শিরোনামঃ

দীঘিনালায় মঞ্চস্থ হলো বিলুপ্ত প্রায় যাত্রাপালা ‘মুক্তি’র সংগ্রাম’

সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদ ‘বানছড়া’ প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রয়াত সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩১-তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে অন্যসব কর্মসূচীর সাথে রাতভর আয়োজন করে, বিনয় কৃষ্ণ Khagrachari Jatrapala Pictureমুখোপাধায় রচিত ‘মুক্তির সংগ্রাম’ যাত্রাপালার মঞ্চায়ণ।
রাত ১০টা থেকে যাত্রাপালা শুরু হবার কথা থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই আশে-পাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু’র সমাগমে ভরে যায় পুরো স্কুলমাঠ। রাতভর ওই মাঠেই হাজারো মানুষ প্রকাশ করেন, বিনিদ্র উচ্ছাস।
পাহাড়ে কয়েক দশক আগেও বিভিন্ন উপলক্ষ্যে নাটক, যাত্রাপালা এবং কীর্ত্তনের রেয়াজ থাকলেও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সেক্ষেত্রে যাত্রাপালা’র মঞ্চায়ন তো নেই বললেই চলে। কিন্তু এই বিলুপ্ত যাত্রাপালা মঞ্চায়নের মাধ্যমে গত সোমবার কয়েক হাজার মানুষকে বিনিদ্র বিনোদন দিয়েছে, দীঘিনালা নাট্য গোষ্ঠি।
নাটকের নির্দেশক কালেন্দ্র লাল চাকমা বলেন, বেশ প্রাচীন এই যাত্রাপালায় মুলতঃ স¤্রাট অশোকের সময়কালে ভারতবর্ষে মহামতি গৌতম বুদ্ধের অহিংস বাণী প্রচার এবং সেই পথে ঘোর ব্রাম্মণ্যবাদের আরোপিত বাধা অতিক্রমণের কাহিনীই প্রতিফলিত হয়েছে।
দীঘিনালা নাট্য গোষ্ঠি’র উপদেষ্টা আনন্দ মোহন চাকমা বলেন, ‘মুক্তির সংগ্রাম’ যাত্রাপালায় যন্ত্রশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, কোরিওগ্রাফার, মেক-আপ থেকে শুরু করে নির্দেশনা পরিচালনা সবই করেছেন, দীঘিনালা নাট্য গোষ্ঠির সদস্যরাই।
তিনি দাবী করেন, সীমিত সামর্থ্যে দীর্ঘদিন ধরে নাটক মঞ্চায়নের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা সবার সহযোগিতা নিয়ে এগোতে চান পাহাড়ে বিশুদ্ধ সংস্কৃতির সোপানে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাপালাটিতে ৬ বছরের শিশু থেকে প্রবীন নারী-পুরুষ মিলে ৪৫ জন স্থানীয় কলাকুশলী নিজেদের সাধ্যমতো অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করেন। কিন্তু অভিনয়ের আনন্দ-বেদনাপূর্ণ মুর্হুতগুলোতে দর্শকদের উচ্ছসিত শোরগোল পুরো মাঠকেই কাঁপিয়ে তোলে।
অভিনয়শিল্পী হীরা চাকমা (১২) এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাক্যমুনি চাকমা নিজেদের অভিনয় নিয়ে বলেন, আমাদের প্রশিক্ষণ কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা নেই মোটেই। মুলতঃ নিজেদের মনের খোরাক এবং নতুন প্রজন্মকে বিশুদ্ধ সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেই এই আয়োজন। যা প্রয়াত মহাপুরুষ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম. এন. লারমা) তাঁর জীবদ্দশায় কর্মে ও জ্ঞানের মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ ভাইস্-চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা ‘মুক্তির সংগ্রাম’ যাত্রাপালা শুরু’র আগে দর্শক এবং ১০ নভেম্বরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলেন, একটি যাত্রাপালা’র মাধ্যমে চাকমা সমাজে সুস্থ বিনোদন ধারাকে টিকিয়ে রাখা এবং দেশ-সমাজ ও ধর্মীয় চেতনাকে শাণিত করার জন্যই এই আয়োজন। সরকারের সহযোগিতা পেলে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
‘যাত্রাপালা’র মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও বিনোদন মাধ্যম সমতলেও আগের মতো দেখা যায়না। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক আগে থেকেই এই শিল্পের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিলো।
দীঘিনালার বানছড়া’র মতো অনেক জনপদে যাত্রাপালা’র প্রতি অকৃত্রিম টান থেকেই ধর্মীয় পালাপার্বণে স্থানীয় শিল্পীরা এগিয়ে আসেন মঞ্চে।
তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া গেলে পাহাড়ে টিকে থাকবে যাত্রাপালা’র পাহাড়িয়া অন্য এক স্বতন্ত্র রুপ।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 515 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen