শিরোনামঃ

শহরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ঈদে পর্যটক বরণে নব সাজে রাঙামাটি

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিপুল পর্যটকের সাড়া মিলেছে পার্বত্য পর্যটন শহর রাঙামাটিতে। আর তাই পর্যটকদের বরণ করতে নবসাজে সাজানো হয়েছে পর্যটননগরী রাঙামাটিকে। এজন্য নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। পাশাপাশি শহরজুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা বব্যস্থার জোরদার করা হয়ে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ। p1060212
কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং কোরবানি ঈদুল আযহার উপলক্ষে রাঙামাটিতে পর্যটকদের ঢল নামে। এবারও প্রচুর পর্যটকের সাড়া পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বহু পর্যটক এসে পাড়ি জমিয়েছেন। ১১-১৬ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের মোটেল ও কটেজগুলোতে সম্পূর্ণ কক্ষ বুকিং রয়েছে বলে জানান ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা। পাশাপাশি শহরের অভিজাত আবাসিক হোটেলগুলোতেও ইতোমধ্যে সপ্তাহজুড়ে বুকিং হয়ে গেছে বলে জানান রাঙামাটি আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন।
এদিকে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য শহরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে এবারও যেসব পর্যটক রাঙামাটি আসবেন তাদের যাতে কোনো রকম সমস্যায় পড়তে না হয় এবং নিরাপত্তার যাতে কোনো বিঘœ না ঘটে সেজন্য স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীর টহল জোরদার রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে প্রশাসনের। বেড়াতে কারও কোনো নিরাপত্তার বিঘœ ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি পর্যটন মোটেল অ্যান্ড হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ঝুলন্ত ব্রিজসহ পর্যটন মোটেলের এলাকা ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার রাখা হয়েছে। অতএব পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে কোনো সমস্যা নেই। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িসহ সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল জোরদার থাকে।

মোটেলে পর্যটকদের বিনোদন ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সে দু’টি মোটেল, ছয়টি কটেজ ও একটি ঝুলন্ত সেতু আছে। এছাড়া নৌ ভ্রমণের জন্য রয়েছে বোটিং ব্যবস্থা। তবে বিনোদনের জন্য আরও পর্যাপ্ত সুবিধার সম্প্রসারণ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কেবল একটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা গড়ে তোলা গেলে পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়ানো যাবে। এতে প্রতিনিয়ত আগমন ঘটবে দেশী-বিদেশী প্রচুর পর্যটকের।
এদিকে সদ্য বর্ষা শেষে শরতের মিষ্টিমাখা ও শিশির ভেজা রাঙামাটির সতেজ প্রকৃতির হাতছানি প্রতিনিয়তই নজর কাড়ছে ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের। এখন পানিতে টইটুম্বুর রাঙামাটির মনোরম কাপ্তাই লেক। উজ্জীবিত দৃষ্টিকাড়া সুবলং ঝরনাটি। ঝরনার কলতান মুখরিত করেছে আশেপাশের প্রতিবেশ। আর সবুজঘেরা পাহাড়গুলো ছুঁয়েছে মেঘ। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্ণার কলতান। মাঝ দিয়ে বইয়ে গেছে আঁকাবাঁকা কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলধারা। দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত সবুজের সমারোহ। প্রকৃতিতে মিশেছে অপরূপ সাজে। ১৯৬০ সালে খড়স্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে কাপ্তাইয়ে বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি বিশাল কাপ্তাই লেক। যার আয়তন প্রায় সাড়ে ৭শ’ বর্গকিলোমিটার।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত পার্বত্য জেলা রাঙামাটির উত্তরে খাগড়াছড়ি, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা। লেক পরিবেষ্টিত রাঙামাটি জেলা গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমন্বয়ে। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারার সম্মিলনে তৈরি হয়েছে রাঙামাটির নৈসর্গিক আবেশ। 12-73
রাঙামাটি জেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শণীয় স্থাপনা ও উপভোগ্য স্থান। রাঙামাটির মূল শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হলিডে কমপ্লেক্স। শহর থেকে চার কিলোমিটার পূর্বে বালুখালীতে গড়ে উঠেছে সরকারি কৃষি বিভাগের কৃষিফার্ম, বেসরকারি পর্যটন স্পট টুকটুক ইকোভিলেজ, পেদাটিংটিং ও চাংপাং রেষ্টুরেন্ট। এছাড়া নদীপথে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জেলার বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নে অবস্থিত মনোরম সুবলং ঝরণাধারা। শহরের উত্তরে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটে স্থাপিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ। জেলা সদরেই রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের উভয়পাশে সাপছড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। মূল শহরে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহার। পাশে কাপ্তাই লেক পরিবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন রাজদ্বীপে অবস্থিত চাকমা রাজার বাড়ি। কাপ্তাই লেক ঘেঁষে শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মনোরম ডিসি বাংলো। পাশে গড়ে তোলা হয়েছে জেলা পুলিশের একটি বিনোদন স্পট ‘পলওয়েল’। সেখানে স্থাপিত হয়েছে ‘রাঙামাটি লাভ পয়েন্ট’ নামে আরেকটি স্পট। রাঙ্গাপানির হেচারি এলাকায় স্থাপিত হয়েছে সুখী নীলগঞ্জ পার্ক। এছাড়া বরকল, হরিণা, ঠেগামুখ সীমান্ত, মাইনি, কাচালং, সাজেক ভেলিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বহু স্থান। 42
রাঙামাটির প্রবেশমুখে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় রয়েছে ঠান্ডাছড়ি চা বাগান, উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল কেপিএম, কাপ্তাই বাঁধ, জাতীয় উদ্যাণ, নেভীক্যাম্প, জুম প্যানোরমা স্পট, শিলছড়ি বনানী পর্যটন স্পট, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, ওয়া¹া চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকভ্যালিতেও পর্যটন ঘিরে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন রিসোর্ট।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,112 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen