একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার/সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার। তোমার স্বাধীনতা গৌরব সৌরভে/ এনেছে আমার প্রাণের সূর্যে রৌদ্রেরও সজীবতা/দিয়েছে সোনালী সুখী জীবনের দৃপ্ত অঙ্গীকার/….তুমি আমার অহংকার।
এমনি বুকভরা গর্বে গোটা জাতির আজ উদ্বেলিত হওয়ার দিন। যে দিনের প্রতীক্ষায় কেটেছে বাঙালির হাজারো বছর। কাঙ্ক্ষিত সে দিনের দেখা মিলেছিল ইতিহাসের পাতায় রক্তিম আখরে লেখা এক সংগ্রামের শেষে ১৯৭১ সালে, ১৬ ডিসেম্বর। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৪৫ বছর আগের এদিনে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বীর বাঙালির পদতলে। স্বাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে।
পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ের দিনটিতে আনন্দের পাশাপাশি বেদনাও বাজবে বাঙালির বুকে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতি স্মরণ করবে জানা-অজানা সেসব শহীদকে। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে পেরিয়ে গেল ৪৫ বছর। কিন্তুযারা সেই সংগ্রামের উত্তাল দিনে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল ঘাতক পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে, সেই রাজাকার-আলবদরদের বিচার না করার কলঙ্ক যেন অনেকটাই মস্নান করেছিল জাতির এই শ্রেষ্ঠ অর্জনকে। দিনে দিনে গণদাবিতে পরিণত হয়ে ওঠা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অবশেষে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার মাস ২০১০ সালের মার্চে। এ বছর ‘মিরপুরের কসাই’ বলে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করায় সেই কলঙ্কের দায় মুক্তির সূচনা ঘটে। পরে একে একে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলী ও সালাউদ্দিন কাদেরসহ ৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। প্রথম সারির আরও বেশ ক’জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারও আজ শেষ পর্যায়ে। চূড়ান্ত রায় কার্যকর করার তালিকাতে রয়েছে বেশ ক’জনের নাম। তাই গত কয়েক বছর ধরে জাতি ভিন্ন আমেজে পালন করছে মহান বিজয় দিবস।
এদিকে নানা ত্যাগ তিতিক্ষায় এদেশে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও গত ৪৫ বছর জাতির চলার পথ মসৃণ ছিল না কখনও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া, দারিদ্য ও দুর্নীতি থেকে মুক্তির সংগ্রামের পাশাপাশি একইভাবে চলেছে সামরিক শাসন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মৌলবাদ ও সামপ্রদায়িকতা প্রতিরোধ আন্দোলন। এই বন্ধুর পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু শত বাধা-প্রতিবন্ধকতাতেও হতোদ্যম হয়নি এ দেশের মানুষ। হারায়নি সাহস। লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে অব্যাহত আছে বাঙালির এগিয়ে চলা।
আজ সকাল থেকেই সারাদেশে পথে নামবে উৎসবমুখর মানুষ। শহীদদের স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধায় দেশের সব স্মৃতিসৌধ ভরিয়ে দেবে রঙবেরঙের ফুল ফুল। রাজধানীর সব বয়সী অগণিত মানুষ সমবেত হবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। শ্রদ্ধার ফুলে ঢেকে যাবে সৌধের বেদি।
লাল-সবুজের পতাকা উড়বে আজ বাড়ি-গাড়িসহ সব প্রতিষ্ঠানে। মাথায় থাকবে পতাকার রঙে রাঙা ফিতা। পতাকার রঙের পোশাকও থাকবে উৎসবে শামিল অনেকের পরনে। পতাকায় সজ্জিত করা হবে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ। আজ সরকারি ছুটি। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবনে করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, শিশুসদন ও কারাগারগুলোতে পরিবেশন করা হবে বিশেষ খাবার।
বরাবরের মতোই এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালনের বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।