আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি। আজ ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা বীর শহীদদের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি । বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনা ও চিরগৌরবদীপ্ত আর অহঙ্কারে মহিমান্বিত মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির মননে অনন্য মহিমায় ভাস্বর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের ৬৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধের ঘটনা এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ ঘটে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা। রাষ্ট্রভাষার লড়াইয়ে সেদিন রাজপথ রঞ্জিত হয় ভাইয়ের রক্তে। সারাবিশ্বের কোটি কণ্ঠ আজ উচ্চারণ করবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা কালজয়ী গানথ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’
প্রতিবারের মতো এবারো গভীর শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও নানা আয়োজনে আজ বাঙালি জাতি পালন করবে জাতীয় শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বায়ান্ন সালের ২১ শে ফেব্রুুয়ারির স্মরণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে দিনটি আজ পালন হবে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। একুশের প্রথম প্রহরে জেগে উঠবে দেশ-বিদেশের সব শহীদ মিনার। বীর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ভোরের শিশির মাড়িয়ে খালি পায়ে শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে যাবে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, শিশু, বৃদ্ধসহ অগণিত মানুষ। বেদিমূল ভরে উঠবে ভালোবাসার ফুলে ফুলে। আপন সংস্কৃতির বিকাশ আর সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হবে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা বাণী দিয়েছেন।
শহীদ দিবস যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠানমালার শুরু হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন একুশের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা একুশের প্রথম প্রহরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এরপর ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, ভাষাসৈনিক, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
ভাষার মাসে আদিবাসীরাও সোচ্ছার হয়েছেন মাতৃভাষায় আদিবাসীদের পাঠদান করানোর জন্য। বর্তমান সরকার আগেরবার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১০ সনে জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষনা করে। সেখানে আদিবাসীদের শিল্প সংস্কৃতি ধরে রাখতে প্রাক- প্রাথমিক স্তরে স্ব স্ব জাতির মাতৃভাষায় পাঠদান করার কথা থাকলেও সমন্বয়হীনতার কারনে ২০১৬ সনেও আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
আমাদের প্রত্যাশা ঢাকা ভিত্তিক নয় , পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের আদিবাসীদের সাথে আলাপ আলোচনা বর্নমালায় নাকি স্কিপে নাকি তাদের পাঠদান করা হবে সেটি দ্রুত নিরসন করা হবে।
আজ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে সিএইচটি টুডে ডট কম পরিবারের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের জানাই হাজারো লাল সালাম এবং বিনম্র শ্রদ্ধা।