শিরোনামঃ

উপজেলা নির্বাচন ২০১৪

কাউখালী, বাঘাইছড়ি এবং বরকল উপজেলায় নির্বাচন লড়াই হবে ত্রিমুখী, প্রাধান্য বজায় রাখছে আঞ্চলিক দলগুলো

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিশেষত রাঙামাটি অঞ্চলে আঞ্চলিক দলগুলো প্রাধান্য বাড়ছে। তাদের কাছে অনেকটা জাতীয় দল Upozilla Nirbachonবিএনপি বা আওয়ামীলীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি বিজয় লাভ করার পর পরই উপজেলাগুলোতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে হতে যাওয়া নির্বাচনে নিজেদের আধিপত্যে বিস্তারে জেএসএস, জেএসএস সংস্কার এবং ইউপিডিএফ। এলাকা বিশেষে তারা অবস্থান ধরে রাখা বা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। সেক্ষেত্রে জাতীয় দলগুলোর অবস্থা বিপরীতমুখী। শনিবারের ৩টি উপজেলা নির্বাচনে (১৫ মার্চ) কাউখালী ও বরকলে বিএনপি আওয়ামীলীগ দলীয় সমর্থনে প্রার্থী দিলেও বাঘাইছড়িতে ৩টি আঞ্চলিক দলই প্রার্থী দিয়েছে। বাঘাইছড়িতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আশ্নুরুপ ভোট না পেলেও জেএসএস প্রার্থী ১৭ হাজার ভোট পেয়েছিল যার অধিকাংশ ভোটই ছিল বাঙ্গালীদের ভোট ব্যাংক। এক সময়কার বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতারা এখন জেএসএসের হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন।

আঞ্চলিক দলগুলোর লড়াই পাহাড়ে হলেও বাঘাইছড়িতে ২০০৯ সনে উপজেলা নির্বাচনে জেএসএস সংস্কারের সুদর্শন চাকমা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পাহাড়ের অস্ত্রের ঝনঝনানি চলে আসে বাঙ্গালী অধ্যুষিত উপজেলা সদরে। আধিপত্যে বিস্তারের লড়াইয়ে বাঙ্গালীরা ছিল আতংকিত। গত ৫টি বছর সুদর্শন চাকমা কৌশলে বা অস্ত্রের ভয়ে প্রশাসনকে নিজের হাতে রেখে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। সে সময় সন্তু লারমার জেএসএস বাঘাইছড়ি সদরে যেতে পারেনি। তবে এবারের সংসদ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর নিরাপত্তা বিধানের কারনে জেএসএস সন্তু প্রার্থী বর্তমান সাংসদ উষাতন তালুকদার বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছেন এবং বিপুল পরিমান ভোট পেয়েছেন। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও জেএসএস সংস্কার ও ইউপিডিএফের ঘাটি বাঘাইছড়িতে শক্ত প্রচারনা চালাচ্ছেন জনসংহতি সমিতি সন্তু লারমা গ্র“পের চেয়ারম্যান প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা। তার সাথে রয়েছেন পৌর মেয়র সহ বাঙ্গালীদের একটি অংশ। অন্যদিকে রুপকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের নেতা বিশ্বজিৎ চাকমাও পিছিয়ে নেই । তিনি ইউপিডিএফের সমর্থন নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।
বাঘাইছড়িতে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন ৩জন। এরা সবাই ৩টি আঞ্চলিক দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা গ্র“পের সুদর্শন চাকমা (ঘোড়া), জনসংহতি সমিতি সন্তু লারমা গ্র“পের বড় ঋষি চাকমা (দোয়াত কলম) এবং এক সময়ের আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমানে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী বিশ্বজিৎ চাকমা (আনারস) প্রতীকে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৫জন। এরাও নানাভাবে বিভিন্ন দলের সাথে সম্পৃক্ত। প্রার্থীরা হলেন চিত্র বিকাশ চাকমা (বই), জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা (টিয়া পাখি), আব্দুল কাইয়ুম (টিউবওয়েল), দীপ্তিমান চাকমা (তালা) এবং প্রদীপ কুমার চাকমা (চশমা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বদ্বিতা নির্বাচিত হয়েছেন নব আলো চাকমা।
বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৫৯ হাজার ৪শজন।মোট ভোটার হচ্ছে ৫৯ হাজার ৪শ০০ জন(পুরুষ- ৩১,৫৪২,মহিলা-২৭,৮৫৮ জন)। এখানে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৮টি এবং ১৭৭টি কক্ষে ভোট গ্রহন করা হবে।
বরকল উপজেলায় নির্বাচন করছেন ৪ জন। এটি আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও এবারে নির্বাচনে জেএসএস প্রার্থী ছাড়াও আরো ২জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এখানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সন্তোষ কুমার চাকমার সাথে জনসংহতি সমিতিন সমর্থিত প্রার্থী বেগম মনি চাকমার লড়াই হবে। তবে এ লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীরাও।
বরকল উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন ৪জন। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সন্তোষ কুমার চাকমা (দোয়াত কলম), কমল জ্যোতি চাকমা (মোটর সাইকেল), সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য বিহারী রঞ্জন চাকমা (আনারস) এবং জেএসএস প্রার্থী বেগম মনি চাকমা (হেলিকপ্টার) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন বিধান চাকমা (মাইক) জাহাঙ্গীর আলম (তালা) এবং সুদীর্ঘ চাকমা (বই) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন নির্বাচন করছেন। এরা হলেন বেগম রায় সোনা চাকমা (প্রজাপতি) এবং শকুন্তলা চাকমা (পদ্মফুল) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
বরকল উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা ২৯ হাজার ৯শ৬২জন। (পুরুষ- ১৬,৪৭৫,মহিলা- ১৩,৪৮৭ জন)। ভোট কেন্দ্র ১৭টি এবং ৮৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে।
তৃতীয় দফা নির্বাচনে একমাত্র কাউখালী উপজেলায় জাতীয় রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করছে। তাই এ উপজেলায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রাথীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। তবে এ উপজেলা থেকে ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে থেকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মারধর, হুমকির অভিযোগ এনে নির্বাচনের আগে সেনা বাহিনী মোতায়েন দাবি করে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবদেন জানিয়েছেন। তাই সব মিলিয়ে নির্বাচনী দিনে কয়েকটা ভোট কেন্দ্রে অনাকাঙ্খিত ঘটনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে প্রশাসন এ বিষয়ে সম্পুর্ন সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
কাউখালী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ৩ জন। এরা এসএস চৌধুরী ঘোড়া), অমরেন্দ্র রোয়াজা (মোটর সাইকেল) এবং অর্জুন মনি চাকমা সুদর্শন ( আনারস) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ৩জন। এরা হলেন বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খোকন (তালা), মংসুইউ চৌধুরী (চশমা) এবং নাছির উদ্দিন (টিউবওয়েল) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
মহিলা চেয়ারম্যান পদে ২জন নির্বাচন করছেন। এরা হলেন বেগম এ্যানী চাকমা কৃপা (প্রজাপতি) এবং বেগম জান্নাতুল ফেরদৌস (কলস)।
এই উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬শ ৮২জন। এখানে ভোট কেন্দ্র ২০টি এবং ১০৫টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহন করা হবে। (পুরুষ-১৮,৮০০, মহিলা-১৭,৮৮২ জন)।
জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল করিম জানান, রাঙামাটির তিনটি উপজেলায় নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এসব উপজেলায় নিবাৃচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফ উদ্দিন আহম্মদ জানিয়েছেন ৩টি উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্রে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও বিজিবি মিলিয়ে প্রায় ২৫০০ নিরাপত্তবাহিনী থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 522 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen