হিমেল চাকমা, সিএইচটি টুডে ডট কম। । রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা । আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত পরিষদে প্রায় ৬ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। গত ২৫ মার্চ নতুন পরিষদ গঠন হলে পরিষদ হতে বাদ পড়েন তিনি। নতুন পরিষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পর পরই সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যান জেলায় কিছু দিন আগের জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি। সামাজিক, ধর্মীয়, নিজ রাজনৈতিক দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন জনকল্যাণ কাজে তার পদচারণা চোখে পড়ে। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়ার পর সবকিছু মিলে কেমন সময় কাটছে তা নিয়ে শহরের তবলছড়িতে বাসায় খোলামেলা কথা বলেন নিখিল কুমার চাকমা।
এসময় তিনি বলেন, দায়িত্ব ছাড়ার পর পরই দ্রুত সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গিয়েছি। এতে যেতে সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, চেয়ারম্যান হয়ে আমি কখনও নিজেকে বড় ভাবিনি। এখনও ভাবি না। মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেছি। চেয়ারম্যান হিসেবে যতদিন ছিলাম ততদিন তাদের কাজ করেছি। তাদের কাছে দুরে থাকলে তো রাজনীতি করার অর্থ হয় না। সাধারণ মানুষ আছে বলে আজকে আমি নিখিল কুমার। তারা না থাকলে আমার থাকার অর্থ হয় না। আমি তাদের কাছ থেকে যেমন দুরে সরে যায়নি। তারাও আমাকে দুরে ঠেলে দেয়নি। আমি চেয়ারম্যান হয়েও কখনও চেয়ারম্যানের ভাব নিয়ে বসে থাকতে পছন্দ করিনি। সব সময় সাধারণ মানুষের মত ছিলাম। যতটুকু পারি তাদের পাশে ছিলাম। এটি আমার জন্য উপকার হয়েছে। এখন বুঝতে পারছি মানুষ আমাকে দুরে ঠেলে দেয়নি বরং আরো আপন করে নিয়েছে। যেখানে যাচ্ছি সেখানে আমার শুভাকাঙ্খী পাচ্ছি। আগে আত্মীয় স্বজনদের সময় বেশী দিতে পারিনি। এখন তাদের একটু সময় দিচ্ছি। সামাজিক কাজে নিজেকে আরো বেশী সম্পৃক্ত করেছি।
বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, চেয়ারম্যান থেকে অবসরের পর আমি মোটর সাইকেল ও সিএনজিতে ( অটোরিকশা শহরের একমাত্র যাত্রীবাহন) চড়েছি। এখনও তা অব্যাহত আছে। এতে আমার কোন সমস্যা হয় না। আনন্দ অনুভব করি। সাধারণ মানুষের ন্যায় চলাফেরা করতে পারায় আলাদা আনন্দ আছে।
চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতা ব্যর্থতা বিষয়ে তিনি বলেন, যতটুকু পারি পরিষদকে ভালভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছি। কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। তা সত্বেও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। যদি ব্যর্থ হতাম তাহলে সাধারণ মানুষ আমাকে গ্রহণ করত না।
চেয়ারম্যান থাকাকালীন কোন শূন্যতা অনুভব করেছেন কিনা জানতে চাইলে নিখিল বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান- সদস্যদের পদ মর্যাদা নির্ধারণ না হওয়া অন্যতম একটি সমস্যা অনুভব করেছি। চেয়ারম্যান-সদস্যদের পদ মর্যাদায় নির্ধারিত হওয়া দরকার।
নির্বাচনের অজুহাত দেখিয়ে পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের পদ মর্যাদা নিধার্রণ হচ্ছে না। অনির্বাচিত অনেককে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের অজুহাতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের পদ মর্যাদা নির্ধারণ করা হচ্ছে না।
নতুন পরিষদের কাছে কোন পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে নিখিল বলেন, নতুন পরিষদের মধ্যে কয়েকজন আমার আমলে সদস্য ছিলেন। তারা আমার কাছে পরামর্শ চাইলে আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগী করি। তাছাড়া নতুন যারা এসেছেন তারা সবাই আমার পরিচিত এবং কাছের মানুষ। তবে নতুন পরিষদের প্রতি আলাদাভাবে আমার কোন পরামর্শ নেই।
নতুন পরিষদে থাকতে না পারায় মনে কষ্ট আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, মনে আমার কোন কষ্ট নেই। আমি যখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করছি তখন ধরে নিয়েছি এই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। তাই যে পোশাক পরে দায়িত্ব নিয়েছি সেই পোষাক পড়ে দায়িত্ব ছেড়েছি। এতদিন পোষাকটি যতœ করে রেখেছি। পোষাকটি ঠিক রাখতে মাঝে মাঝে এই পোষাক দিয়ে অফিসও করেছি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে বিগত কোন চেয়ারম্যান আমার মত দীর্ঘ সময় চেয়ারম্যান থাকেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমার দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ হয়েছে। এজন্য আমি ভাগ্যবান মনে করি।
রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকবেন কিনা জানতে চাইলে নিখিল বলেন, একজন মানুষ বৃদ্ধকাল পর্যন্ত রাজনীতি করে। তিনি অন্যর সহায়তা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যায়। এখন দলকে আরো সময় বেশী দিচ্ছি। মে দিবসে একাধিক কর্মসূচিতে আমি উপস্থিত ছিলাম।
নতুন পরিষদ গঠনে জেলা আওয়ামীলীগের মধ্যে কোন কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে মনে করেন কিনা জানতে চাইলে নিখিল বলেন, কোন কোন্দল আমার চোখে পড়েনি। গণতান্ত্রিক দলে প্রতিযোগীতা থাকবে এটা স্বাভাবিক।
নিজের গ্রামের মানুষের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানিয়াচরের ১৮ মাইল এলাকার মানুষের কথা সবসময় মনে রাখি। সময় সুযোগ হলে যাওয়া হয় সেখানে। এখন আরো বেশী যাওয়া হবে।
জেলা পরিষদের নির্বাচন প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে নিখিল বলেন, নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন হলে অপ্রয়োজনীয় নানান কথাবার্তা আসত না। নির্বাচন হওয়া জরুরী। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান আরো একটু ঢেলে সাজানো উচিত। বর্তমানে সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এতে তেমন উপকারে আসবে না। তারা মাঠে থাকবে। কিন্তু প্রশাসনের কাজ চালানোর জন্য জনবল কম। তা বাড়ানো দরকার।