সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ হস্তাস্তরের পর এবার তিন পার্বত্য জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের মধ্যে এ সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির, সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ফিরোজা বেগম চিনুসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে পার্বত্য জনসংহতি সমিতির চুক্তি ১৯৯৭ অনুসারে এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনসমূহের ২২ ও ২৩ নং ধারা এবং প্রথম তফসিল অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম হস্তান্তর চুক্তি হলো।
চুক্তির ফলে এখন থেকে তিন পার্বত্য জেলার মাধমিক শিক্ষার উন্নয়ন, পরিচালনা, তত্ত্বাবধান, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হবে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায়।
চুক্তি অনুযায়ী জেলা শিক্ষা অফিস, সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদিসহ বাজেটে বরাদ্দকৃত অন্যান্য অর্থ পার্বত্য জেলা পরিষদে দেওয়া হবে।
পার্বত্য জেলা পরিষদ সরকারের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, স্থগিত এবং বাতিল করতে পারবে।
জেলা শিক্ষা অফিস ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩য়-৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা পার্বত্য জেলা পরিষদের এ সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুযায়ী হবে।
জেলা পরিষদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে জেলার অভ্যন্তরে বদলি করতে পারবে।
পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করবেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লিখবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে ২৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। যার মধ্যে ১৮টি সরকারি এবং ২৬১টি বেসরকারি।
বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে ১৫৪টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ১২৮টি। যার মধ্যে ৬টি সরকারি, ৭৩টি এমপিওভুক্ত।
বান্দরবানে রয়েছে ৫২টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ৭টি সরকারি, ২১টি এমপিওভুক্ত এবং
খাগড়াছড়িতে রয়েছে ৯৯টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ৫টি সরকারি, ৬০টি এমপিওভুক্ত। এছাড়াও খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজও এর আওতায় এসেছে।
ইতি মধ্যে এটিসহ রাঙামাটি জেলার ২৫টি বিভাগ, খাগড়াছড়ি জেলার ২৩টি বিভাগ এবং বান্দরবান জেলার ২২টি বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিন পার্বত্য জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই চুক্তির পর তিন জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম নিজ নিজ জেলা পরিষদের আওতায় পরিচালিত হবে।
শিক্ষাসচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্ন ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা স্ব স্ব পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য তিন জেলার শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আসবে।
শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত যোগ্যতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলের নতুন প্রজন্ম আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজ অঞ্চলকে আরো সমৃদ্ধ করবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চল দেশের জন্য বোঝা নয়, সম্পদ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অস্থিতিশীল পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শান্তি চুক্তি করেছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা পরিচালনা হস্তান্তর চুক্তি হওয়ায় তা আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।