তার করতে পারলেও এমপি হতে পারেনি। ১৯৭৯ সনে জাসদের উপেন্দ্র লাল চাকমা, ১৯৮৬ এব!ং ৮৮সনে জাতীয় পার্টির বিনয় কুমার চাকমা নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সন, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সনে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের দীপংকর তালুকদার। ২০০১ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির মনিস্বপন দেওয়ান ( এখন এলডিপি নেতা) ।
২০০৮ সালে মহাজোট প্রার্থী দীপংকর তালুকদার নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৯শ ৭২ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চারদলীয় জোট প্রার্থী মৈত্রী চাকমা (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৪শ ২৯ ভোট। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদার ( হাতি মার্কা) পেয়েছেন ৫১ হাজার ৮শ ৩২ ভোট।
এবার নির্বাচনে জেএসএস নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদার হাতি মার্কায় ৯৬ হাজার ৬০৮ ভোট এবং তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে দীপংকর তালুকদার পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৩৮২ ভোট। প্রায় ১৮ হাজার ৮৫২ ভোটের ব্যবধানে উষাতন তালুকদার বিজয় লাভ করেন।
কেন দীপংকর তালুকদারের এই পরাজয় ? এমন অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে নানা তথ্য, রাগ বিরাগ অনুরাগ আর সাম্প্রদায়িকতা।

২০০৮ সনে দীপংকর তালুকদার এমপি নির্বাচিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবার ১ বছরের মাথায় তার আচার আচরনের কারনে দলীয় নেতা কর্মীদের পাশাপাশি সাধারন মানুষের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। কেউ তার কাছে কোন আবেদন নিবেদন নিয়ে গেলে অনেক সময় খারাপ আচরন করতেন, দরখাস্ত ছিড়ে ফেলে দিতেন। এক সময় যারা তার কাছের মানুষ ছিলেন তাদেরকেও দুরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। দল ক্ষমতায় আসলে দলের ত্যাগী নেতা কর্মীরা সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার পর দলের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা দীপংকর তালুকদারকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে সকল সুযোগ সুবিধা লুটে নেয়। কিন্তু নির্বাচনের সময় এসব ব্যবসায়ীদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়নি। দল করলে কারনে অকারনে পাওয়া না পাওয়ার বেদনা নিয়ে নেতা কর্মীদের ক্ষোভ মান অভিমান থাকলেও দীপংকর তালুকদার সেটি ভাঙ্গাতে উদ্যোগী ভুমিকা নেননি।
এছাড়া নৌকার পক্ষে কাজ করতে ভোটের সময় যাদের সুযোগ সুবিধা অর্থ দেয়া হয়েছিল তারা সে সব টাকা নিজেদের পকেটেই রেখেছেন সাধারন কর্মীদের মাঝে বন্টন করেননি। দলের সিনিয়র নেতারা নৌকার পক্ষে ভোট চাননি এটাও পরাজয়ের আরেকটি কারন।
রাজনীতির মাঠে নানা কৌশলী ভুমিকা নেয়ার কথা থাকলেও এবার সেটি তিনি করেননি। বিশেষ করে জেএসএস বাদে অন্য আঞ্চলিক দল, সুশীল সমাজ এলাকায় গিয়ে ভোট চাওয়ার বিষয়টি কম ছিল। এছাড়া যাদেরকে এলাকা ভাগ করে নির্বাচনে পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারাও দলের জন্য কাজ করেনি। বিএনপি ভোট বর্জনের কথা বললেও বাস্তবে দেখা গেছে বিএনপিপন্থী পাহাড়ীরা ভোট কেন্দ্রে গেছেন এবং দীপংকরকে ঠেকাতে হাতি মার্কায় ভোট দিয়েছে। যেটি দীপংকর তালুকদারের পরাজয়ে বড় ভুমিকা রেখেছে। এবারের নির্বাচনে দীপংকর তালুকদারের অন্য প্রার্থীদের ব্যাক্তিগত আক্রমন করে কথা বলার ভঙ্গিটিও কারো ভালো লাগেনি।
অন্যদিকে দশটি উপজেলার নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকার থেকে যে সব এলাকায় বরাদ্দ বেশী এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন সে সব এলাকায় দীপংকর তালুকদার ভোট কম পেয়েছেন। কাউখালী উপজেলা ছাড়া বাকি উপজেলাগুলোতে হেরে গেছেন দীপংকর তালুকদার।
মিডিয়া কর্মীদের মাথে সবচেয়ে দুরত্ব বেশী ছিল দীপংকর তালুকদারের। নানাভাবে স্থানীয় কর্মীরা তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি মিডিয়া কর্মীদের সাথে ভালো আচরন করতেন না। বরং অনেকের অভিযোগ কান কথা শোনে তিনি মিডিয়া কর্মীদের সাথে নানা মন্তব্য করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটিতে কয়েকটি অনলাইন বের হয়েছে। এসব অনলাইনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে দীপংকর তালুকদারের সাক্ষাত চেয়েও পাননি। এমনি ঢাকা সচিবালয়ে গিয়েও পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে ভালো আচরন পাননি। মিডিয়ার ব্যাপারে যেখানে অবস্থান কৌশুলী হওয়ার কথা সেখানে তার অবস্থান ছিল উল্টো।
দীপংকর তালুকদার প্রতিমন্ত্রী হলেও তার এপিএস ও পিএ দের আচরন ছিল পুর্নমন্ত্রীর মত। তাদের আচার আচরন নেতা কর্মীসহ সাধারন মানুষকে ব্যাথিত করেছে। তাদের দাফটে প্রতিমন্ত্রীর কাছে মানুষ যেতে পারত না, তাই ব্যাক্তি দীপংকর তালুকদারকে ভালোবাসলেও অভিমান করে ভোট কেন্দ্রে যায়নি অনেকে। এটিকেও অনেকে পরাজয়ের আরেকটি কারন বলে মনে করছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেছেন, দলে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কষ্ট থাকতে পারে, কিন্তু আমরা নৌকাকে বিজয় করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি। জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, নানিয়াচরসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদের এলাকায় থাকতে দেয়নি। আমরা অনেক জায়গায় পোলিং এজেন্ট দিতে পারিনি। অনেকটা অস্ত্রের মুখে আমাদের প্রার্থীকে পরাজিত করা হয়েছে।
তবে সব কিছু মিলিয়ে আত্ব প্রত্যয়ী দীপংকর তালুকদারকে তার অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে  নতুন উদ্যেম চলবেন, সবাইর সাথে সুসর্ম্পক রাখবেন এমন প্রত্যাশা করছে তার দলীয় সমর্থক ও শুভ্যানুধায়ীরা। অন্যথায় দীপংকর তালুকদারের সারা জীবনের অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। ঘটতে পারে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বির্পযয়।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,218 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen