শিরোনামঃ

একান্ত আলাপে রাঙামাটির পৌর পিতা আকবর হোসেন চৌধুরী

সকল সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবো

মনসুর আহম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত আওয়ামীলীগের মেয়র ও রাঙামাটি জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহনের পর পর্যটন শহর রাঙামাটির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নতুন পৌরপরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের পর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে meyor-pic-2শহরের ৯টি ওয়ার্ডের আনাচে কানাচে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছে।
রাঙামাটি পৌরসভার ১৮তম মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ সকল সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করতে বদ্ধ পরিকর।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক সিএইচটি টুডে ডট কমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর তার বাসভবনে দৈনিক সিএইচটি টুডে ডট কমের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় পৌর মেয়র রাঙামাটি শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে পৌর শহরকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে তার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে  সিএইচটি টুডে ডট কমের কাছে আন্তরিকভাবে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। পাঠকের জন্য নবনির্বাচিত রাঙামাটি পৌরসভা মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী একান্ত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেছেন সিএইচটি টুডে ডট কম এর বিশেষ প্রতিনিধি মনসুর আহম্মেদ……………………..
প্রশ্ন: আপনিতো রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, পৌরবাসীকে সেবা প্রদানসহ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?
পৌর মেয়র- আপনাদের ধন্যবাদ। আমি প্রথমে রাঙামাটি পৌরবাসিসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, কারন আমার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সকলে মিলে পৌরবাসির সেবা করার জন্য যে রায় দিয়েছে তা আমি যথাযথভাবে পালন করব। আপনারা জানেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস, এখানে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্ঠা করা হয়। আওয়ামীলীগ যেহেতু একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল এবং আমি সে দলের একজন কর্মী হিসেবে অতীতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আমি মাঠে ময়দানে কাজ করেছি, এখন তা আরো বেশী করে করব। আমার প্রথম কাজ হচ্ছে রাঙামাটিকে সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির শহর হিসেবে গড়ে তোলা। এ জন্য আমি সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

প্রশ্ন: পৌরসভা নির্বাচনে এতো বিপুল ভোটে আপনার বিজয়ী হওয়ার জন্য কোন বিষয়টি কাজ করেছে বলে মনে করেন ?

পৌর মেয়র- পৌরসভা নির্বাচনের বিজয়টা আমার একার নয়। এটা আওয়ামীলীগের বিজয়। আওয়ামীলীগের প্রতি বিশেষ করে, এ অঞ্চলে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর ঐক্যের প্রতিক সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জননেতা দীপংকর তালুকদারসহ আওয়ামীলীগ ও এর অংগ-সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মীসহ দলমত নির্বিশেষে সকলের পরিশ্রমের ফসল আমার এ বিজয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আওয়ামীলীগ একসাথে ঐকবদ্ধভাবে জনগনকে নিয়ে কাজ করলে আওয়ামীলীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা। এজন্য আমি আওয়ামীলীগের সকল নেতা কর্মীসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।img_20161112_105152
প্রশ্ন: রাঙামাটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?

পৌর মেয়র- প্রথমে আমার কাজ হবে, রাঙামাটি শহরকে সুন্দরভাবে গড়তে সকলকে নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি মাষ্টার প্ল্যান তৈরী করা। সকলের মতামত নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। তাছাড়া পর্যটন শহর রাঙ্গামাটিকে সুন্দরভাবে ও পর্যটন উপযোগী করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে, তার মধ্যে- দুর্গন্ধমুক্ত পৌর শহর গড়ে তোলা, বর্তমানে শহরের বিভিন্ন স্থানে যে সমস্ত স্থায়ী ডাস্টবিন রয়েছে তা ভেঙ্গে ফেলা শুরু হয়েছে এবং ভ্রাম্যমান কিছু ডাস্টবিন পৌরসভার পক্ষ থেকে তৈরী করে তা বিতরন ও শুরু হয়েছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সকলকে অনুরোধ করছি যত্রতত্র ময়লা না ফেলে পৌরসভা থেকে দেয়া ভ্রাম্যমান ডাষ্টবিনে ময়লা ফেলুন।img_20161010_133820

প্রশ্ন: দায়িত্বগ্রহনের প্রায় ৮মাসের মধ্যে আপনারা যে কাজগুলো করেছেন তার মধ্যে কোন কোন কাজগুলো জনগনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপুর্ন বলে আপনি মনে করেন ?
পৌর মেয়র – আসলে আমরা যে সব ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি প্রতিটি কাজই জনবান্ধব ও গুরুত্বপুর্ন, তবে তার মধ্যে শহরের ব্যস্ততম নগরী বনরুপা এলাকায় যানযট নিরসনে যে অটোরিক্সা ষ্টেশন, ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও যাত্রী ছাউনী করা হয়েছে তা অন্যতম। কারন এর মাধ্যমে আমরা শহরের যানযট অনেকটাই নিরসন করতে পারব। তবে একাজটি সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমি ফরেষ্ট বিভাগকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। শুধু বনরুপা নয় পুরো রাঙামাটি শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে আমি রাঙামাটির গুরুত্বপুর্ন বিভিন্ন পয়েন্টেই অটোরিক্সা ষ্টেশন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তবে এজন্য আমি প্রশাসন সহ সকলের সহায়তা কামনা করছি।
প্রশ্ন: আপনাকে দেখলাম হিজড়াদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাদের কাজে লাগানোর কথা বলেছেন আপনি। হিজড়াদের নিয়ে আপনার কি পরি কল্পনা আছে, বা তাদের কি ধরনের কাজে লাগাবেন ?

পৌর মেয়র : আসলে সমাজে সকলের সুন্দরভাবে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। তারা ও মানুষ, তাদের ও সম্মানের সহিত বেচে থাকার অধিকার রয়েছে। আমি তাদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেছি, একসাথে খাওয়া দাওয়া করেছি, তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছি। আমি চেষ্টা করছি তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করাসহ তাদের কাজে লাগানোর। আপনারা জানেন ঢাকার মেয়র আনিসুল হক হিজড়াদের কাজে লাগানোর মধ্য দিয়ে যানযট নিরসন করার। এছাড়া ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিজড়াদের মাধ্যমে কর উত্তোলন , খেলাপী ঋন আদায়সহ বিভিন্ন কাজ করছে। আমি হিজড়াদের কি কাজে লাগানো যায় তা সকলের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। তবে অনেকে হিজড়াদের সাথে আমার বৈঠক নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, আমি পৌরবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। হিজড়ারা সমাজেরই একটা অংশ, তাদের ঘৃনার দৃষ্টিতে না দেখে সমাজের মানুষ হিসেবে দেখলেই ভালো বলে আমি মনে করি।img_20161006_103706
প্রশ্ন: পৌরবাসির স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহন করবেন কিনা ?

পৌর মেয়র : হ্যাঁ, আপনারা জানেন, আমি পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে ও রাঙামাটি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলাম। এ বিষয়ে আমার একটি পূর্বপরিকল্পনা ছিল। যেহেতু জনগনের রায়ে আমি পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি, জনগনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করকে পৌরসভা থেকে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। কারন রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনেক দুস্থ ও গরীব মানুষ আছে, যাদের পক্ষে আর্থিক সমস্যার কারনে চিকিৎসাসেবা গ্রহন করা অনেক সময় সম্ভব হয়না। রাঙামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকবে।এছাড়া রাঙ্গামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে দুস্থরোগীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে যাতে একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। আশাকরছি খুব শীঘ্রই পৌরবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা আমরা করতে পারবো।

প্রশ্ন: পর্যটনশহর রাঙামাটিতে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনাসহ কিছু অপরিকল্পিত স্থাপনা রয়েছে, এজন্য পৌরবাসিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যা নিরসনে নতুন মেয়র হিসেবে আপনার কোন উদ্যোগ থাকবে কি না ?

পৌর মেয়র : আসলে, ভূমি বিষয়টিতো পৌরসভার উপর ন্যস্ত নয়, তবে কিছু স্থাপনা আছে, যেমন ট্রাক টার্মিনালের রাস্তার পাশে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন যেখানে প্রায়শই সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে, এসব স্থানে কয়েকজন মানুষ মারা ও গেছে। আমি পৌরসভার আওতার মধ্যে থাকা এরকম বিছু অপরিকল্পিত স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলব। জনগনের ক্ষতিকারক কোন স্থাপনা রাখা হবেনা। তবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তা ভাঙ্গতে হলে প্রশাসনের একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে।

প্রশ্ন: রাঙামাটি পৌরবাসির উদ্দেশ্যে আপনার ম্যাসেজটা কি ?

পৌর মেয়র- আমাকে পৌর নির্বাচনে নির্বাচিত করার জন্য পৌরবাসির কাছে আমি আবারো কৃতজ্ঞ। জনগন আমার উপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে রায় দিয়েছে, আমি তার যথাযথ মূল্যায়ন করবো। আমাকে মেয়র হিসেবে না দেখে অতি আপনজন হিসেবে. নিজের ভাই,বন্ধু, ছেলে হিসেবে সহযোগীতা প্রদানের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। চলার পথে আমার কোন ভূল দেখা গেলে তা আমাকে জানান, আমি সঠিকভাবে পৌরবাসির কাছে থেকে কাজ করতে চাই। আমার দরজা পৌরবাসির জন্য সবসময় খোলা থাকবে।

সিএইচটি টুডে ডট কম- আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মেয়র-  সিএইচটি টুডে ডট কমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এবং পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং পৌরবাসির উন্নয়নে মিডিয়ার সহযোগীতা কামনা করছি।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,234 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen