রফিকুল আলম,সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবান জেলার অনাথ শিশুদের লালন পালনের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারী শিশু পরিবারে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের অভিবাবকবিহীন শিশুদের লালন পালনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি। ২০০৩ সাল থেকে শিশু পরিবারটি চালুর পর আজ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করেনি কর্তৃপক্ষ। ১৭ জনের বিপরীতে এখন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন মাত্র ৯ জন। ফলে যেনতেন ভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানটির দৈনন্দিন কার্যক্রম।
প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে দেখা যায়, ক্লাসরুমে পাঠদানের ফাঁকে সহকারী শিক্ষক তুষার চাকমা দাপ্তরিক কাজ সারছেন। আরেক শিক্ষক জসিমউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। তিনি একই সময়ে একাই দুটি ক্লাস নিচ্ছেন। একই সময়ে ২টি ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে জসিমউদ্দীন বলেন, “অফিস সহকারী পদ দীর্ঘদিন শুন্য থাকায় দাপ্তরিক কাজ সারতে হচ্ছে আমাদেরই, অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। রুটিনের বাইওে প্রত্যেক শিক্ষকই অফিস সহকারীর কাজ করছি, কিছুই করার নেই” এভাবেই চলছে।
নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রতি ২৫ জন এতিমকে নিয়ে একটি পরিবার এবং একজন বড়ভাই ও খালাম্মা এপরিবারের দেখাশোনা করার কথা। কিন্তু “বড়ভাই” আর “খালাম্মা” পদেও কোন লোকবল না থাকায় শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষা প্রাপ্তির অধিকার থেকে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বাবুর্চি ম্যানুচিং মার্মা একাই করছেন ৮২ জনের রান্নাবান্না। একসাথে এতজনের রান্নার দায়িত্ব পালন করতে তাকেও পোহাতে হচ্ছে বাড়তি চাপ। এ বিষয়ে ম্যানুচিং বলেন, বাচ্চাদের ডেকে এনে আমার সাথে কাজ করাচ্ছি, এত কাজতো একা করা যায়না, অসুখ-বিসুখেতো আরো সমস্যা।
প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষনিক একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ২০০৭ সাল থেকে এখানে কোন চিকিৎসক নিয়োজিত নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় অপুষ্টিসহ নানা রোগব্যাধিতে ভুগছে এখানে আশ্রিত এতিম শিশুরা। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেউ অসুস্থ হলে তাকে পার্শ্ববতী হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
এসব প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্বাবধায়ক মোঃ শফিকুল ইসলাম সিএইচটি টুডে’কে বলেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষকে শুন্যপদে লোক নিয়োগের কথা অবহিত করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তৃতীয় এবং চুতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগে পার্বত্য জেলা পরিষদের আভ্যন্তরীন জটিলতার কারনেই এই অবস্থার সৃষ্টি।
এদিকে ১শ শয্যা বিশাল এ ভবনটি নির্মানের পর থেকে আর কোন সংস্কার করা হয়নি। ভবনের ছাদের ফাইবার গ্লাস নষ্ট হয়ে ঝুঁকিপুর্ন অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন। বৃষ্টি হলে ছাদের পানি ঢুকে যায় রুমে। স্যানিটেশন সমস্যা সমাধানেরও কোন উদ্যোগ নেই। সেফটি ট্যাংক থেকে ময়লা পানি ছড়িয়ে পড়ে এদিক ওদিক। টয়লেটগুলোও পরিত্যক্ত। ইলেকট্রিক বিভিন্ন ওয়্যারিং ঝুলে আছে বিপদজনক অবস্থায়। এরকম হাজারো প্রতিকুলতার মধ্যে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম।
শিশু পরিবারের জনবল সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চংগ্যা সিএইচটি টুডে’কে বলেন, শিশু পরিবারের জনবল সংকটের বিষয়টি সত্য, শুন্য পদে জনবল নিয়োগের জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য ৬-৯ বছর বয়সের অনাথ শিশুরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে আবাসিক সুবিধাসহ লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে।