শিরোনামঃ

কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগের অন্তরালে মহৎ উদ্দেশ্য : মোঃ মোস্তফা কামাল

বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটি ছোট্ট ঘটনা কিন্তু এই ছোটট্ট ঘটনাই যে অনেক বড় ঘটনাকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে তা বলার অবকাশ নেই। ছোট্ট অনাড়ম্বরপূর্ন একটি আয়োজনে যা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার । Rangamati Montobba Kolamএকই দিন রাঙামাটিতে একাধিক অনুষ্ঠানের খবর বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় স্থান পেলেও অনেক খবরের মাঝে এই খবরটি হয়তো অনেক মিডিয়ায় স্থান পায়নি । তাই খবরের আড়ালে থেকে যাওয়া সেদিনের একটি ছোট্ট খবর নিয়েই আজকের মন্তব্য কলামের জন্য কলম ধরেছি। অনেকের কাছে এই মন্তব্য কলামটি খুব একটা গুরুত্ব পাবে বলেই ধারনা করছি তবে আমার সাংবাদিকতা জীবনের সুদীর্ঘ ২৫ বছরের াণেক গুরুত্বপূর্ন ঘটনার কাছে এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা হিসাবেই বিবেচনা করছি।

২৭ আগষ্ট সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শূল ভবন এবং মূল ভবনের পেছনের অংশে অবস্থিত আরেকটি ভবন যেটি ট্রেজারি ভবন হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত সেই দুটি ভবনের মাঝে নির্বিঘেœ এবং ঝুঁকিমুক্ত পরিবেেশ চলাচলের জন্য পূর্বের সিড়িটিকে পার্কিং টাইলস এ মুড়িয়ে নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে। আর নতুন ভাবে সজ্জিত এই সংযোগ সিড়িটির উদ্বোধন করা সেদিন। ছোট্ট একটি ফলক উম্মোচন করে জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন এর উদ্বোধন করেন। পরে কালেক্টরেট মসজিদের পেশ ঈমাম মোনাজাত করেন। জেলা প্রশাসক, স্থাণীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গন এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গন সকলে উপর থেকে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে আবারো উপরে উঠে যার যার কার্যালয়ে চলে যান। এখানে ছিল না কোন বক্তব্যের আনুষ্ঠানিকতা, ছিল না কোন প্যান্ডেল কিংবা সামিয়ানা কিংবা বাড়তি কোন আয়োজন।
এখন স্বভাবতই পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যেখানে রাঙামাটিতে প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ কিংবা কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের উদঘাটন হচ্ছে সেখানে নাম মাত্র খরচে এই সংযোগ সিড়িটির উদ্বোধন কিবা ঘটনা হলো। যেখানে বিভিন্ন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশাল আকৃতির প্যান্ডেল নির্মান করে সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করে অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে এবং বিশাল আপ্যায়ন পর্বের মাধ্যমে আয়োজন করেও খবরের শিরোনামে আসা যায় না সেখানে এই ছোট্ট উদ্বোধনের ঘটনার পেছনে কি এমন মাহাতœ লুকিয়ে আছে যা নিয়ে রীতিমত কলাম লিখে পত্রিকার গুরুত্বপূর্ন জায়গার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে।

সেই উত্তরেই এখন আমার কিছু বলা। যে সিড়িটি নতুন আঙ্গিকে পার্কিং টাইলস এ মুড়িয়ে সকলের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সে সিড়িটি কারা ব্যবহার করে থাকেন সে বিষযটি একটু দেখা যাক। যদিও বা ট্রেজারি বিল্ডিংটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মুল ভবনের পিছনেই তবে অনেক সিড়ি পেরিয়ে যারা এখানে যাতায়াত করেন তাদের কিন্তু এই বিল্ডিং এ একবার নেমে আবার উঠে আসতে খুব কষ্টই হয়। নামে ট্রেজারি বিল্ডিং হলেও এই বিল্ডিং এ পাসপোর্ট অফিস সহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ন শাখা রয়েছে। সাধারনত পেনশনে যাওয়া সরকারী চাকুরীজীবিদের একটি বড় অংশ অংশ বৃদ্ধ বয়সে এই সিড়ি পেরিয়ে ট্রেজারি বিল্ডিং এ চলাচল করে থাকেন। আবার পাসপোর্ট নিতে আসা লোকজনদেরকেও এই সিড়ি পেরিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আসতে হয় । তাছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনেক জরুরী প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং কমচারীদের প্রতি নিয়ত এই সিড়ি দিয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। সিড়িটির আগের যে অস্থা ছিল তাতে বিশেষ করে বৃস্টির মৌসুমে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন থাকতো এই সিড়িটি আর এই ঝুঁকিপূর্ন অবস্থাতেই সিড়ি পেরুতে হতো অনেক বয়স্ক লোকজনদের। সিড়িটির সংস্কার নিঃসন্দেহে এই সব বয়স্ক মানুষদের চলাচলে সহায়ক হবে। কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব হবে তাদের । বৃস্টি মৌসুমে অনেকটা নিরাপদে সিড়ি পেরুতে পারবেন অনেক লোকজন। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ।

আরেকটি কারনে এই প্রশংসনীয় উদ্যোগের প্রশংসা করতে হচ্ছে কেন না এই সিড়িটির সংস্কার কাজের জন্য অর্থের সংস্থান করা হয়েছে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের টিআর কর্মসূচী থেকে। অর্থ্যাৎ ত্রান ও পূনর্বাসন কার্যালয়ে বার্সিক টেস্ট রিলিফ কর্মসূচী থেকে এই অর্থের সংস্থান করা হয়েছে। টিআর, কাবিখা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে অনেকের একটি সাধারন ধারনা রয়েছে আর তা হচ্ছে এইসব কর্মসূচীর মাধ্যমে যে সব উন্নয়ন কাজ রা হয় সেগুলোর সুফল খুব কম পাওয়া যায় । তাছাড়া টিআর , কাবিখা কিংবা কাবিটা কর্মসূচী নিয়ে অনেক মূখরোচক গল্পও প্রচলিত আছে। যাক সেই সব গল্পের কথা এখন আর বলা উচিত হবেনা। কেননা টিআর কর্মসূচীর মাধ্যমেই এই মহৎ কার্যটি সম্পাদন করা হয়েছে। পাশাপাশি টিআর কর্মসূচীর মাধ্যমে আমাদের সংসদ সদস্য গন বিভিন্ন উপজেলায় সোলার প্যানেল বিতরন করেছেন যা প্রশংসনীয় ।

টিআর কমৃসূচীর মাধ্যমেই রাঙামাটির জেলা প্রশাসন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সেট এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরন প্রদান করেছেন। জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলায় এই সব সামগ্রী নিজ হাতেই বিতরন করেছেন যা প্রায়শ পত্রিকা এবং বিভিন্ন চ্যানেলের সংবাদে স্থান পেয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল টিআর কর্মসূচী থেকেই জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ড্রেস, স্বুল ব্যাগ, স্কুলে যাওয়া আসার জন্য নৌকা প্রদান করে উদাহরন সৃষ্টি করেছিলেন যা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছিল ।
সেই প্রশংসিত উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বর্তমান জেলা প্রশাসকের আমলেও চলমান রয়েছে। কাজেই প্রশংসনীয় এই কাজের জন্য প্রশংসা পেতেই পারেন জেলা প্রশাসক সহ এই কাজের সথে যারা জড়িত আছেন তাদের সকলে। ভিন্নধর্মী উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে পূর্বতন জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্র নাথ চক্্রবর্তী ডিসি বাংলো এলাকায় একটি মিনি যাদুঘর নির্মান করে এবং বিভিন্ন দূর্যোগময় মূহুর্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন।

সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল অতি দরিদ্র জেলেদের জন্য মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ের জন্য েিশষ ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে চাল বরাদ্দ চালু করেছিলেন তা পরিমানে কম হলেও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ছিল।

পরিশেষে সহজ সরল কথায় বলতেই হচ্ছে এই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অথচ মহৎ উদ্যোগের অন্তরালে যে সব মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে যা সরল দৃস্টিতে অনেকের দৃষ্টিকে এড়িয়ে যায় সে সব মহৎ কাজ যত বেশী সম্পাদিত হবে ততই আমাদের সমাজের মঙ্গল হবে। আর এই সব কাজের অন্তরালে যাদের মহৎ চিন্তা ভাবনা কাজ করছে তাদের এই চিন্তা ভাবনাকে স্বাগত জানাতেই হয়।

(লেখক : রাঙামাটির একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।)

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 567 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen