নুরুচ্ছাফা মানিক, সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। স্বাধীনতা সংগ্রামে শুধু বাঙালীদের নয়, পাহাড়ীদেরও গৌরবোজ্জল অবদান রয়েছে। তৎকালীন রামগড় মহাকুমার অন্তর্গত মানিকছড়ি মং রাজা মংপ্রুসেইন রাজ ভান্ডার বিলিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী ও নিজ রাজ্যের প্রজাদের জন্য, খুলেছিলেন লঙ্গরখানা।
ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা ও বমং সার্কেল চীফ রাজারা শাসন কার্য করত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অন্য দুই রাজার ভূমিকা গৌণ থাকলেও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি মং রাজার মূখ্য অবদান ছিল। রাজা মংপ্রুসেইন রাজ ভান্ডারে ৩৩টি বন্দুক ও ২টি জীপ গাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছেন। এছাড়া ভান্ডার উজাড় করে মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী ও প্রজাদের জন্য রাজ প্রসাদে লঙ্গরখানা করে দিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় তাকেও দেশত্যাগ করে শরণার্থী হতে হয়েছিল ভারতে। ভারতে গিয়ে সম্মুখ সমরেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজা মংপ্রুসেইনের এতো অবদানের পরও স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশ তার স্বজনরা।
প্রয়াত রাজা মংপ্রুসেইনের নাতী কুমার সুইচিং প্রু বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার নানা তার রাজভান্ডার বিলিয়ে দিয়েছিলেন দেশের জন্য। এই জন্য তার প্রতি পাকিস্তানীরা বিরাগ ভাজন হওয়ায় রাজ্য ছেড়ে তাকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে আমার নানার এতো অবদান থাকলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না থাকায় দেশের মানুষ এখন জানেনা।
শুধু রাজ পরিবার নয় রাজা মংপ্রুসাইনের অবদানের সাক্ষী এই জনপদে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারাও।
খাগড়াছড়ির সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মংপ্রুসেইন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী ও এলাকাবাসীদের সহযোগীতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকার কারণে অনেক পাহাড়ী যুবক তখন যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় অর্ধশত বছরেও স্বীকৃতি না পাওয়া সত্য কষ্টদায়ক।
প্রয়াত রাজা মংপ্রুসেইনকে কাছ থেকে দেখা বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকে বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী রাজা মংপ্রু সেইন ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তার জীবদ্দশায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থার মান্নোনয়নে অগ্রণী ভূমিকা করে গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি সামাজিক সংস্কারের জন্য অগণিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছিলেন মংপ্রুসেইন।
রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন স্বীকৃতি না দিলেও সম্প্রতি সময়ে মুক্তিযুদ্ধে মংপ্রুসেইনের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিভিন্ন লেখালেখির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ তার নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত মং সার্কেল চীফ মংপ্রুসেইনের অসামান্য অবদান ছিল। স্থানীয়রা এটি জানলেও দেশবাসীর কাছে এ ইতিহাস অজানা। বীর মুক্তিযোদ্ধা মংপ্রুসেইনের অবদানের জন্য খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন আগামী ৩১ মার্চ তার নামে এক শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের আয়োজন করেছে। জেলা পরিষদও সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগে পাশে রয়েছে।