সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ০১মিনিট। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফসল অস্ত্রসমর্পনস্থলের স্বাক্ষী খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে হাজারও দর্শকের চিৎকার-হৈ হল্লোড়। স্টেডিয়ামের সদর দরজামুখী মঞ্চে ডান পাশের সিঁড়ি বেয়ে হাজির হলেন পার্থ বড়–য়া ও নাসিম আলী। চিৎকার যেন আরও বহুগুণ বেড়ে গেল। পার্থের কণ্ঠে “চল না যায় হারিয়ে দুইজন……”।
এরপর একে একে “এই এমন পরিচয়”, “মুখরিত জীবন”, “আঁরা দেশত আয়্যা না”, “মন শুধু মন ছুঁয়েছে”, “একলা ঘর”, “ব্যস্ততা আমাকে দেয়না অবসর”, “বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি”, “এরই মাঝে রাত নেমেছে”, “দেখা হবে বন্ধু”, “রিমঝিম ঝিম বৃষ্টি পড়ে”, “বাশিঁ শুনে আর কাজ নাই”, “আরা চাইটগ্যা নও জোয়ান”, “চায়ের কাপে পরিচয় তোমার সাথে”, “কেন এ নি:সঙ্গতা”সহ সোলস্’র জনপ্রিয় সব গান।
“দেখা হবে বন্ধু”- গানটি গাওয়ার আগে মঞ্চের লাইট নিবিয়ে দিয়ে দর্শকদের মোবাইল ফোনের বাতি উচিয়ে দেখাতে আহ্বান জানান। গানের তালে তালে মঞ্চের চারিদিকে মোবাইল লাইট জ্বলতে থাকে। তখন মনে হচ্ছিল পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে সাদা জোনাক পোকা আলো ছড়াচ্ছে।
রাত ৮টা ২৯ মিনিটে “কেন এই নি:সঙ্গতা” গানটি শেষ হতে না হতেই কূয়াশার চাঁদরে ঢাকা মঞ্চের পেছনের আকাশে আঁতশ বাজির শব্দ ও ঝলকানিতে দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। নিজেকে ও দেশকে ভালবাসার আহ্বান জানিয়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করল সোলস্।
এর আগে বিকেল ৪টা থেকে খাগড়াছড়ির স্থানীয় সংগীত ও নৃত্য শিল্পীরা এবং চট্টগ্রামের শিল্পীরা দর্শকদের মাতিয়ে তুলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের যৌথ ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, উনার সহধর্মিনী মল্লিকা ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের অধিনায়ক ব্রি: জেনারেল স ম মাহাবুব উল আলম, পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী, খাগড়াছড়ি সেনা জোনের অধিনায়ক লে: কর্ণেল হাসান মাহমুদসহ সামরিক বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শান্ত করতে তৎকালীন সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিবাহিনী(গেরিলা) প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সাথে চুক্তি সম্পাদন করেন। চুক্তির ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে অস্ত্র সমার্পন করে স্বাভাবিক জীবনের ফিরেন গেরিলারা।