সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টানা হরতালের কারনে পর্যটন শহর রাঙামাটি এখন পর্যটক শুন্য। এই পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের পচারনায় মুখরিত থাকার কথা থাকলেও হরতালের কারনে পর্যটকরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় কারনে আসছে না। একের পর এক টানা হরতাল আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে পর্যটন শহর রাঙামাটি এখন পর্যটক শুন্য। সেপ্টেম্বর মাস থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে পর্যটকরা আসছে না। অথচ এখানে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, ঝুলন্ত ব্রীজ সুখী নীলগঞ্জ, কাপ্তাই লেক, রাজবন বিহার এবং শুভলং ঝর্না।
রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন হোটেল ও পর্যটন কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকের অভাবে হোটেল ও মোটেলগুলো খালি পড়ে আছে। অলস পড়ে আছে পর্যটকবাহী বোটগুলো। ঝুলন্ত ব্রীজও পর্যটকের অভাবে খা খা করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে গত ৬ মাস ধরে পর্যটক না আসায় হোটেল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। পর্যটন ব্যবসার সংশ্লিষ্ট টেক্সটাইল ব্যবসায়ও নেমেছে দুরাবস্থা পর্যটক না আসায় তাদেরও বেচাকেনা নেই।
রাঙামাটি শহরের কাঁঠালতলী এলাকার হোটেল সুফিয়ার মালিক সাইফুল ইসলাম মুন্না জানিয়েছে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। হোটেল পুরাটা খালি ষ্টাফ বেতন দিতে পারছি না। হরতাল আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে লোকজন আসছে না। অনেকে বুকিং দিয়ে আবার নিরাপত্তাহীনতার কারনে বুকিং বাতিল করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা চাই সরকার বিরোধীদল মিলে একটা সমঝোতায় আসবে আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পর্যটন এলাকাগুলোকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার দাবী জানান।
রাঙামাটি শহরের রির্জাভবাজার এলাকার হোটেল গ্রীন ক্যাসেলের মালিক আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, গত ৬ মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকরা না আসায় আমি হোটেলের অনেক কর্মচারী ছাটাই করে দিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বিকল্প কিছু চিন্তা করতে হবে। আমরা দুটি রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন করব আমাদেরকে তারা যেন দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দেয়। অন্তত: হরতাল আহবানকারীদের কাছে দাবী থাকবে তারা যেন পর্যটন এরিয়াগুলোকে হরতালের আওতামুক্ত রাখে।
শহরের টেক্সটাইল মার্কেট বলে খ্যাত তবলছড়ির আনন্দবিহার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে প্রায় দোকান বন্ধ। সেখানে কয়েকজন কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায় মালিকরা তাদের অনেককে ছাটাই করে দিচ্ছে। বয়ন টেক্সটাইলের একজন কর্মচারী জানিয়েছেন হরতালের কারনে লোকজন না আসায় গত ১ সপ্তাহ মিলে এক হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারেননি।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে হোটেল মোটেল এবং ঝুলন্ত ব্রীজ পর্যটকের অভাবে খা খা করছে। টিকেট কাউন্টার গিয়ে একজন পর্যটকও পাওয়া গেলো না। দায়িত্ব প্রাপ্ত টিকেট কাউন্টার থেকে জানানো হয়, টিকেট সেল হচ্ছে না, হরতালের কারনে লোকজন আসছে না। তিনি আরো জানান, আগে সরকারী বন্ধের সময় বিশেষ করে শুক্র এবং শনিবার হাজার টিকেট বিক্রি হলেও গেলো শুক্রবার এবং শনিবার মিলিয়ে ৫০টি টিকেটও তারা বিক্রি করতে পারেননি।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের বোট ঘাটের বোটগুলো অলস পড়ে আছে। লোকজন আসছে না বোটও ভাড়া হচ্ছে না।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্তোরা ব্যবস্থাপক শামসুল হক জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে তাদেও অবস্থা খুবই খারাপ। হোটেল মোটেল খালি তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে দেশের পর্যটন এলাকাগুলোকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার দাবী জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা, এতে করে দেশের অর্থনীতির চাকা যেমন গতি পাবে তেমনি পাবে আয়ের একটা বড় অংশ আসবে পর্যটন খাত থেকে মানুষ নির্ভয়ে ঘুরতে পারবে।