শিরোনামঃ

আজ রক্তঝরা ১৫ আগস্ট

সেদিন আকাশে শ্রাবণের মেঘ ছিল, ছিল না চাঁদ/ভোরের আলোয় তোমার রক্ত মুছে গেল সমুদ্র সমতল… ১৫ আগস্টের মর্মস্পর্শী দৃশ্যপট এভাবেই চিত্রিত হয়েছে কবিতায়, গানে। আর সেই মেঘ-বৃষ্টির অন্ধকার রাতে বেরিয়ে আসে ঘাতকের দল। ভোরের আলো ফোটার আগেই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে রচনা করে ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। যিনি আধারে দিয়েছেন আলো, তাকেই হত্যা করে ওরা5418789_n অমানিশার অন্ধকারে ঢেকে দেয় গোটা বাংলাদেশ।
আজ সেই রক্তঝড়া অশ্রুভেজা ১৫ আগস্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এ দিনেই বাংলাদেশ হারিয়েছে তার স্রষ্টাকে। জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের প্রাণ পুরুষকে। আর আমরা হারিয়েছে জনককে।পঁচাত্তরের এই দিন শুধু তিনিই নন, স্ত্রী বেগম শেখফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ ও এক সহোদরসহ আত্মীয়-পরিজন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন জাতির জনক। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ঘটনার সঙ্গে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতের এই বর্বর হত্যাকা-ই তুলনীয় হতে পারে। যেখানে নারী-শিশুসহ নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় আস্থাহীন দেশীয় কিছু রাজনীতিকের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু নৃশংসভাবে শহীদ হন সেই কালরাতে। তবে প্রবাসে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৫ আগস্টের নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞে আরো নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগি্নপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এসব শহীদকে।
ইতিহাস বলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পরপরই স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। অপপ্রয়াস চালানো হয় বাঙালির বীরত্বগাথা ইতিহাস মুছে ফেলারও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত করতে বার বার কাটা-ছেঁড়া করা হয় সংবিধানকে। যাতে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি-ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ সংবিধানে উপেক্ষিত হয়।
শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার অপসারণ, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিও চালু হয়। গণতন্ত্রকে পাঠানো হয় নির্বাসনে। চালু হয় সামরিক একনায়কতন্ত্র। সেই সাথে জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনি মোশতাক, ফারুক, রশিদচক্রকে হত্যাকান্ডের দায়ভার থেকে মুক্তি দিয়ে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। রুদ্ধ করে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।
কিন্তু এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জোর দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের গণতন্ত্রকামী শান্তিপ্রিয় বিবেকবান মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। বিচারে নিম্ন আদালত ঘাতকদের ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করে। পরবর্তীতে নিম্ন আদালতের এ রায় হাইকোর্টও বহাল রাখে। কিন্তু ২০০১ সালের পর সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ না দেয়াসহ নানা কারণে বিচারের পথে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ফলে রায় কার্যকরে বিলম্ব হতে থাকে। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর উচ্চ আদালতের পর্যায়ের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়। এই রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়। তবে এখনো দ-প্রাপ্ত ৫ খুনি বিদেশে পালিয়ে আছে। যাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

আজ জাতির জনকের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা হাতে কমসুচী নিয়েছে। সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস। জাতির জনকের শাহাদাত বার্ষিকীতে তার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 423 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen