কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের বেশিরভাগ জমিতে এখন চাষ হচ্ছে ইক্ষুর,একসময় যেসব জমিতে তামাক চাষ করে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তো এখন সেই জমিতেই ইক্ষু চাষ করে ভাগ্য বদলেছে অনেকের।
বান্দরবান সদর উপজেলার অনেক কৃষকই এখন তামাক চাষ বাদ দিয়ে ইক্ষু চাষে নেমে পড়েছে ,একসময় তামাক চাষ করে ক্ষতির মুখোমুখি পড়লে ও এখন ইক্ষুর চাষ তাদের জীবনে এনে দিয়েছে নতুন দিনের স্বপ্ন।বর্তমানে বান্দরবান সদরের সুয়ালক,রেইচা,বালাঘাটা,বাঘমারা ও রোয়াংছড়ির বিভিন্ন স্থানে চলছে ইক্ষু চাষ। পার্বত্য এলাকার মাটি,পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে এই অঞ্চলে ইক্ষু চাষের বিপুল সম্ভাবনা থাকায় কৃষকেরা এখন এই ইক্ষু চাষ করে লাভবান হচ্ছে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ির বাঘমারা এলাকার ইক্ষু চাষী চিং মং জানান, ইক্ষু চাষে লাভ বেশী, ইক্ষু চারা রোপন করে একই সাথে সাথী ফসল লাগানো যায় আর সাথী ফসল বিক্রি করেই অনেক টাকা ও আয় করা যায়।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ির বাঘমারা এলাকার ইক্ষু চাষী মংহ্লা মার্মা জানান,আগে আমরা এই এলাকায় শুধু তামাক চাষ করতাম এখন তামাক ছেড়ে আখ চাষ করছি , এতে পরিশ্রম কম লাভ বেশি আর সংসার ও ভালো চলে আমাদের।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এ অঞ্চলে ইক্ষু একটি লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে । কৃষকেরা জানায়, প্রতিবছর এই প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে ইক্ষু চাষীদের বিনামূল্যে বীজ,সার,কীটনাশক ও আপদনাশক প্রদান করা হয়, আর ইক্ষু চাষে রোগ বালাই কম হওয়া আর বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষক এখন এই চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
বর্তমানে কৃষকেরা ইক্ষু চাষে লাভবান হওয়ায় এখন ইক্ষুর পাশাপাশি ইক্ষু মাড়াই করে গুড় উৎপাদন করছে, আর গুড় উৎপাদনে করে দাম ভালো পাওয়ায় প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও করছে ।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ির বাঘমারা এলাকার গুড় বিক্রেতা মংহ্লা মার্মা জানান, আগে শুধু ইক্ষু চাষ করে বিক্রি করতাম আর এখন সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় এখন গুড় উৎপাদন করি আর বিক্রি করে লাভ হচ্ছে বেশ। আমরা প্রতি কেজি গুড়ের প্যাকেট ১২০ টাকা করে বিক্রি করি আর পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গুড় সরবরাহ করে থাকে।
এদিকে সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বান্দরবান সাব স্টেশানের বৈজ্ঞানিক সহকারি জোতি লুসাই জানান,বান্দরবানে ইক্ষু চাষী বৃদ্ধি ও পার্বত্য এলাকায় ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের প্রকল্পের শুরুতে ২০০৬-২০০৭সালে যেখানে হেক্টর প্রতি গড়ে ৮০-৯০ টন উৎপাদন হত সেখানে বর্তমানে ২০১৬-১৭অর্থবছরে হেক্টর প্রতি তা বেড়ে গড়ে ১৮০-২০০ টনে গিয়ে দাড়িয়েছে। জেলার বিভিন্ন জমিতে এখন সিও-২০৮, রংবিলাস-৪২,বি এস আর আই,চায়না,সিও ২০৮,মিস্্ির মালা,মধু মালাসহ নানা জাতের ইক্ষু চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বান্দরবান সাব-স্টেশানের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ কৃষিবিদ ক্যছেন জানান, পার্বত্য এলাকায় ইক্ষু ও সাথীফসল চাষে ১ একর জমিতে শুধুমাত্র ইক্ষু চাষ করে নীটলাভ হিসেবে একলক্ষ বিশ হাজার থেকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়া যায় এবং ইক্ষুর সাথে সাথীফসল চাষ করে প্রতি একরে নীটলাভ হিসেবে পঁয়তালি¬শ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সে হিসেবে একই জমিতে ইক্ষু ও সাথীফসল চাষ করে প্রতি একরে নীটলাভ হিসেবে সর্বমোট এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লক্ষ টাকা পাওয়া যায় । আর তাই লাভের ভাগ বেশি হওয়া ও কম পরিশ্রমে বেশি ইক্ষু উৎপাদন করায় পার্বত্য এলাকার অনেকেই ক্ষতিকর তামাক চাষ ছেড়ে ইক্ষু চাষে সংপৃক্ত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য এলাকায় কৃষকদের ইক্ষু চাষের ব্যাপক প্রশিক্ষন,উন্নত বীজ সরবরাহ ,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা ও কৃষি ঋন গ্রহনে সহজলভ্যতা সৃষ্টি করতে পারলে এই এলাকায় আরো ব্যাপক আকারে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারিত হবে।