শিরোনামঃ

১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিবাহিনী প্রসঙ্গে দীপংকর তালুকদার

জাতির জনককে হত্যার পর ঘাতকরা মনে করেছিল এদেশ থেকে আওয়ামীলীগ নিশ্চিহৃ হয়ে যাবে

ফজলুর রহমান রাজন, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেছেন, ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যার পর ঘাতকরা মনে করেছিল এদেশ থেকে আওয়ামীলীগ নিশ্চিহৃ হয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ মাথা তোলে Bongubanduদাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু ঘাতকদের সে ধারনাকে ভুল প্রমান করে বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ আবার ঘুরে দাড়িয়েছে পর পর ৩ বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে বাড়ীতে বাঙ্গালী জাতির স্বপ্ন দ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের কিছু বিপথগামী সেনা সমস্য হত্যা করার পর তৎকালীন মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী জনতার ব্যানারে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তৎকালীন বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসত তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আস্থার কারনে সে সময়কার কিছু তরুন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সে সময় তাদের সাথে ছিলেন বর্তমান রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। সে সময় তিনি টগ বগে তরুন ছিলেন। সম্প্রতি তার বাসভবনে আলাপচারিতায় দীপংকর তালুকদার সে সময়কার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে খোলামেলা কিছু কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিবর্তি সময়ে মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম নেতা দীপংকর তালুকদার সে সময়কার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যার পর তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মত আমাদের শক্তি ও সামর্থ্য ছিল না এবং আমার জাতীয় রাজনীতিতে কোন পদ পদবী ছিল না। সে সময় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড আমরা মেনে নিতে পারিনি। বিবেকের তাড়নায় আমার মত অনেকেই এই নির্মম হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারিনি। সে সময় কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের নেতৃত্বে আমিসহ অনেকেই সৈয়দ তালুকদার, নাসিম, ওসমান, শাহ আজিজ, মান্নান, তরুন, ফারুক আহমদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আব্দুল হালিম, সাইদুর রহমানসহ অনেকেই আমরা মুক্তি বাহিনী গড়ে তুলি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে সে সময় প্রায় ৭ হাজার দলীয় এবং নির্দলীয় সাথী বন্ধু প্রতিরোধ কমিটিতে অংশ গ্রহন করে। সে সময় সরকারের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে কমপক্ষে ২শতাধিক লোক মারা গেছে এবং হাজারের কাছাকাছি কর্মী আহত হয়েছে।Dipongkor-2
আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর বিভিন্ন সময় সে সময় মুক্তিকামী কমিটির অনেক সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা সাহায্যে ও সহযোগিতা প্রদান করেন। যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন সাহায্যে ও সহযোগিতা করার, যদিও বা সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। আশা করি তার সহযোগিতায় অব্যাহত থাকবে।
দীপংকর তালুকদার বলেন, আমাদের মত অনেকেই যারা সে সময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তারা মন্ত্রী হবো, চেয়ারম্যান, এমপি হবে, বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক হবে এই আশায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ গড়ে তুলিনি। তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছিল, বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে ভালোবেসেছিল, বাংলাদেশকে ভালোবেসেছিল এবং আওয়ামীলীগকে ভালোবেসেছিল বলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তাদের কল্যানে আরো কিছু করা যেতে পারে। তাদের জন্য বিশেষ কল্যান তহবিল গঠন করা যেতে পারে। যেহেতু আওয়ামীলীগ এখন সরকারে আছে। যে সমস্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনীরা যুদ্ধ করেছে বিশেষ করে নেত্রাকোনার দুর্গাপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটসহ যে সব এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা শহীদ হয়েছে তাদের নামে রাস্তা, স্কুল কলেজের নামকরন করা হলে তাদের প্রতি সম্মান দেখানো যেতে পারে।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, যারা জীবনবাজি রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তারা তো কিছু চায়নি তারা আর্দশিক চেতনা থেকে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটা অনেক গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রেখেছিল, আমরা কি করতে পেরেছি, কি করতে পারিনি সেটি বড় কথা নয় সে সময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের ভুমিকা কি ছিল সেটি ইতিহাস একদিন কথা বলবে। আমাদের তখন উদ্দেশ্যে ছিল আন্দোলন আর আন্দোলন। এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আটক হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরন করেছেন অনেকেই তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা মনে করেছিল আওয়ামীলীগ নিশ্চিহৃ হয়ে যাবে তারা ভাবতে পারিনি আওয়ামীলীগ আবার ঘুরে দাড়াবে।
বর্তমান জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আমি জোর দাবী জানাব সে সময় যারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিবাহিনীতে অংশগ্রহন করেছিল তাদের মধ্যে যে সব সার্থী এখনো বেছে আছেন তাদের নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করার জন্য, সবাইকে অন্তত একত্রিত হওয়ার সুযোগ দিলে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলামেলা কথা বলতে পারবেন। মুক্তিবাহিনীর যে সব যোদ্ধা এখনো বেছে আছেন তারা আর্দশিক রাজনৈতিক চেতনার কারনে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ এবং যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল, তারা তো জীবনে কিছু চায়নি আমরা যদি তাদের রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিতে পারি তাহলে অন্তত ইতিহাসের দায়ভার কিছুটা লাঘব হবে। বর্তমান জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার অতীতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খোজ খবর নিয়েছিলেন আগামীতেও বর্তমান সরকার ১৫ আগষ্ট জাতির জনক হত্যাকান্ডের সময় যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল তাদের যথাযথ স্বীকৃতি দিবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দীপংকর তালুকদার বলেন, ১৫ আগষ্ট জাতির জনককে হত্যার পর প্রতিরোধ কমিটি ও মুক্তিবাহিনী গঠনে আমাদের মুল শক্তি ছিল আর্দশিক চেতনা আর জনগনের সহযোগিতা। আমাদের প্রতিরোধ কমিটি কয়েকটা সেক্টরে ভাগ করা ছিল, বাংলাদেশে আমাদের দ্বিতীয় হেড কোয়াটার ছিল মহাদেবপুর। এ ধরনের যুদ্ধে আমরা পাহাড়ী এলাকাকে বেছে নিয়েছে কারন যুদ্ধে আমাদের নিরাপদ জায়গা দরকার ছিল যেখান থেকে আমরা সংগঠিত হতে পারি। আমাদের যোদ্ধার নিরাপদ মনে করেছিল পাহাড়ী এলাকা সবচেয়ে নিরাপদ।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন ১৫ আগষ্ট জাতির জনককে হত্যার পর সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় হয়। দলীয় নেতা কর্মী এবং জনগনের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এই যুদ্ধ করতে পারতাম না। Dipongkor Gv
তিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী যে সব আত্ব স্বীকৃত খুনী বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের দেশে এনে ফাসির রায় কার্যকর করার দাবী জানান।

 

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 2,629 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen